কেউ আমাদের অবস্থার চিন্তা করে না’—মার্কিন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে পশ্চিম তীরের বাসিন্দাদের প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে জলপাই তোলার মৌসুম শেষ হতে চলেছে। সেখানে ফিলিস্তিনি-মার্কিন উদ্যোক্তা জামাল জাগুলুল তাঁর জলপাই মাড়াইয়ের যন্ত্রের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। তবে তাঁর চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে, মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের দিকে।
ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে জলপাই তোলার মৌসুম শেষ হতে চলেছে। সেখানে ফিলিস্তিনি-মার্কিন উদ্যোক্তা জামাল জাগুলুল তাঁর জলপাই মাড়াইয়ের যন্ত্রের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। তবে তাঁর চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে, মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের দিকে।
পশ্চিম তীরের তারমাস আয়া অঞ্চলে ফিলিস্তিনি-মার্কিন জনগণের সংখ্যা বেশী। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রায় কোনো পরিবর্তন আসবে কি না, সে বিষয়ে জামালের মতো স্থানীয় অন্য মার্কিন পাসপোর্টধারীদের মনে সন্দেহ জাগছে।
পঞ্চাশোর্ধ্ব এই ব্যবসায়ী জামাল জাগুলুল বলেন, ‘আমরা এখানে অনেক সমস্যার সম্মুখীন। কেউ (যুক্তরাষ্ট্রের) আমাদের নিয়ে ভাবেন না।’
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পশ্চিম তীরে সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল পশ্চিম তীরের অংশটির নিয়ন্ত্রণ নেয়।
গত বছরের ৭ অক্টোবর, হামাস ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালালে, এর প্রতিশোধ হিসেবে গাজায় যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েল।
জামাল জাগুলুল পুরোনো আনন্দের স্মৃতিচারণ করে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের কথা মনে করেন, যিনি অসলো চুক্তির মাধ্যমে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন ‘প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)’ এবং ইসরায়েলকে একে অপরকে স্বীকৃতি দেওয়ার সুযোগ করে দেন।
‘আমরা যদি এখন ভোট না দিই, তবে পরবর্তী নির্বাচনে আরব, ফিলিস্তিন ও মুসলমানদের গুরুত্ব কমে যাবে,’ বলেন ওদেহ জুমা, ফিলিস্তিনি-মার্কিন নাগরিক ও ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা।
জামাল জাগুলুল বলেন, ‘এবার আমরা পরিবর্তন চাই। আমরা একটি নতুন দলকে চাই, অন্যদের সাহায্য ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই।’
জাগুলুলের বন্ধু বাসিম সাবরি, যিনি ফিলিস্তিন ও মার্কিন পাসপোর্টধারী, তিনিও তৃতীয় কোনো দলের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। কারণ, তিনি মনে করেন, গত আট বছরে যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা কেবল দুর্দশা বাড়িয়েছেন।
বাসিম সাবরি বর্তমান সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও উন্মাদ ও বর্ণবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
তিনি এবারের নির্বাচনে জিল স্টেইনকে ভোট দেওয়ার কথা ভাবছেন, যিনি বহু বছরের পুরোনো গ্রিন পার্টির হয়ে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী। ২০১২ ও ২০১৬ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।
বাসিমের মনে গাজার যুদ্ধ গভীর প্রভাব ফেলেছে। তিনি আশা করেন, যুক্তরাষ্ট্র সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।
বাসিম যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এটি একমাত্র দেশ, যা বিশ্বের অনেক মানুষের যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগে বাধা দেয়। গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর জন্য ইসরায়েলকে তারা কখনো নিন্দাও জানায়নি।’
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গাজার যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৪৩ হাজার ২৫৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
ফিলিস্তিনি-মার্কিনি ওদেহ জুমা ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা। তিনি প্রতি বছর কয়েকবার তারমাস আয়ায় আসেন এবং তীব্র কষ্টের সঙ্গে উল্লেখ করেন, ইসরায়েলকে মার্কিন সামরিক বাহিনী সমর্থন করছে।
ওদেহ বলেন, ‘ফিলিস্তিনি হিসেবে আমাদের উদ্বেগ হচ্ছে যে, ফিলিস্তিন ও ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থের জন্য এড়িয়ে যাচ্ছে।’
তিনি ৫ নভেম্বর নির্বাচনের রাতে এ বিষয়ে খবর দেখার পরিকল্পনা করেছেন, কিন্তু এবার ভোট দিতে চান না।
ওদেহ বলেন, ‘আমরা যদি এখন ভোট না দিই, তবে বিষয়টি পরবর্তী নির্বাচনে আরব, ফিলিস্তিন ও মুসলমানদের গুরুত্ব তুলে ধরবে।’
২০২২ সালের এক জনশুমারিতে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১ লাখ ৭২ হাজার ফিলিস্তিনি-মার্কিনি বসবাস করেন, তাদের মধ্যে অনেকে মিশিগান ও পেনসিলভানিয়ার মতো দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা।
পশ্চিম তীরেও হাজার হাজার ফিলিস্তিনি-মার্কিন বসবাস করেন। চলতি বছর সেখানে একজন মার্কিন ও দুজন দ্বৈত নাগরিককে হত্যার ঘটনা এসব মানুষের মনকে নাড়িয়ে দিয়েছে।
What's Your Reaction?