রাজনৈতিক ঐকমত্য থাকলে সংবিধান কোনো বাধা নয়
বিগত স্বৈরাচারী সরকার জুলাই–আগস্ট মাসে সশস্ত্র পন্থায় ছাত্র–জনতার আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করেছিল। এতে শত শত মানুষ প্রাণ হারান, হাজার হাজার মানুষ আহত হন। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
বিগত স্বৈরাচারী সরকার জুলাই–আগস্ট মাসে সশস্ত্র পন্থায় ছাত্র–জনতার আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করেছিল। এতে শত শত মানুষ প্রাণ হারান, হাজার হাজার মানুষ আহত হন। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। সে সময় রাষ্ট্রপতি দেশবাসীকে জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এবং তিনি তা গ্রহণ করেছেন।
এরপর রাষ্ট্রপতি নতুন সরকার গঠনের বিষয়ে সাংবিধানিক ব্যাখ্যা চেয়ে সংবিধানের ১০৬ ধারায় সুপ্রিম কোর্টের কাছে একটি রেফারেন্স পাঠান। সেই রেফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন, এমন কথা উল্লেখ করে তিনি সৃষ্ট পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের কাছে জানতে চান। সুপ্রিম কোর্ট মত দেন, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন, তাই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে তাঁর সরকার শপথ নেয়।
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র তিনি পাননি—সরকার গঠনের আড়াই মাস পর রাষ্ট্রপতির এমন কথা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। তাঁর এ কথা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এবং আন্দোলনকারী ছাত্রদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তাঁরা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভও করেছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রাষ্ট্রপতির অপসারণ বা পদত্যাগের সাংবিধানিক বা আইনগত প্রক্রিয়াটা কী?
সংবিধান অনুসারে, সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় সংসদের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন (অপসারণ) করা যায়। কিন্তু বর্তমানে কোনো সংসদ বহাল নেই। তাই সংবিধান অনুসারে তাঁকে অভিশংসন করার কোনো সুযোগ নেই।
রাষ্ট্রপতি যদি তাঁর শপথ ভঙ্গ করেন বা তাঁর পদের জন্য অনুপযুক্ত হয়ে পড়েন, তাহলে তিনি নিজে থেকেও পদত্যাগ করতে পারেন। কিন্তু তিনি যদি সেটাও না করেন, তাহলে কী হবে?
মনে রাখতে হবে, বর্তমানে দেশে একটি বিশেষ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গণ–অভ্যুত্থানের পর একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে। একটি গণ–অভ্যুত্থান যখন সফল হয়, তখন সেটা নিজেই তার বৈধতা সৃষ্টি করে। সংবিধান, প্রচলিত রীতিনীতি বা আইনকানুন তখন অকেজো এবং অকার্যকর হয়ে যায়।
এ রকম অবস্থায় পুরোনো পদ্ধতির পরিবর্তে নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে। যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, তাঁরা বিদ্যমান সংবিধানকে পুরোপুরি বা আংশিক গ্রহণ বা বর্জনও করতে পারেন। সে পদ্ধতি অনুসারেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সৃষ্টি এবং কার্যকর হয়েছে।
একই কথা রাষ্ট্রপতির অপসারণ বা পদত্যাগের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তিনি যদি নিজে থেকে পদত্যাগ না করেন, তাহলে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রপতিকে অব্যাহতি দিয়ে আদেশ জারি করতে পারে।
রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগের আদেশ দেওয়ার আইনগত বৈধতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে কি না, সেটি একটি বিবেচনার বিষয়। এ ক্ষেত্রে সমাধান হলো, পরবর্তী নির্বাচিত সংসদে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের এই আদেশকে বৈধতা দিতে হবে। শুধু রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ নয়, একইভাবে সরকারের সব কাজেরই পরবর্তী সংসদ কর্তৃক বৈধতা দানের প্রয়োজন পড়বে বলে আমি মনে করি।
এ কারণে সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে এবং রাজনৈতিক ঐকমত্যের প্রয়োজন হবে। রাজনৈতিক ঐক্যমত থাকলে সংবিধান বা আইন কখনো কোনো কাজে অন্তরায় বা বাধা হতে পারে না। বাংলাদেশের ইতিহাসেও এ রকম ঘটনার উদাহরণ রয়েছে। সংবিধানের একাদশ ও দ্বাদশ সংশোধনী সেভাবেই হয়েছিল।
What's Your Reaction?