বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার বিষয় নির্বাচনের আগে

সন্তানেরা বড় হয়ে কী পড়বে, কোন পেশায় যুক্ত হবে—একসময় ছোটবেলায়ই সেসব সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতেন মা-বাবা কিংবা পরিবারের সদস্যরা। এখনো সেই চল আছে। তবে সময় বদলেছে।

Oct 20, 2024 - 06:48
 0  12
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার বিষয় নির্বাচনের আগে

সন্তানেরা বড় হয়ে কী পড়বে, কোন পেশায় যুক্ত হবে—একসময় ছোটবেলায়ই সেসব সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতেন মা-বাবা কিংবা পরিবারের সদস্যরা। এখনো সেই চল আছে। তবে সময় বদলেছে। শিক্ষার্থীরা এখন নিজের পছন্দ, আগ্রহকে গুরুত্ব দিয়ে বিষয় বেছে নিতে চান। পছন্দ-আগ্রহ, এসবের পাশাপাশি আর কী কী মাথায় রাখা দরকার?

কোন বিশ্ববিদ্যালয়, কোন বিষয়

ভালো বিষয়ে পড়তে দরকার ভালো পরিবেশ। এ জন্য পছন্দসই বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা করে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহবুবুল ইসলাম। তিনি কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদের শেষ বর্ষে পড়ছেন। তাঁর মতে, ‘বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় এখন গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়। ফলে ভর্তি-ইচ্ছুকদের বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন এবং বিষয় নির্বাচন, দুটির মধ্য দিয়েই যেতে হয়। আমি দুটোকেই সমান প্রাধান্য দেওয়া উচিত বলে মনে করি।

দুইয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকতে হবে।’ ধরুন, অল্প পরিচিতি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনি পছন্দের বিষয়ে সুযোগ পেয়ে গেলেন। আবার পছন্দের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেলেন অল্প পরিচিত কোনো বিষয়ে। কোনটা বেছে নেবেন? মাহবুবুল এই সামঞ্জস্যের কথাই বলছেন। এসব ক্ষেত্রে নিজের আগ্রহকে গুরুত্ব দিতে পারেন।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মিনহাজুল আবেদীন যেমন মনে করেন, পড়ার বিষয়টা ভালো লাগা খুব জরুরি। পড়ালেখায় আনন্দ না পেলে অনেকে বুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পেয়েও হতাশায় পড়ে যান। এমনটা যেন না হয়।

কোথায় আমার আনন্দ

বলা হয়, আনন্দ নিয়ে করলে কাজকে কখনোই ‘কাজ’ মনে হয় না। বিষয় নির্বাচনের সময়ও এই তত্ত্ব মাথায় রাখতে পারেন।

এ প্রসঙ্গেই কথা হচ্ছিল কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ক্যালগেরির স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী সপ্তর্ষি পালের সঙ্গে। বললেন, ‘পেশা এমন হওয়া উচিত, যা আমাকে দিন শেষে আনন্দ দেবে। এ রকম পেশা পাওয়ার জন্য স্নাতকে নিজের পড়ার বিষয় বাছতে হবে সাবধানে। মাধ্যমিক থেকেই আমি যেমন বোঝার চেষ্টা করতাম, কোন ধরনের বিষয়গুলোতে আমি সহজাতভাবে ভালো করছি। ধীরে ধীরে এই ভালো লাগার পরিধি ছোট করতে হবে। যেমন বিজ্ঞান থেকে প্রকৌশল, প্রকৌশল থেকে ইইই...’

অবশ্য যে বিষয়ে পড়ছি, তাতেই পেশা গড়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই; বরং অনেক সময় খুব যাচাই–বাছাই করে পড়াশোনা শুরু করলেও মাঝপথে অন্য কোনো বিষয় ভালো লেগে যেতে পারে। আগ্রহ ও কঠোর পরিশ্রমের সঙ্গে দক্ষতার সমন্বয় করাটাই দিন শেষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

পড়তে পারেন সৃজনশীল বিষয়ে

ইদানীং সৃজনশীল নানা বিষয়ের প্রতিও শিক্ষার্থীরা আগ্রহী হচ্ছেন। চারুকলা থেকে শুরু করে ফ্যাশন ডিজাইন কিংবা ফটোগ্রাফি নিয়েও অনেকে পড়তে চান। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই মা-বাবা কিংবা সমাজ এ ধরনের বিষয়ে ঠিক ‘ভরসা’ পান না।

বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউএফটি) সহ–উপাচার্য অধ্যাপক আইয়ুব নবী খান অবশ্য সাহস জোগালেন। তাঁর মতে, ‘বিষয় নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের অনেকেরই পরিষ্কার ধারণা থাকে না। এই ধারণা জন্মানোর জন্য ইন্টারনেটে খোঁজখবর নিতে হবে। মিডিয়ায় চোখ রাখা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ঘাঁটাও কাজে দেয়। এসব কাজ করলে দেশে ও দেশের বাইরের চাকরির ক্রমবর্ধমান চাহিদা সম্পর্কে ধারণা হবে। আমি যখন টেক্সটাইলে পড়েছি, তখন যেমন এটা নতুন বিষয় ছিল।

একইভাবে, ফ্যাশন ডিজাইন এখন একটি নতুন বিষয়। এখানে অনেক সম্ভাবনা আছে। বর্তমানে তৈরি পোশাকশিল্প খাতে বাইরের ডিজাইনাররা নকশা করে, আমরা শুধু কাপড় বানাই। নিজস্বতা নেই। অথচ আমরা এটাও করতে পারি। এই সেক্টরকে এগিয়ে নিতে মেধাবী তরুণদের আসতে হবে। পাশাপাশি অভিভাবকদের সন্তানের চাওয়ার ব্যাপারে আরও সচেতন হতে হবে।’

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের অধ্যাপক মোহাম্মদ নুরুল হুদা জোর দিলেন সময়োপযোগী বিষয় বাছাইয়ের ওপর। তাঁর বক্তব্য, ‘একসময় ইলেকট্রিক্যালে অনেকে শিক্ষার্থী পড়ত। এখন চাহিদা অনেক কমেছে। ডেটা সায়েন্সসহ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়ে চাহিদা বেড়েছে। আমি মনে করি, দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এ ধরনের আধুনিক বিষয়ে পড়া উচিত। কারণ, সামনের যুগ হবে কম্পিউটার প্রকৌশল, মেশিন লার্নিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের। এগুলোর চাহিদা থাকবে বহুদিন। হয়তো ভিন্ন শাখা সৃষ্টি হবে, নামে বৈচিত্র্য আসবে, কিন্তু হারিয়ে যাবে না।’

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow