অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন ইতিহাস বিচার

অস্বীকার করার উপায় নেই যে গেল আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে সীমাহীন লুটপাট ও দুর্নীতি করেছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে চরম স্বৈরতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা কায়েম করেছে।

Oct 19, 2024 - 10:13
 0  20
অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন ইতিহাস বিচার

অস্বীকার করার উপায় নেই যে গেল আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে সীমাহীন লুটপাট ও দুর্নীতি করেছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে চরম স্বৈরতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা কায়েম করেছে। সমালোচনা ও বিরোধী কণ্ঠকে স্তব্ধ করতে নিষ্ঠুর দমন–পীড়ন চালিয়েছে। মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করেছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করার পাশাপাশি তারা ইতিহাসকেও অনেকাংশে আত্মসাৎ করেছে, যার দায় দেশবাসীকে বহন করতে হবে বহু বছর।

তবে আওয়ামী লীগের ইতিহাস বয়ানকে অগ্রাহ্য করতে গিয়ে এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাসকে ম্লান করে, প্রশ্নবিদ্ধ করে অতীতের সব অর্জন ও বিজয়গাথা।

দুর্ভাগ্য, আমাদের দেশে ক্ষমতার বদলের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু বদলে যায়। কেবল চেয়ার নয়, রাষ্ট্রের নীতিকৌশলও। কিন্তু এসব কতটা জনগণের কল্যাণে আর কতটা ভিন্ন কারণে, সেটা ভেবে দেখার বিষয়। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত সংবিধানে ১৭টি সংশোধনী আনা হয়েছে, যার বেশির ভাগই দলীয় ও ব্যক্তিস্বার্থে।

বিতর্কটা উঠেছে সম্প্রতি আটটি জাতীয় দিবস বাদ দেওয়া নিয়ে। দিবসগুলো হলো ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিবস ও জাতীয় শিশু দিবস, ৫ আগস্ট শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেল দিবস, ৪ নভেম্বর জাতীয় সংবিধান দিবস এবং ১২ ডিসেম্বর স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস।

আমরা জাতীয় দিবস পালন করি কেন? এর মাধ্যমে জাতীয় চেতনা তথা জনগণের আবেগ-অনুভূতি ধারণ করার চেষ্টা করা হয়। যেমন আমাদের স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, জাতীয় শহীদ দিবস, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও বাংলা নববর্ষ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। আবার কোনো কোনো মহল যে বিতর্ক করেনি, তা-ও নয়।

বিগত সরকার অনেক কিছুর মতো জাতীয় দিবসকেও দলীয়করণ করেছিল। সরকারি অফিসে জোর করে এসব দিবস পালন করা হতো। এটা ছিল অন্যায়। সেই সঙ্গে এ কথাও মানতে হবে, উল্লিখিত আটটি দিবসের সবগুলোকে এক পাল্লায় মাপা ঠিক হয়নি। যেমন ৭ মার্চ আমাদের জাতীয় ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। যেমন ৪ নভেম্বর সংবিধান দিবসের তাৎপর্যও কম নয়। এসব নিয়ে বিতর্ক হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। অন্যদিকে দলীয় ও পারিবারিক বিবেচনায় অন্তত চারটি দিবস বাতিল নিয়ে কেউ প্রশ্ন করেননি। করবেন না। কিন্তু ৭ মার্চ ও ৪ নভেম্বরকে সেই কাতারে নিয়ে আসা কোনোভাবে সমীচীন হয়েছে বলে মনে হয় না। ১৫ আগস্টের বিষয়ে উচ্চ আদালতের দোহাই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারকে মনে রাখতে হবে, এই উচ্চ আদালতের দোহাই দিয়েই বিগত আওয়ামী লীগ সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করেছিল।

বিতর্কটা উঠেছে সম্প্রতি আটটি জাতীয় দিবস বাদ দেওয়া নিয়ে। দিবসগুলো হলো ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিবস ও জাতীয় শিশু দিবস, ৫ আগস্ট শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেল দিবস, ৪ নভেম্বর জাতীয় সংবিধান দিবস এবং ১২ ডিসেম্বর স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস।

