ক্ষমা চেয়ে অভিশংসন ঠেকাতে পারবেন কি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট?

গত মঙ্গলবার আকস্মিকভাবে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল দেশকে রক্ষার অজুহাতে সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেন। তিনি জানান, এটি রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি এবং উত্তর কোরিয়ার হুমকি মোকাবিলায় প্রয়োজন। তবে বক্তৃতায় এই দুই বিষয় সম্পর্কে কোনো বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি, এবং উত্তর কোরিয়া থেকে কোনো হুমকির বিষয়টিও নির্ভরযোগ্য সূত্রে নিশ্চিত হয়নি।

Dec 7, 2024 - 09:43
 0  2
ক্ষমা চেয়ে অভিশংসন ঠেকাতে পারবেন কি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট?

দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারি ও প্রত্যাহার: প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলের ক্ষমা প্রার্থনা

গত মঙ্গলবার আকস্মিকভাবে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল দেশকে রক্ষার অজুহাতে সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেন। তিনি জানান, এটি রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি এবং উত্তর কোরিয়ার হুমকি মোকাবিলায় প্রয়োজন। তবে বক্তৃতায় এই দুই বিষয় সম্পর্কে কোনো বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি, এবং উত্তর কোরিয়া থেকে কোনো হুমকির বিষয়টিও নির্ভরযোগ্য সূত্রে নিশ্চিত হয়নি।

সামরিক আইন নিয়ে বিক্ষোভ ও প্রত্যাহার

সামরিক আইন ঘোষণার পরপরই দেশব্যাপী তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। বিরোধী দলের আহ্বানে সংসদ সদস্যরা সেনাবাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে সংসদে একত্রিত হন এবং সামরিক আইনের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব পাস করেন। জনরোষ এবং রাজনৈতিক চাপের মুখে প্রেসিডেন্ট কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন।

প্রেসিডেন্টের ক্ষমা চাওয়া ও প্রতিক্রিয়া

শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট ইউন সামরিক আইন জারির জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেন,

"দেশে সামরিক আইন ঘোষণার জন্য আমি খুবই দুঃখিত এবং আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।"

তিনি আরও বলেন,

"আরেকবার সামরিক আইন জারি করার কোনো পরিকল্পনা নেই। এই ঘোষণার আইনি ও রাজনৈতিক দায় থেকে আমি নিজেকে মুক্ত রাখতে পারি না।"

যদিও অনেকেই ধারণা করেছিলেন, তিনি এ ভাষণে পদত্যাগের ঘোষণা দেবেন। তবে ইউন সুক-ইওল বলেন, পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে ক্ষমতাসীন দলের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করবেন।

অভিশংসন ও রাজনৈতিক অস্থিরতা

শনিবার প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের বিষয়ে পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হবে। ৩০০ আসনের সংসদে অভিশংসন প্রস্তাব পাস হতে ২০০ ভোট প্রয়োজন। প্রেসিডেন্টের দল পিপল পাওয়ার পার্টি (পিপিপি) এর রয়েছে ১০৮টি আসন। বিরোধী দলকে প্রস্তাব পাস করতে সরকারদলের অন্তত আটজন সদস্যের সমর্থন দরকার।

বিরোধীদের কড়া সমালোচনা

বিরোধীরা প্রেসিডেন্টের ক্ষমা চাওয়াকে অসম্পূর্ণ এবং দেরিতে নেওয়া পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার সাধারণ নাগরিক হ্যান জাঙ্গমো বলেন,

"ক্ষমা চাওয়াই যথেষ্ট নয়, প্রেসিডেন্টকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। একজন অযোগ্য ব্যক্তি জনগণের আস্থা ভঙ্গ করে প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য নন।"

গণতন্ত্রের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা

১৯৮৭ সালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর দক্ষিণ কোরিয়ায় এ ধরনের সামরিক আইন জারির ঘটনা ছিল সম্পূর্ণ অকল্পনীয়। ৫০ বছর পর এই পদক্ষেপে দেশজুড়ে হতাশা এবং ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

পরবর্তী পরিস্থিতি কী হতে পারে?

পিপিপি নেতা চু কিয়ং-হো বলেছেন, তার দলের সদস্যরা অভিশংসনের বিপক্ষে ভোট দেবেন। তবে সামরিক আইন জারির পর তাদের অবস্থান কতটা টিকে থাকবে, সেটি সময়ই বলে দেবে।

ক্ষমতাসীন দলের ভেতর থেকেও বিরোধিতা উঠে এসেছে। দলীয় এক নেতা বলেন,

"প্রেসিডেন্টের পক্ষে দায়িত্ব পালন চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব। তার পদত্যাগ অনিবার্য।"

উপসংহার

সামরিক আইন জারি এবং তা প্রত্যাহার নিয়ে দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতা গভীর হয়েছে। এখন পার্লামেন্টের ভোটাভুটির ফল এবং প্রেসিডেন্টের পরবর্তী পদক্ষেপ দক্ষিণ কোরিয়ার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নির্ধারণ করবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow