বাংলাদেশে গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা পেয়েছে কমিশন

দুই দেশের বন্দি বিনিময় এবং আটক ব্যক্তিদের সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে গোয়েন্দা তথ্য তুলে ধরতে গিয়ে একটি কমিশন তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ‘‘বাংলাদেশে গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা বর্তমানে একটি আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’ খবর বাসসের।

Dec 22, 2024 - 05:54
 0  0
বাংলাদেশে গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা পেয়েছে কমিশন

**বাংলাদেশে গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা: কমিশনের প্রতিবেদনে নতুন তথ্য**

দুই দেশের বন্দি বিনিময় এবং আটক ব্যক্তিদের সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে গোয়েন্দা তথ্য তুলে ধরতে গিয়ে একটি কমিশন তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ‘‘বাংলাদেশে গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা বর্তমানে একটি আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’ খবর বাসসের।

সাবেক বিচারপতি মাইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিশন সম্প্রতি ‘‘সত্য উদঘাটন’’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করেছে।

কমিশন জানায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে এ বিষয়ে এক জোরালো ধারণা রয়েছে যে, কিছু বন্দি এখনও ভারতের জেলে আটক রয়েছেন। কমিশন পররাষ্ট্র এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে, তারা যেন ভারতে এখনও আটক বাংলাদেশি নাগরিকদের খোঁজখবর নেয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘বাংলাদেশে গুমের ঘটনায় ভারতের যোগসাজশ’’—এই বিষয়টি বোঝার জন্য দুটি বহুল আলোচিত ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে, যা গুমের কার্যক্রমের প্রকৃতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ সরবরাহ করে।

এই ঘটনার একটি হলো সুখরঞ্জন বালির, যিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে অপহৃত হয়ে ভারতীয় কারাগারে উপস্থিত হন। অন্যটি হলো বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের ঘটনা, যিনি ২০১৫ সালে উত্তরায় লুকিয়ে থাকাকালে আটক হন। সালাহউদ্দিন জানান, তাকে একটি পরিত্যক্ত সেলে বন্দী রাখা হয়েছিল, যেখানে টয়লেট হিসেবে ব্যবহৃত গর্ত ছিল। তিনি অভিযোগ করেন, তাকে দেওয়া কম্বলটির উপর ‘‘টিএফআই’’ অক্ষর ছিল, যা ‘‘টাস্ক ফোর্স ফর ইন্টারোগেশন’’ (TFI) নির্দেশ করে।

কমিশন জানায়, র‍্যাব গোয়েন্দা শাখা এই ‘‘টিএফআই’’ কেন্দ্র পরিচালনা করত, যা র‍্যাব সদর দফতরের অধীনে থাকলেও ঢাকার উত্তরায় র‍্যাব ১ ব্যাটালিয়ন সদর দফতরের একটি প্রাচীরঘেরা স্থানে অবস্থিত ছিল। এই স্থাপনাটি পরিদর্শন করে কমিশন নিশ্চিত হয়েছে যে, র‍্যাব গোয়েন্দা শাখা এখনও ওই স্থাপনার প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করে এবং এর চাবি তাদের হাতে রয়েছে। তবে, সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো ধ্বংস করা হয়েছে।

কমিশন আরও জানায়, ‘‘প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে যে সালাহউদ্দিন আহমেদ ওই ধ্বংসপ্রাপ্ত সেলের একটিতে বন্দী ছিলেন।’’ তিনি জানান, তাকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে তাকে ভারতীয় কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘এই হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিক প্রকৃতি এবং এই সময়ের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি স্পষ্ট করে, যে দুই দেশের সরকারের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সমন্বয়ের মাধ্যমেই এ ঘটনা ঘটেছিল।’’

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, র‍্যাব গোয়েন্দা শাখায় নিয়োজিত সেনা সদস্যদের সাক্ষাৎকারে জানা গেছে, ২০১১ সালে তামাবিল সীমান্তের মাধ্যমে ভারত থেকে তিনটি পৃথক বন্দী গ্রহণের সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) উপস্থিত ছিল। এক ঘটনার পর রাস্তার পাশে বন্দীদের হত্যা করা হয়, অন্য ঘটনার পরে জীবিত বন্দীকে বাংলাদেশের হাতে হস্তান্তর করা হয়।

কমিশন জানায়, ‘‘এ ধরনের আনুষ্ঠানিক নিরাপত্তা পরিষেবা সমন্বয় গুমের ঘটনাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক এবং আন্তঃসীমান্ত প্রকৃতি নির্দেশ করে।’’ তবে কমিশন আরও বিশ্লেষণ চায়, বিশেষ করে ভারতের কতটা সম্পৃক্ততা ছিল এবং দু’দেশের জন্য এর কী তাৎপর্য তা বুঝতে আরও বিস্তারিত পর্যালোচনা প্রয়োজন। 

এভাবে, এই কমিশনের প্রতিবেদন নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের ভূমিকা এবং দুই দেশের মধ্যে বন্দি বিনিময়ের সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উন্মোচন করেছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow