ডায়াবেটিস হঠাৎ বেড়ে গিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে, কীভাবে জানেন

ধরা যাক, কোনো কারণে আপনার শরীরে ইনসুলিনের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে এবং রক্তের শর্করা বিপজ্জনক মাত্রায় বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে শরীরে আকস্মিক কিছু পরিবর্তন ঘটে। প্রথমেই বিপাকক্রিয়া বা মেটাবলিক সিস্টেমে বিপর্যয় আসে, কারণ গ্লুকোজ আমাদের শরীরের শক্তির প্রধান উৎস। রসায়নের ছাত্ররা জানেন যে গ্লুকোজ ক্রেবস চক্রের মাধ্যমে শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে আমাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম চালিয়ে যায়।

Nov 14, 2024 - 05:13
Nov 14, 2024 - 05:14
 0  1
ডায়াবেটিস হঠাৎ বেড়ে গিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে, কীভাবে জানেন
ইনসুলিনের অভাবে গ্লুকোজ ভেঙে শক্তি উৎপাদনের কাজ বন্ধ হয়ে যায় l

ডায়াবেটিক কিটো অ্যাসিডোসিস: বিপজ্জনক অবস্থা ও করণীয়

ধরা যাক, কোনো কারণে আপনার শরীরে ইনসুলিনের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে এবং রক্তের শর্করা বিপজ্জনক মাত্রায় বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে শরীরে আকস্মিক কিছু পরিবর্তন ঘটে। প্রথমেই বিপাকক্রিয়া বা মেটাবলিক সিস্টেমে বিপর্যয় আসে, কারণ গ্লুকোজ আমাদের শরীরের শক্তির প্রধান উৎস। রসায়নের ছাত্ররা জানেন যে গ্লুকোজ ক্রেবস চক্রের মাধ্যমে শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে আমাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম চালিয়ে যায়। তবে ইনসুলিনের অভাবে গ্লুকোজ শক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে না, এবং শরীর তখন চর্বির কোষ ভেঙে শক্তি উৎপাদনের চেষ্টা করে।

কিন্তু যখন চর্বি কোষ ভেঙে ভেঙে একসময় প্রচুর পরিমাণে ফ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড জমা হয়ে যায়, তখন যকৃত তা প্রক্রিয়া করতে সক্ষম হয় না। ফলে অতিরিক্ত ফ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রূপান্তরিত হতে থাকে কিটো অ্যাসিডে, যা রক্তে জমা হলে পিএইচ কমিয়ে দেয় এবং রক্তে অ্যাসিডিটির মাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলে রোগী অচেতন হয়ে পড়ে এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। যথাসময়ে চিকিৎসা না হলে, এটি মৃত্যুর কারণও হতে পারে।

রক্তের পিএইচ সাধারণত ৭.৩৪ থেকে ৭.৪৫ পর্যন্ত থাকে, এবং এই ক্ষীণ সীমার বাইরে পিএইচ কমে গেলে শরীরের কার্যক্রম বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। পিএইচ যদি ৭ এর নিচে চলে যায়, তাহলে রোগীকে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতি ডায়াবেটিক কিটো অ্যাসিডোসিস নামে পরিচিত, যা টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।

কিটো অ্যাসিডোসিস কেন হয়?

টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসে অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ইনসুলিন তৈরি বন্ধ হয়ে যায়। ৭০ শতাংশ কোষ নষ্ট হলে শরীর গ্লুকোজ থেকে শক্তি উৎপাদন করতে পারে না এবং শরীর চর্বি ভেঙে শক্তি উৎপাদনের চেষ্টা শুরু করে। এর ফলে বিপুল পরিমাণে কিটো অ্যাসিড তৈরি হয়। এছাড়া, যদি টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস রোগী কিছু সময় বা ভুলবশত ইনসুলিন বন্ধ রাখে, অথবা টাইপ টু ডায়াবেটিসের রোগী চিকিৎসা না নেন, তখনও এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সংক্রমণ, সার্জারি, বমি, ডিহাইড্রেশন এবং প্রেগন্যান্সি এই সমস্যাকে আরো খারাপ করতে পারে।

কীভাবে বুঝবেন?

রক্তে শর্করা অনেক বেড়ে গেলে গ্লুকোমিটার এর মাধ্যমে সাধারণত তা মাপা সম্ভব হয় না, যেহেতু গ্লুকোমিটার ৩০ মিলিমোল/লিটার উপরে শর্করা পরিমাপ করতে পারে না এবং 'হাই' বা 'এরর' দেখায়। এ সময় রোগী গলা শুকিয়ে যাওয়া, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া এবং মারাত্মক পানিশূন্যতায় ভুগতে থাকে। পিএইচ পরিবর্তিত হলে রোগী অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকে এবং অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। কেউ কেউ অচেতন হয়ে পড়তে পারে।

মুখের শ্বাস থেকে অ্যাসিটোনের গন্ধ আসা এবং শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়া এই পরিস্থিতির অন্যান্য লক্ষণ। শ্বাসকষ্টের একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্ন থাকে, যা ‘কুসমাউলস ব্রিদিং’ নামে পরিচিত। এছাড়াও, রক্তচাপ দ্রুত কমে যেতে পারে এবং রেসপিরেটরি ফেইলিওর হতে পারে। এসব পরিস্থিতিতে রোগীকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র ছাড়া চিকিৎসা করা প্রায় অসম্ভব।

কী করবেন?

ডায়াবেটিক কিটো অ্যাসিডোসিস একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি। যদি ডায়াবেটিস অতিরিক্ত বেড়ে যায় এবং গ্লুকোমিটার যন্ত্রের সীমানা ছাড়িয়ে যায়, রোগী অসংলগ্ন আচরণ করতে থাকে বা চেতনা হারিয়ে ফেলতে থাকে, তাহলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীরা কখনোই আকস্মিকভাবে ইনসুলিন বা ওষুধ বন্ধ করবেন না, বিশেষ করে যখন কোনো শারীরিক অসুস্থতা যেমন জ্বর, সংক্রমণ, বমি বা ডায়রিয়া থাকে। এই সময় রক্তের শর্করা নিয়মিত পরীক্ষা করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

যদি বারবার গলা শুকিয়ে আসে বা প্রস্রাব হয়, তবে রক্তের শর্করা পরীক্ষা করা উচিত। অনেক সময় মানুষ উৎসব বা ভ্রমণের সময় ইনসুলিন বন্ধ রাখেন, কিন্তু এতে শর্করা বেড়ে গিয়ে বিপদ সৃষ্টি হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীর কোনো অপারেশন করতে হলে, তার শর্করা ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, নাহলে কিটো অ্যাসিডোসিস হতে পারে।

এছাড়া, টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস বা অন্তঃসত্ত্বা নারীরা যদি কিটো ডায়েট করেন, তবে তাদের কিটো অ্যাসিডোসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। কিটো ডায়েটে শর্করাজাতীয় খাবার কমিয়ে চর্বিজ

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow