বাংলাদেশের নাজমুল পেয়েছেন কানাডার সম্মানজনক ‘কিলাম অ্যাওয়ার্ড’
গবেষণা ও শিক্ষা খাতে অসামান্য অবদানের জন্য কানাডার চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া হয় সম্মানজনক ‘কিলাম অ্যাওয়ার্ড’। সম্প্রতি এই পুরস্কার লাভ করেছেন কানাডার ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টার বাংলাদেশি ছাত্র ও পিএইচডি গবেষক মো. নাজমুল আরেফিন।
গবেষণা ও শিক্ষা খাতে অসামান্য অবদানের জন্য কানাডার চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া হয় সম্মানজনক ‘কিলাম অ্যাওয়ার্ড’। সম্প্রতি এই পুরস্কার লাভ করেছেন কানাডার ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টার বাংলাদেশি ছাত্র ও পিএইচডি গবেষক মো. নাজমুল আরেফিন।
কিলাম ট্রাস্ট থেকে দেওয়া পিএইচডি পর্যায়ের এই স্কলারশিপ, যার পূর্ণ নাম ‘আইজ্যাক ওয়ালটন কিলাম মেমোরিয়াল স্কলারশিপ’, অত্যন্ত সম্মানজনক ও প্রতিযোগিতামূলক। প্রায় এক লাখ ডলার পুরস্কারসহ এই স্কলারশিপটি বিশেষ মর্যাদা বহন করে। এর পাশাপাশি, কিলাম লরিয়েট খেতাব পাওয়াও একটি বড় অর্জন। গত ২৩ অক্টোবর, ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টার প্রেসিডেন্ট ও উপাচার্যের উপস্থিতিতে নাজমুল আরেফিনকে এই মর্যাদা দেওয়া হয়।
ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টা বিশ্বের শীর্ষ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি, যা বিশেষভাবে সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যাথমেটিকস (STEM) শিক্ষার জন্য পরিচিত। কিলাম স্কলারশিপের অধিকাংশই STEM গবেষকদের জন্য reserved থাকলেও, ফ্যাকাল্টি অব আর্টস থেকে এই সম্মাননা প্রাপ্তি অত্যন্ত মূল্যবান।
এছাড়া, নাজমুল আরেফিন ‘ডরোথি কিলাম অ্যাওয়ার্ড’-এর সেরা তিন প্রাপ্ত ব্যক্তির মধ্যে স্থান পেয়েছেন। তাঁর অন্যান্য অর্জনগুলোর মধ্যে রয়েছে কানাডিয়ান সোশিওলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন থেকে গ্র্যাজুয়েট মেরিট অ্যাওয়ার্ড, গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন রাইজিং স্টার অ্যাওয়ার্ড, আলবার্টা গ্র্যাজুয়েট এক্সিলেন্স স্কলারশিপ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট অ্যাওয়ার্ড, এবং জার্মানির ইউনিভার্সিটি অব ক্যাসেল থেকে ভিজিটিং সায়েন্টিস্ট ফেলোশিপ।
পিএইচডি যাত্রা মো. নাজমুল আরেফিনের পিএইচডি যাত্রা সহজ ছিল না। তিনি ছয় বছর শিক্ষা ক্যাডারের একজন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন, তবে নানা বাধার কারণে পদোন্নতি পেতে সক্ষম হননি। যদিও তিনি কখনো থেমে যাননি এবং বিভিন্ন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করে পিএইচডি প্রস্তাব লাভ করেছেন। তিনি বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টার সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ‘সেন্টার ফর ক্রিমিনোলজিক্যাল রিসার্চ’-এ পিএইচডি গবেষক হিসেবে কর্মরত আছেন এবং ‘কানাডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অব ইসলাম অ্যান্ড মুসলিমস’-এর আউটরিচ অফিসার হিসেবে কাজ করছেন।
গবেষণার আগ্রহ নাজমুল নিজেকে একজন ছাত্র হিসেবেই পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করার পর অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হন। বিশেষ করে, ৯/১১–পরবর্তী ইসলামোফোবিয়া (ইসলামবিদ্বেষ) বিষয়টি তাঁকে গভীরভাবে ভাবায়। তিনি বর্তমানে সিনেমা জগতের মাধ্যমে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ এবং মুসলিমবিরোধী বর্ণবাদ সম্পর্কে লেখালেখি করছেন। তাঁর গবেষণার মূল ক্ষেত্র হলো সমালোচনামূলক সন্ত্রাসবাদ গবেষণা, চরমপন্থা, ইসলামোফোবিয়া, পুলিশিং এবং সামাজিক ন্যায়বিচার।
নাজমুল বলেন, ‘এই পুরস্কারটি আমার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক, যা আমাকে আরও ভালো কাজ করার প্রেরণা জোগাবে।’ তাঁর পিএইচডি যাত্রাকে অর্থবহ করতে তিনি গবেষণা, সহযোগিতা (কোলাবরেশন) ও প্রকাশনার ওপর সমান গুরুত্ব দিচ্ছেন। পিএইচডির প্রথম দুই বছরে তিনি অপরাধবিজ্ঞানের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে নিবন্ধ ও বুক চ্যাপ্টার প্রকাশ করেছেন এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বেস্ট পেপার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘একাডেমিয়াতে বাংলাদেশ বা দক্ষিণ এশিয়ার আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়গুলো আমরা পশ্চিমা তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি, লিখি। এখন সময় এসেছে, এসব বিষয় প্রাচ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে।’
What's Your Reaction?