প্রকাশ্যে বিক্রি ও ব্যবহার চলছে পলিথিন ব্যাগ
নিষিদ্ধ হলেও রাজধানীজুড়ে পলিথিনের বিক্রি ও ব্যবহার থেমে নেই। নজরদারির অভাবে রাজধানীর বাজারগুলোতে এখনো পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার চলছে ব্যাপকভাবে, যা পরিবেশের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নিষিদ্ধ হলেও রাজধানীজুড়ে পলিথিনের বিক্রি ও ব্যবহার থেমে নেই। নজরদারির অভাবে রাজধানীর বাজারগুলোতে এখনো পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার চলছে ব্যাপকভাবে, যা পরিবেশের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যবহৃত পলিথিন ময়লার ভাগাড় ও জলাশয়ে জমে গিয়ে মাটি এবং পানির সঙ্গে মিশে পরিবেশের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। এছাড়া যত্রতত্র পলিথিন পুড়িয়ে ফেলার কারণে বায়ু, পানি এবং মাটি দূষিত হচ্ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মুদি দোকান, কাঁচাবাজার, মাছের বাজারসহ সব জায়গায় নিষিদ্ধ ছোট, বড় এবং মাঝারি সাইজের পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে। এসব পলিথিন ব্যাগের মধ্যে অনেক সময় হাতলসহ ও হাতল ছাড়া পলিথিনও রয়েছে। প্রকাশ্যে এসব পলিথিন ব্যবহার করে ব্যবসায়ীরা এবং ক্রেতারা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলছেন।
ডেমরা, রামপুরা, খিলগাঁও, সবুজবাগ, পল্টন, মিরপুরসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজারে এখনও পলিথিন বিক্রি করা হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্রেতাই বাজারে গিয়ে ব্যাগ আনেন না, ফলে তারা বাধ্য হয়ে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করেন। মুদি দোকান থেকে শুরু করে মাছ-মাংস, সবজি, আলু-পেঁয়াজ, হার্ডওয়্যার এবং পোশাকের দোকানগুলোতেও একই অবস্থা। ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালগুলোতেও পলিথিন ব্যবহার হচ্ছে ব্যাপকভাবে।
বাজারগুলোর খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, "আশা প্যাকেজিং", "রিপন প্যাকেজিং", "রাব্বি প্যাকেজিং" ও "নিশিতা প্যাকেজিং" নামের কয়েকটি কোম্পানি গোপনে বাজারে পলিথিন সরবরাহ করছে। বড় বড় মার্কেটের দোকানিরা এসব কোম্পানিকে বিভিন্ন ডিজাইনের পলিথিন ব্যাগের অর্ডার দেন এবং সেগুলো তারা বাজারে বিক্রি করেন।
মেরাদিয়া বাজারের ক্রেতা হাবিবুল্লাহ বলেন, "পলিথিনে মাছ ও সবজি ভালোভাবে রাখা যায়। তাই বাজারে যাই, সঙ্গে পলিথিন নিয়ে যাই। পরিবেশের ক্ষতির বিষয়টা জানি, কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা না হলে আর কী করা?"
এদিকে, পরিবেশ অধিদফতরের দাবি, রাজধানীসহ অন্যান্য এলাকায় পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন, আমদানি, বিক্রয় এবং বাণিজ্যিক ব্যবহার বন্ধ করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযান সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার অনেকটা কমেনি। রামপুরা বাজারে গিয়েও দেখা গেছে, সব দোকানে পলিথিনে পণ্য বিক্রি হচ্ছে, এবং ক্রেতারাও তা গ্রহণ করছেন।
ঢাকা ওয়াসার মতে, ঢাকায় এখনো প্রায় ১০০ কোটি পলিথিন ব্যাগ মাটির নিচে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এর ফলে মাটির নিচে পানি এবং অক্সিজেনের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যা জমির উর্বরা শক্তি ধ্বংস করছে। পলিথিন পোড়ালে বায়ু এবং মাটি দূষিত হয়, এবং এটি মাটির সাথে সূর্যালোক ও পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে, ফলে ক্রমাগত মাটি উত্তপ্ত হয়ে উঠে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ইউনেস্কো) জানায়, প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ সামুদ্রিক পাখি এবং ১ লাখ সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী প্লাস্টিক দূষণের কারণে মারা যায়। পরিবেশবিদদের মতে, পলিথিন তৈরিতে ব্যবহৃত কেমিক্যালগুলো অত্যন্ত ক্ষতিকর, এবং এটি মাটির সঙ্গে মিশে যেতে আনুমানিক দেড় হাজার বছর সময় নেয়।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (উপসচিব) মুহা. শওকাত আলী (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) জানান, "পলিথিন নিষিদ্ধ করতে রাজধানীসহ সারাদেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। গত মাসেও ১৩টি আদালত পরিচালিত হয়েছে, এবং এখনো এই কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে এটি কিছুটা সময় নিবে, কিন্তু পরিবর্তন আসবেই।"
What's Your Reaction?