দিল্লিতে শেখ হাসিনা, নিম্নমুখী বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: এবিসি
বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী প্রায় পাঁচ দশকে এবারের মতো ঢাকার与দিল্লির সম্পর্ক এতটা টানাপোড়েনে পড়েনি। যদিও দুই দেশের মধ্যে বহু বছর ধরেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে তা চরম টানাপোড়েনের মধ্যে পড়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী প্রায় পাঁচ দশকে এবারের মতো ঢাকার与দিল্লির সম্পর্ক এতটা টানাপোড়েনে পড়েনি। যদিও দুই দেশের মধ্যে বহু বছর ধরেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে তা চরম টানাপোড়েনের মধ্যে পড়েছে। ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যার পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে এসেছে বড় ধরনের পরিবর্তন এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও এসেছে দৃশ্যমান অসামঞ্জস্য।
সম্প্রতি আস্ট্রেলিয়ান গণমাধ্যম **এবিসি নিউজ**-এর এক প্রতিবেদনে এই সম্পর্কের অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া শান্তিপূর্ণ ছাত্র বিক্ষোভ, আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর দমননীতির কারণে এক পর্যায়ে ‘দেশব্যাপী গণআন্দোলনে’ রূপ নেয়। এই আন্দোলন বিশ্বে "প্রথম জেন-জি বিপ্লব" হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। প্রতিবাদকারীদের শক্ত প্রতিরোধ এবং সরকারের নির্যাতনের কারণে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে, হেলিকপ্টারে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।
এ ঘটনার পর থেকে শেখ হাসিনা দিল্লিতে নির্বাসিত রয়েছেন। এর পাশাপাশি বাংলাদেশে ইসকন নেতাকে গ্রেপ্তার এবং ভারতে বাংলাদেশের একটি কনস্যুলেটে উগ্র হিন্দুদের হামলার ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত, ধর্মীয় উত্তেজনা এবং বাংলাদেশের কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।
এবিসি নিউজ-এর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশকে দীর্ঘদিন ধরে ভারত তার সবচেয়ে স্থিতিশীল সহযোগী হিসেবে দেখেছিল। তবে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসন অবসানের পর, বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আগস্টে শেখ হাসিনার শাসনের পতনের পর, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়।
এদিকে, বাংলাদেশের ১৭ কোটি ৪০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বী। ঐতিহাসিকভাবে, হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেক সদস্যই আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছিল। তবে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তাদের মধ্যে অনেকে আওয়ামী লীগের সদস্য এবং সংখ্যালঘু হিন্দুদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। এ বিষয়টি ভারত সরকারের পক্ষ থেকে উদ্বেগের কারণ হয়েছে। ভারতের মতে, ড. ইউনূসের সরকার সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে যথেষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। অন্যদিকে, শেখ হাসিনা দাবি করেছেন যে, নতুন সরকারই সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন। তিনি ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে প্রতিবেশী দেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন।
এদিকে, নভেম্বরের শেষের দিকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অপমানিত হওয়ার পর, ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা চালানো হয়। উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা সেখানে ভাঙচুর চালিয়ে বাংলাদেশের পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলে। এর ফলে ঢাক-দিল্লি সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, হিন্দুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ অতিরঞ্জিত করা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে থেকেই বাংলাদেশে ভারত সম্পর্কে অসন্তোষ বৃদ্ধি পেয়েছিল, যদিও দিল্লি তখনও শেখ হাসিনাকে একটি ইতিবাচক চরিত্র হিসেবে দেখত।
এই উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে, দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ এখন অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, এবং দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সংকট গভীর হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।
What's Your Reaction?