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম জাতীয় দিবস বাতিলের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলেছেন, আওয়ামী লীগের দলীয় দিবসগুলো জাতীয় দিবস হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব স্বীকার করেও বলেছেন, এটি জাতীয় দিবস হওয়ার মতো নয়। তিনি বলেছেন, ‘আমরা তো ৭ মার্চকে ইতিহাস থেকে নাই করে দিচ্ছি না। শেখ মুজিবুর রহমানের গুরুত্বকে ইতিহাস থেকে নাই করে দিচ্ছি না। যেটা ইতিহাসের অংশ, নির্মোহভাবে ইতিহাস নতুন করে লেখা হবে, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি...থাকবে। কিন্তু সেটি দিবস হিসেবে যে চর্চা, এটির একটি রাজনীতি আছে। গণ-অভ্যুত্থানের সরকার সেই রাজনীতি চলতে দিতে পারে না।’

তবে নাহিদ ইসলাম নিশ্চয়ই অস্বীকার করবেন না, এবার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে দেয়ালে ৭ মার্চের ভাষণ থেকেও অনেক উক্তি লিখিত হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনক মনে করে কি না এই সরকার—এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘অবশ্যই না।’ তিনি বলেন, এই ভূখণ্ডের লড়াইয়ের ইতিহাসে কেবল একজন না, বহু মানুষের অবদান রয়েছে। আমাদের ইতিহাস কিন্তু শুধু বায়ান্ন থেকে শুরু হয়ে যায়নি, আমাদের ইতিহাসের দীর্ঘ লড়াই আছে। ব্রিটিশবিরোধী লড়াই আছে, সাতচল্লিশের লড়াই আছে এই ভূখণ্ডের মানুষের, একাত্তরের লড়াই আছে, নব্বই আছে, চব্বিশ আছে।’

শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিম, যোগেন মণ্ডল, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীসহ অনেক মানুষের লড়াই আছে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ‘আমরা তো মনে করি, এখানে একজন জাতির পিতা না; বরং অনেক ফাউন্ডিং ফাদারস রয়েছেন, যাঁদের অবদানের ফলে এই ভূখণ্ড, এই রাষ্ট্র, আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। ফলে আমরা এটিকে একটি দলে, একজন ব্যক্তিতে সীমাবদ্ধ করতে চাই না।’

আমরা জাতীয় দিবস পালন করি কেন? এর মাধ্যমে জাতীয় চেতনা তথা জনগণের আবেগ-অনুভূতি ধারণ করার চেষ্টা করা হয়। যেমন আমাদের স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, জাতীয় শহীদ দিবস, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও বাংলা নববর্ষ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। আবার কোনো কোনো মহল যে বিতর্ক করেনি, তা-ও নয়।

আমরাও চাই, আমাদের এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় যঁার যেটুকু অবদান, সেটুকুর যথাযথ মূল্যায়ন হোক। কারও অবমূল্যায়ন কিংবা অতি মূল্যায়ন দেশ ও জনগণের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না।

তিনি ফাউন্ডিং ফাদারস হিসেবে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিম, যোগেন মণ্ডল, মাওলানা ভাসানীর নাম উল্লেখ করেছেন।

তথ্য উপদেষ্টা ইতিহাসকে বিভাগপূর্ব পর্যায় থেকে বিচার করতে চেয়েছেন; কিন্তু চট্টগ্রাম বিদ্রোহের নায়ক সূর্য সেনের নাম বলেননি। কেবল যোগেন মণ্ডলের নাম বলেছেন, যিনি উচ্চবর্ণের হিন্দুদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পাকিস্তান আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন। সেই যোগেন মণ্ডলকেও ১৯৫০ সালে রাতের আঁধারে দেশ ত্যাগ করতে হয়েছে।

নাহিদ ইসলাম নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন, বাঙালির স্বাধিকার তথা স্বাধীনতার আন্দোলন বেগবান হওয়ার অনেক আগেই ১৯৬২ সালে এ কে ফজলুল হক এবং ১৯৬৩ সালে সোহরাওয়ার্দী মারা যান। আবুল হাশিম বেঁচে থাকলেও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। মাওলানা ভাসানী তাঁর অবস্থান থেকে স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশ নিয়েছেন।

