১০ কোটি টাকার মাল লুটের নেপথ্যে জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা ও সিন্ডিকেট
কুমিল্লায় ঋণখেলাপি হয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া আসিফ ফ্যাশনের প্রায় ১০ কোটি টাকার মালামাল লুট হয়ে গেছে। জনতা ব্যাংক মতিঝিল শাখা কর্তৃক দায়িত্বরত এই প্রতিষ্ঠানের যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য পণ্য বিক্রি করে তা পুরোপুরি নিঃশেষ করে দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটির জন্য কেয়ারটেকার নিয়োগ করেছিল।
কুমিল্লায় ঋণখেলাপি হয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া আসিফ ফ্যাশনের প্রায় ১০ কোটি টাকার মালামাল লুট হয়ে গেছে। জনতা ব্যাংক মতিঝিল শাখা কর্তৃক দায়িত্বরত এই প্রতিষ্ঠানের যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য পণ্য বিক্রি করে তা পুরোপুরি নিঃশেষ করে দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটির জন্য কেয়ারটেকার নিয়োগ করেছিল।
কিন্তু এই কেয়ারটেকার মাহবুব খানের মাধ্যমে ব্যাংকের কর্মকর্তা এবং মালিক পক্ষের একটি সিন্ডিকেট প্রতিষ্ঠানটির মালামাল বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এদিকে, কিছু মালামাল চুরি হওয়ার অভিযোগে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হলেও অসাধু সিন্ডিকেট এর দায় এড়িয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে তদন্তে জানা গেছে, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার জোরকানন এলাকায় অবস্থিত আসিফ গ্রুপের দুটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান জনতা ব্যাংক থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছিল। মালিক সালাউদ্দিন আহমেদ ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে দেউলিয়া হয়ে যান। ঋণ নিয়ে কয়েক বছর প্রতিষ্ঠান দুটি চালানোর পর রহস্যজনকভাবে সেগুলো বন্ধ করে দেন মালিক পক্ষ। এরপর, সালাউদ্দিন সপরিবারে অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান। এরপরই জনতা ব্যাংক প্রতিষ্ঠানটির কেয়ারটেকার হিসেবে গার্ড মাহবুব খানকে নিয়োগ করে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মাহবুব খানের সহযোগিতায় ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এবং মালিক পক্ষের একটি সিন্ডিকেট প্রায় এক বছরে ১০ কোটি টাকার মালামাল বিক্রি করে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানের মালিকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা চলমান থাকায় এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের ভেতরের মালামাল মূল্যায়ন করা সম্ভব হয়নি। এই সুযোগে সিন্ডিকেট সদস্যরা কোটি কোটি টাকার মালামাল বিক্রি করেছে। এলাকাবাসী মনে করেন, আসিফ গ্রুপের মালিক সালাউদ্দিন হয়তো আর দেশে ফিরবেন না, তিনি ব্যাংক থেকে বিশাল অঙ্কের টাকা নিয়ে বিদেশে চলে গেছেন। বর্তমানে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যদি প্রতিষ্ঠানটি জব্দ করে, তবে মালিক পক্ষ ভেতরের মালামাল বিক্রি করে যা লাভ হবে তাই নিচ্ছে।
কেয়ারটেকার মাহবুব খান বলেন, "ফ্যাক্টরির ভেতরে আনুমানিক ১০ কোটি টাকার মালামাল ছিল, কিন্তু এখন খুব সামান্য মালামাল রয়েছে। বাকি মালগুলো লুটপাট হয়ে গেছে। আমি এ বিষয়ে জড়িত নই, আমাকে মারধর করে মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। মালিক পক্ষ এবং ব্যাংকের কর্মকর্তারা এসব বিষয়ে অবগত আছেন। প্রায় রাতেই ঢাকা এবং চট্টগ্রাম থেকে ভাঙারি ব্যবসায়ীরা এসে ট্রাক ভরে মালামাল নিয়ে যায়। এসব মালামাল ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নির্দেশে আমি একবার থানায় জিডি করেছি।"
জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আসিফ ফ্যাশনের মালিক সালাউদ্দিন আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন এবং কুমিল্লা আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা চলছে। তবে, মালামাল লুটের বিষয়টি নিয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হচ্ছেন না।
জনতা ব্যাংক মতিঝিল শাখার এজিএম শাহিন মাসুদ বলেন, "আসিফ গ্রুপের ঋণ নিয়ে কুমিল্লার আদালতে মামলা চলমান। আমরা জানি না, ওই শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ঠিক কী কী মালামাল রয়েছে। মালামাল লুটের ঘটনায় কারা জড়িত তা তদন্ত করে দেখা হবে।"
সদর দক্ষিণ থানার এসআই ইমাম হোসেন বলেন, "আসিফ ফ্যাশনে চুরির বিষয়ে একটি জিডি হয়েছে। আমরা তদন্ত করছি।"
What's Your Reaction?