সেন্টমার্টিন রক্ষার নামে ধ্বংসের প্রতিযোগিতা

অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যে ভরপুর দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন এখন চরম সংকটে। পরিবেশ রক্ষার নামে সরকার ও প্রশাসনের কৌশলগত উদাসীনতা, আর প্রভাবশালী মহলের দখলদারি মিলে দ্বীপটির প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিপন্ন করে তুলেছে। গত ৩ বছরে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ছোট ছোট স্থাপনা, দোকানপাট উচ্ছেদ করে প্রভাবশালীদের দখলে দেওয়া হয়েছে। একই স্থানে দেড় শতাধিক অবৈধ হোটেল ও কটেজ গড়ে তোলা হয়েছে।

Dec 11, 2024 - 05:02
 0  2
সেন্টমার্টিন রক্ষার নামে ধ্বংসের প্রতিযোগিতা

অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যে ভরপুর দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন এখন চরম সংকটে। পরিবেশ রক্ষার নামে সরকার ও প্রশাসনের কৌশলগত উদাসীনতা, আর প্রভাবশালী মহলের দখলদারি মিলে দ্বীপটির প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিপন্ন করে তুলেছে। গত ৩ বছরে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ছোট ছোট স্থাপনা, দোকানপাট উচ্ছেদ করে প্রভাবশালীদের দখলে দেওয়া হয়েছে। একই স্থানে দেড় শতাধিক অবৈধ হোটেল ও কটেজ গড়ে তোলা হয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসনের একের পর এক ‘ঢাকঢোল পেটানো’ অভিযানের নামে লোক দেখানো কার্যক্রম চলছে। দ্বীপের কেয়াবন ধ্বংস করে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এমনকি সরকারি সংস্থাগুলোও পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে বহুতল ভবন নির্মাণে যুক্ত হয়েছে। সরেজমিন গিয়ে এসব তথ্য মিলেছে।

তিন বছরে দেড় শতাধিক ইট-পাথরের স্থাপনা : বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে সেন্টমার্টিনে। সরকারের পক্ষ থেকে সেন্টমার্টিন রক্ষায় নানা বিধিনিষেধ ও কঠোরভাবে তা প্রয়োগের কথা বলা হলেও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। গত ৩ বছরে দেড় শতাধিক অবৈধ হোটেল, কটেজ ও স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। সোমবার সরেজমিন গিয়ে সৈকতের উত্তর অংশে দ্বীপ রক্ষার সারিবদ্ধ বিশাল কেয়াবনের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। সৈকতের বিশাল জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে বিলাসবহুল হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইস, সি-হেভেন এবং পুলিশের বিশাল ভবন। এসব স্থাপনা নির্মাণে সৈকত দখলের পাশাপাশি কেয়াবন উজাড় করা হয়েছে। কেয়াবন দ্বীপের প্রাকৃতিক রক্ষাবলয় হিসাবে কাজ করে।

স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আলম ও আবু বক্কর অভিযোগ করে বলেন, উচ্ছেদের নামে সৈকত থেকে স্থানীয় গরিবদের ক্ষুদ্র দোকানপাটগুলো তুলে দিয়েছে প্রশাসন। পরে সেসব স্থানে প্রভাবশালী ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে। সরেজমিন দেখা যায়, সেন্টমার্টিনে সরকারি সংস্থাগুলো কে কার চেয়ে বড় স্থাপনা করা যায় যেন সে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। সেসব সরকারি সংস্থাগুলো হলো পরিবেশ অধিদপ্তর, পুলিশ, বিজিবি এবং কোস্টগার্ড। এমনকি প্রশাসনের কর্মকর্তারাও নিজেদের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলার সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, সেন্টমার্টিন রক্ষার নামে প্রশাসন ও প্রভাবশালীরা ধ্বংসের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে। একদিকে স্থাপনা উচ্ছেদের নামে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে ছোট ছোট ঝুপড়িঘর ও দোকানপাট উচ্ছেদ করা হচ্ছে। অন্যদিকে, একই স্থানে বড় বড় ভবন নির্মাণের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। গত ৩ বছরে এখানে দেড় শতাধিক বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে। কলিম উল্লাহ আরও উল্লেখ করেন, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিজিবি, পুলিশ ও কোস্টগার্ডও এখানে ভবন নির্মাণে জড়িত। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যেন ভবন নির্মাণের এক প্রকার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।

অভিযোগের দায় স্বীকার করে ব্যর্থতার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার ও সাবেক মন্ত্রী-সচিবদের দুষলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের পরিচালক মুহাম্মদ সোলায়মান হায়দার। তিনি বলেন, বিগত সরকারের সেন্টমার্টিন রক্ষার জন্য যতগুলো সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা মন্ত্রী-সচিবদের প্রভাবের কারণে বাস্তবায়ন সম্ভব না হওয়ায় সেন্টমার্টিন আজ ধ্বংসের শেষ সীমানায় দাঁড়িয়ে আছে।

জানতে চাইলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়েছি বেশিদিন হয়নি। অনেক কিছু আমার অজানা ছিল। এখন খোঁজ নিয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow