আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে বঞ্চিত ৭৬৪ কর্মকর্তাকে পদোন্নতির সুপারিশ করেছে
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত ১৫ বছরে জনপ্রশাসনে বঞ্চিত দাবি করে যেসব কর্মকর্তা আবেদন করেছিলেন তাঁদের মধ্যে থেকে ৭৬৪ জনকে পদোন্নতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে এ সংক্রান্ত কমিটি। উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে এসব কর্মকর্তাকে পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত ১৫ বছরে জনপ্রশাসনে বঞ্চিত দাবি করে যেসব কর্মকর্তা আবেদন করেছিলেন তাঁদের মধ্যে থেকে ৭৬৪ জনকে পদোন্নতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে এ সংক্রান্ত কমিটি। উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে এসব কর্মকর্তাকে পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
অবসরপ্রাপ্ত ও মারা যাওয়ায় এসব সরকারি কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। পূর্বের বা অতীতের কোনো তারিখ থেকে কোনো বিষয় কার্যকর করা হলে তাকে ‘ভূতাপেক্ষ’ বলা হয়ে থাকে।
জনপ্রশাসনে পদোন্নতিবঞ্চিত অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আবেদন পর্যালোচনা কমিটি আজ মঙ্গলবার তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, কমিটির প্রধান জাকির আহমেদ খান অন্যান্য সদস্যের উপস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ প্রতিবেদনটি পেশ করেছেন।
এর আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত ১৬ সেপ্টেম্বর সাবেক অর্থসচিব এবং বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের সাবেক বিকল্প নির্বাহী পরিচালক জাকির আহমেদ খানকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছিল।
আওয়ামী লীগ আমলে ২০০৯ সাল থেকে গত ৪ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে সরকারি চাকরিতে নানাভাবে বঞ্চনার শিকার এবং এই সময়ের মধ্যে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের আবেদন পর্যালোচনা করে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য এই কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটিকে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। তার আগেই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি।
নির্ধারিত ৯০ দিনের আগেই প্রতিবেদন জমা দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টা কমিটির সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন বলে জানায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, নির্ধারিত সময়ে মারা যাওয়া কর্মকর্তাদের পক্ষে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের করা ১৯টি আবেদনসহ মোট ১ হাজার ৫৪০টি আবেদন জমা পড়েছিল। এর মধ্যে ১৩টি আবেদন নানা কারণে কমিটির আওতার বাইরে ছিল। ফলে কমিটি বাকি ১ হাজার ৫২৭টি আবেদন যাচাই-বাছাই করে সুপারিশ তৈরি করেছে। আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করার জন্য কমিটি মোট ২৮টি সভা করে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে সুপারিশ প্রণয়ন করেছে, যা প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, কমিটি যাদের পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করেছে তাদের মধ্যে সচিব পদে ১১৯ জন, গ্রেড-১ (সচিবের সমান বেতন গ্রেড) পদে ৪১ জন, অতিরিক্ত সচিব পদে ৫২৮ জন, যুগ্ম সচিব পদে ৭২ জন এবং উপসচিব পদে ৪ জন কর্মকর্তা। যেহেতু তাঁরা অবসরে গেছেন, সে জন্য তাঁদের ‘ভূতাপেক্ষভাবে’ পদোন্নতি দেওয়া যেতে পারে বলে সুপারিশ করেছে কমিটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করা ৭৬৪ জন কর্মকর্তার মধ্যে কমিটি ৯ জনকে ৪ ধাপ, ৩৪ জনকে ৩ ধাপ, ১২৬ জনকে ২ ধাপ এবং ৫৯৫ জনকে একধাপ পদোন্নতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
অন্যদিকে আবেদন করা ৭৬৩ জন কর্মকর্তাকে কমিটি পদোন্নতির সুপারিশ করেনি। তাঁদের কেন পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়নি প্রতিটি ক্ষেত্রে তার সুনির্দিষ্ট কারণও উল্লেখ করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায়নি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রশাসনের ‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিচ্ছে সরকার। গত ১৮ আগস্ট একসঙ্গে ২০১ জনকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। তারও আগে ১৩ আগস্ট উপসচিব পদে পদোন্নতি পান ‘বঞ্চিত’ ১১৭ কর্মকর্তা। যুগ্ম সচিব ও উপসচিবের পাশাপাশি গত ২৫ আগস্ট অতিরিক্ত সচিব পদে ১৩১ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান জানিয়েছেন জনপ্রশাসনে উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব এবং যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে আবারও পদোন্নতি দেওয়া হবে। আর ‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তাদের মধ্যে যাঁরা পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত সচিব হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে যাঁদের চাকরির বয়স শেষ পর্যায়ে, তাঁদের গ্রেড-১ দেওয়া হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আরও জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসক নিয়োগের জন্য আবারও বাছাই তালিকা (ফিট লিস্ট) করা হবে। তাঁদের মধ্যে থেকে নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
What's Your Reaction?