চিত্রা হরিণের দৌড়ানো ও অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত প্রাকৃতিক দৃশ্য
ভোলার চর কুকরি-মুকরি তাড়ুয়ার দ্বীপে অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দর্শনে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক ছুটে আসছেন। সাগরের নির্মল হিমেল হাওয়া, গহীন সবুজ বন, চিত্রা হরিণের ছুটে চলা এবং অতিথি পাখির কলকাকলি—এমন এক অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করতে প্রকৃতিপ্রেমীরা এখানে ভিড় করছেন।
ভোলার চর কুকরি-মুকরি তাড়ুয়ার দ্বীপে অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দর্শনে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক ছুটে আসছেন। সাগরের নির্মল হিমেল হাওয়া, গহীন সবুজ বন, চিত্রা হরিণের ছুটে চলা এবং অতিথি পাখির কলকাকলি—এমন এক অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করতে প্রকৃতিপ্রেমীরা এখানে ভিড় করছেন।
কিছু সময়ের জন্য হলেও ইট-পাথরের ব্যস্ত জীবন থেকে মুক্তি পেতে, প্রকৃতির সাথে সখ্যতা গড়তে আসছেন মানুষ। কুকরি-মুকরির শান্ত পরিবেশে ঘুরে বেড়িয়ে তারা প্রশান্তি খুঁজে পাচ্ছেন। তবে প্রতিবছর পর্যটকের সংখ্যা বাড়লেও, এখানকার কাঙ্ক্ষিত সুযোগ-সুবিধা তেমন উন্নত হয়নি। বিশেষত যোগাযোগ ব্যবস্থা, পরিবহন এবং অন্যান্য মৌলিক সেবার অভাবে পর্যটকদের পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে।
এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন এবং বন বিভাগের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
**কুকরি-মুকরির অপূর্ব সৌন্দর্য**
জেলা শহর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণে সাগরের কোল ঘেঁষে ৮০০ বছর পুরনো দ্বীপ কুকরি-মুকরি। সাগরের মাঝখানে এক টুকরো সবুজ ভূখণ্ড মনে হয় এটি। সাগরের পানি, সবুজ বন এবং বন্যপ্রাণীর মেলা দেখতে চাওয়া পর্যটকরা প্রায়ই এখানে আসেন। খালের দুপাশে চিত্রাহরিণ এবং বন মোরগসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর দেখা মেলে। এছাড়া, প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তাড়ুয়া সৈকত তীর এবং দিগন্তজোড়া আকাশের মেলবন্ধনে চোখজুড়ানো দৃশ্য দেখতে পান পর্যটকরা। এখানকার অতিথি পাখির কলকাকলি পর্যটকদের মন কেড়ে নেয়।
**পর্যটকদের মুগ্ধতা**
খুলনা থেকে সপরিবারে আসা এক ব্যবসায়ী পরিবার জানান, "প্রকৃতির এত সুন্দর রূপ আর কোথাও দেখিনি। নারিকেল বাগান থেকে ম্যানগ্রোভ বন পর্যন্ত জায়গাটি সত্যিই মনোমুগ্ধকর।" পর্যটকদের কাছে নারিকেল বাগান, কুকরি-মুকরি দ্বীপের সবুজ বনায়ন এবং তাড়ুয়া সৈকত অত্যন্ত জনপ্রিয়। এ স্থানটি খুবই আকর্ষণীয়, যেখানে দাঁড়িয়ে সাগরের শুভ্র সাদা মেঘ এবং আকাশের বিশালতা দেখতে পাওয়া যায়।
এছাড়া, সাগরের নোনা জলে গা ভেজানো এবং খেলাধুলায় অংশ নিয়ে পর্যটকরা আনন্দের সময় কাটান। তাঁবু খাটিয়ে রাত কাটিয়ে সকালবেলা পাখির কিচির-মিচির ডাকে ঘুম ভাঙে। সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যও দর্শকদের বিশেষ আকর্ষণ।
**পর্যটন সেবার উন্নতি জরুরি**
ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে আসা চাকরিজীবী সোহেল চৌধুরী জানান, "অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলো কৃত্রিমভাবে সাজানো হলেও, কুকরি-মুকরি চর প্রকৃতির স্বাভাবিক সৌন্দর্য রক্ষা করেছে। এখানকার সুন্দর পরিবেশ আমাকে মুগ্ধ করেছে। তবে, যাতায়াত ব্যবস্থা এবং পর্যটকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। তাহলেই আরও বেশি পর্যটক আসবে।"
এখানে ২০১৮ সালে ইকোপার্ক স্থাপন করা হয়, যা স্থানীয় পর্যটন খাতের উন্নতির একটি নতুন সূচনা। স্থানীয় প্রশাসন এবং বন বিভাগ পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সেবার মান উন্নয়নে কাজ করছে।
**এলাকা ও পর্যটকের সংখ্যা**
কুকরি-মুকরি চর ভোলার জেলা সদর থেকে ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতি বছর লক্ষাধিক পর্যটক এখানে আসেন। চলতি ডিসেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহে প্রায় ৪০ হাজার পর্যটক এই দ্বীপে ভ্রমণ করেছেন।
এদিকে, এই অঞ্চলে পর্যটন নির্ভর কর্মসংস্থান গড়ে তোলার জন্য সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, যাতে এখানকার প্রকৃতি এবং সৌন্দর্য আরও বেশি পর্যটকদের কাছে পৌঁছাতে পারে।
What's Your Reaction?