"উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার কমানোর পরিকল্পনা"
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে চ্যালেঞ্জের মুখে, যেখানে জিডিপির উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, বন্যার ক্ষতি এবং বিনিয়োগে হ্রাসের কারণে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশিত লক্ষ্যে পৌঁছাবে না বলে ধারণা করছে অর্থ বিভাগ।
**অর্থনৈতিক মন্থরগতির কারণে জিডিপির প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা কমানোর সিদ্ধান্ত**
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে চ্যালেঞ্জের মুখে, যেখানে জিডিপির উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, বন্যার ক্ষতি এবং বিনিয়োগে হ্রাসের কারণে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশিত লক্ষ্যে পৌঁছাবে না বলে ধারণা করছে অর্থ বিভাগ।
সাম্প্রতিক সময়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে অর্থনৈতিক কো-অডিনেশন কাউন্সিলের সভায় দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য ৬.৭৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫.২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ, লক্ষ্যমাত্রায় ১.৫ শতাংশ কমানো হয়েছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাদের পূর্বাভাসে বলেছে যে, বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থান, বন্যা এবং কঠোর অর্থনৈতিক নীতির কারণে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৩.৮ শতাংশে নেমে যাবে, তবে ২০২৬ সালে তা পুনরুদ্ধার হয়ে ৬.৭৫ শতাংশে পৌঁছাবে। আইএমএফের পূর্বাভাসের পর, অর্থ বিভাগও কিছু পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, প্রকৃত প্রবৃদ্ধি হয়তো কিছুটা কমবে, তবে বিশ্ব অর্থনীতি, রপ্তানি ও প্রবাসী আয়সহ অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় দেশের অর্থনীতি একটি মধ্যম মানের প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রবাসী আয়ে বৃদ্ধি এবং রপ্তানি কার্যক্রমের উন্নতি বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এছাড়া, বন্যার কারণে কৃষি খাতে ক্ষতি হলেও খাদ্যশস্য উৎপাদন আগের মতো বাড়ানো সম্ভব হলে, এটি প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে শিল্পের উৎপাদনেও কিছু উন্নতি আসবে বলে আশাবাদী অর্থ বিভাগ।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সাবেক সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ বলেছেন, "অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য বিনিয়োগ প্রয়োজন, কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিনিয়োগ কমে গেছে। এতে প্রবৃদ্ধি অর্জন খুবই কঠিন হবে।" তিনি আরও জানান, যেহেতু শিল্পের উৎপাদন কমেছে এবং সেবা খাতের গতি মন্থর, ফলে ৫.২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করাটাও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
অর্থবছরের শুরুতে আওয়ামী লীগ সরকার ৬.৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। তবে বছরের মাঝামাঝি সময়ে ছাত্র আন্দোলন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, দেশব্যাপী বন্যা এবং মজুরি নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে অর্থনীতি ক্রমাগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং রপ্তানি শিপমেন্টেও বিঘ্ন ঘটেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বড় শিল্প কারখানায় ৩.৮৫ শতাংশ, মাঝারি শিল্পে ৪.৪১ শতাংশ এবং ছোট শিল্পে ৪.০৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যদিও এর চেয়ে বেশি হওয়ার কথা ছিল। একই সময়ে দু'দফা ভয়াবহ বন্যায় খাদ্যশস্যের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বিশেষ করে আমন উৎপাদনে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে।
এ বছর আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭৮.৭৪ লাখ মেট্রিক টন, কিন্তু বন্যার কারণে এটি কমে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ফেনীসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ১১টি জেলায় বন্যার কারণে প্রায় ১৪ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে, যার মধ্যে ২৩ কোটি টাকার ফসল সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে, বিশ্ব অর্থনীতি সম্পর্কে দাতাসংস্থাগুলোর পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি এই বছর ৩.৩ শতাংশ হতে পারে, এবং উদীয়মান এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রবৃদ্ধি ৪.৫ থেকে ৫ শতাংশ হতে পারে। তবে, বাংলাদেশের পাশাপাশি চীনের প্রবৃদ্ধি আগের বছরের তুলনায় কমে ৪.৪৮ শতাংশ এবং ভারতের প্রবৃদ্ধি কমে ৬.৪৬ শতাংশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি বাড়বে, যেমন জাপানে ১.১৪ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ১.৪৮ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ২.১৫ শতাংশ।
সব মিলিয়ে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫.২৫ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্তটি অর্থ বিভাগের জন্য একটি বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ হলেও, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে প্রবৃদ্ধির আরও কম হওয়ার আশঙ্কা রয়ে গেছে।
What's Your Reaction?