নিষিদ্ধ এলাকায় চলছে গাড়ির হর্ন, নেই কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ
ঢাকার তিনটি বিশেষ এলাকা—সচিবালয়, আগারগাঁও সংসদ ভবন এবং হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকা—যেগুলিকে নীরব এলাকা (সাইলেন জোন) ঘোষণা করা হয়েছিল, সেখানে হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ হলেও, বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি।
ঢাকার তিনটি বিশেষ এলাকা—সচিবালয়, আগারগাঁও সংসদ ভবন এবং হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকা—যেগুলিকে নীরব এলাকা (সাইলেন জোন) ঘোষণা করা হয়েছিল, সেখানে হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ হলেও, বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। নিয়মিতভাবে হর্ন বাজানোর জন্য চালকরা তো কোনো ভাবেই বিরত হচ্ছেন না, বরং সাইনবোর্ড বা ঘোষণা নিয়ে কোন আগ্রহও দেখা যায় না। সড়কের পাশে থাকা সাইনবোর্ড ছাড়া এসব এলাকায় কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেই, এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দৃশ্যমান তৎপরতা নেই। যদিও সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, তারা নিয়মিত হর্ন বাজানো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন।
এছাড়া গত ১৪ নভেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) নগরীর স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল ও আবাসিক এলাকায় হর্ন না বাজানোর জন্য নির্দেশনা দেয়, কিন্তু বাস্তবে এই নির্দেশনা কার্যকর হয়নি। ঢাকার বিভিন্ন সড়ক এবং নীরব এলাকাগুলোতে চলা গাড়িতে হর্ন বাজানোর চিত্র দেখে মনে হয়, এসব নির্দেশনা কেবল কাগজেই সীমাবদ্ধ।
এটি আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে যখন বৃহস্পতিবার রাতে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকায় রাইদা, গ্রেট তুরাগ এবং ভিক্টর পরিবহণের বাসগুলোকে হর্ন বাজাতে দেখা যায়। যদিও বিমানবন্দর এলাকা একসময় হর্নমুক্ত নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল, বাস্তবে সেখানেও নিয়ম ভাঙছে। বিমানবন্দর এলাকা এবং এর আশেপাশে প্রায় তিন কিলোমিটার জুড়ে ১ অক্টোবর থেকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয়, কিন্তু সেই এলাকার বাস্তব চিত্র ভিন্ন।
এদিকে, বিমানবন্দর এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা বাসের চালকরা নিজেদের অজুহাতে বলেন, "এই এলাকায় যে হর্ন বাজানো যাবে না, তা আমাদের কেউ জানায়নি। হর্ন বাজানো ছাড়া গাড়ি চালানো প্রায় অসম্ভব।" অন্যান্য চালকরা জানিয়েছেন, তাদের কাছে এটি একটি অভ্যাস হয়ে গেছে এবং সামনে গাড়ি থাকলেই তারা হর্ন বাজান।
ঢাকার সচিবালয়, পল্টন মোড় এবং অন্যান্য সড়কেও হর্ন বাজানোর একই দৃশ্য দেখা গেছে। সচিবালয় এলাকা ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হলেও, নিয়ম ভাঙা থেমে নেই। পল্টন মোড়ে এক মোটরসাইকেল চালক জানান, “এলাকার সড়ক ব্যবস্থার কারণে হর্ন বাজানো ছাড়া কোনো উপায় নেই।”
এ বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, “আমরা প্রতিনিয়ত হর্ন বাজানো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি, কিন্তু আমাদের হাতে কোনো কার্যকরী ক্ষমতা নেই। শুধু জনসচেতনতা বাড়ানোর প্রচারণা চালানো হচ্ছে।”
এদিকে, পরিবেশ অধিদপ্তরও বিভিন্ন নীরব এলাকা সম্পর্কে জানাচ্ছে, তাদের নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা এবং গাড়িচালকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। তবে বাস্তবে এসব পদক্ষেপের ফলাফল তেমন দেখা যাচ্ছে না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সৈয়দা মাসুমা খাতুন বলেন, "ঢাকায় কয়েকটি এলাকা সাইলেন জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে অতিরিক্ত শব্দ নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করা হচ্ছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই আমরা লক্ষ্য করেছি যে, নির্ধারিত শব্দমাত্রা অতিক্রম করা হচ্ছে।"
শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ অনুযায়ী, নীরব এলাকায় নির্দিষ্ট শব্দ মাত্রা অতিক্রম করলে শাস্তির বিধান রয়েছে, যা অনুযায়ী প্রথমবার ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা এক মাস কারাদণ্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা ছয় মাসের কারাদণ্ড হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এসব নিয়ম যথাযথভাবে প্রয়োগ না হওয়ায় রাজধানীজুড়ে শব্দ দূষণ নিয়ে সমস্যা বাড়ছে।
What's Your Reaction?