আমরাও চাই, আমাদের এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় যঁার যেটুকু অবদান, সেটুকুর যথাযথ মূল্যায়ন হোক। কারও অবমূল্যায়ন কিংবা অতি মূল্যায়ন দেশ ও জনগণের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না।

কিন্তু স্বাধীনতার জন্য যেই মানুষটি পাকিস্তান আমলের অর্ধেক সময় ১২ বছর কারান্তরালে ছিলেন, তিনি শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৬৬ সালে তাঁর প্রণীত ছয় দফা কর্মসূচি দল–মতনির্বিশেষে পুরো জনগোষ্ঠীকে আন্দোলিত করে। উনসত্তরে আইয়ুব শাহির বিরুদ্ধে ছাত্ররা যে গণ–অভ্যুত্থান গড়ে তুলেছিল, তাদের ১১ দফায়ও ৬ দফা যুক্ত করা হয়েছিল। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর এ দেশের মানুষ শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু অভিধায় অভিষিক্ত করেছিল। আর সত্তরের নির্বাচন হয়েছিল মূলত জাতিগত মুক্তির প্রশ্নে। সে সময়ে বামপন্থীদের ‘ভোটের আগে ভাত চাই’ স্লোগান মানুষ গ্রহণ করেনি। শেখ মুজিব একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় পাকিস্তানের কারাগারে ছিলেন।

শেখ মুজিবুর রহমান যে পঞ্চাশের দশক থেকে পাকিস্তানি শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন, পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে দেওয়া তাঁর বক্তৃতাই এর প্রমাণ দেবে। এ ছাড়া তিনি স্বাধীনতার পক্ষে সংগ্রাম করতে ষাটের দশকের শুরুতে বাম নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন।

তাই আমরা মনে করি, শেখ হাসিনার সরকারের আমলের দুর্নীতি, দুঃশাসন ও দমন–পীড়নের কারণে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভূমিকা অগ্রাহ্য করা ঠিক হবে না। একাত্তরের ২৬ মার্চের আগের নেতা শেখ মুজিব ও পরের শাসক মুজিবও এক নন। শাসক হিসেবে তিনি অনেকাংশে ব্যর্থ ছিলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অপরিহার্য অংশ বিরোধী দলকে কোনো জায়গা দেননি। পঁচাত্তরে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা তাঁর কঠোর সমালোচনা করব; কিন্তু স্বাধীনতাসংগ্রামে তাঁর নেতৃত্বকে অস্বীকার করা যাবে কী করে।

নাহিদ ইসলাম নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন, বাঙালির স্বাধিকার তথা স্বাধীনতার আন্দোলন বেগবান হওয়ার অনেক আগেই ১৯৬২ সালে এ কে ফজলুল হক এবং ১৯৬৩ সালে সোহরাওয়ার্দী মারা যান। আবুল হাশিম বেঁচে থাকলেও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। মাওলানা ভাসানী তাঁর অবস্থান থেকে স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু স্বাধীনতার জন্য যেই মানুষটি পাকিস্তান আমলের অর্ধেক সময় ১২ বছর কারান্তরালে ছিলেন, তিনি শেখ মুজিবুর রহমান।

এই প্রেক্ষাপটে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ও ১৫ আগস্টকে দেখতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার ৭ মার্চকে জাতীয় দিবস থেকে ছেঁটে ফেলল, অথচ ইউনেসকো একে বিশ্ব হ্যারিটেজের অংশ হিসেবে ঘোষণা করেছে। কোনো দিবসে সরকারি ছুটি থাকল কি থাকল না, সেটা বড় বিষয় নয়; বড় বিষয় হলো ইতিহাসকে আমরা কীভাবে দেখব।

 শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ইতিহাসকে দলীয়করণ করতে গিয়ে জাতিকে বিভক্ত করেছে, তার আগে যারা (বিএনপি ও জাতীয় পার্টি) ক্ষমতায় ছিল, তারাও বিভক্ত করেছে। কোনো বিভক্ত জাতি এগোতে পারে না। ভারতের সব মানুষ করমচাঁদ গান্ধীকে জাতির পিতা হিসেবে মানে না, কট্টরপন্থীরা তাঁকে হত্যা করেছে। বিজেপির অনেকে গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসেকেই বীর মানে। তারপরও ভারত গান্ধীকে জাতির পিতা মানে। তিনি সেই দেশের প্রধান নেতা। তাঁকে নিয়ে ভারতে এত বিতর্ক হয়নি, যা হয়েছে এখানে শেখ মুজিবকে নিয়ে। শত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও শেখ মুজিবুর রহমানই এ স্বাধীনতার প্রধান নেতা। আমরা তাঁকে জাতির পিতা স্বীকার করি বা না করি।

সবার ইতিহাস মূল্যায়ন এক হবে না, ব্যক্তি ও দলের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে। তবে এই ভিন্নতা নিয়েই আমাদের একটি জায়গায় আসতে হবে, যার ভিত্তি হবে গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধ। একাত্তরকে বাদ দিয়ে আমরা এগোতে পারব না।

অন্তর্বর্তী সরকারের যে সিদ্ধান্তটি অনেককে সবচেয়ে বেশি পীড়িত করেছে, সেটি হলো সংবিধান দিবসকে বাতিল করা। এটি সরকারি ছুটি ছিল না। পৃথিবীর সব দেশেই সংবিধান দিবসকে বিশেষ মর্যাদা দেয়। ভারত, পাকিস্তানসহ অনেক দেশে সংবিধান দিবসে সরকারি ছুটি থাকে। স্বাধীনতার আড়াই বছর পর ভারত সংবিধান রচনা করে ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি। পাকিস্তান সংবিধান রচনা করে স্বাধীনতার ৯ বছর পর—১৯৫৬ সালের ২৩ মার্চ। ভারত সেই দিনকে প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে পালন করে; পাকিস্তান করে পাকিস্তান দিবস হিসেবে। আর মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ মাত্র ১০ মাসে সংবিধান রচনা করার গৌরব অর্জন করেছে। পরবর্তীকালে কাটাছেঁড়া করে সংবিধানকে যত বিতর্কিত করা হোক না কেন, মূল সংবিধানে নিবর্তনমূলক কোনো আইন ছিল না।

সংবিধান দিবসটি জাতীয় মর্যাদা পাওয়ার পেছনেও আইনজীবী ও পেশাজীবীদের অনেক সংগ্রাম ছিল। ২০২২ সালের নভেম্বরে এক সাক্ষাৎকারে আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেছিলেন, ‘সংবিধান দিবসের স্বীকৃতি এবং সেটা অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পালন করা উচিত।’ ১৯৯৯ সালে সংবিধান প্রণয়ন কমিটির ৩৪ জনের মধ্যে জীবিত থাকা ১৯ জনকে সম্মাননা জানিয়ে তাঁরা বড় অনুষ্ঠান করেছিলেন। তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘সব সরকারই মুখে আইনের শাসনের কথা বলে, কিন্তু আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে গেলে সংবিধানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি তারা বোঝে না।’

অন্তর্বর্তী সরকার ৭ মার্চকে জাতীয় দিবস থেকে ছেঁটে ফেলল, অথচ ইউনেসকো একে বিশ্ব হ্যারিটেজের অংশ হিসেবে ঘোষণা করেছে। কোনো দিবসে সরকারি ছুটি থাকল কি থাকল না, সেটা বড় বিষয় নয়; বড় বিষয় হলো ইতিহাসকে আমরা কীভাবে দেখব।

বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলন–সংগ্রাম করে যে সংবিধান দিবসের স্বীকৃতি আদায় করেছে, অন্তর্বর্তী সরকার সেটি বাতিল করে দিল কোন যুক্তিতে? এতে যে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের কথা আছে, সেটা কি কেউ অস্বীকার করতে পারবে? 

আওয়ামী লীগ সরকার করেছে বলে সবকিছু বাদ দেওয়া যায় না। আওয়ামী লীগ সরকার তো আমাদের জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীতও ঠিক করেছে। তাই বলে আমরা কি জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকাও বাদ দেব?

সবার ইতিহাস মূল্যায়ন এক হবে না, ব্যক্তি ও দলের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে। তবে এই ভিন্নতা নিয়েই আমাদের একটি জায়গায় আসতে হবে, যার ভিত্তি হবে গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধ। একাত্তরকে বাদ দিয়ে আমরা এগোতে পারব না।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow