সংকটে থাকা কিছু ব্যাংক নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে

ব্যাংক ও আর্থিক খাতে যে পদক্ষেপগুলো এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে, তাতে সংকট সামাল দেওয়া সম্ভব হলেও সমস্যা পুরোপুরি সমাধান হয়নি। ব্যাংকগুলোর পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার ফলে লুটপাট বন্ধ করা গেছে এবং ব্যাংক থেকে অর্থ বের করার অনিয়মের পথও রোধ করা হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের পতনও থেমেছে। তবে ব্যাংক খাতে এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নেওয়া জরুরি, কারণ গ্রাহকের আস্থাই ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বড় সম্পদ।

Nov 16, 2024 - 06:34
 0  5
সংকটে থাকা কিছু ব্যাংক নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে

ব্যাংক ও আর্থিক খাতে যে পদক্ষেপগুলো এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে, তাতে সংকট সামাল দেওয়া সম্ভব হলেও সমস্যা পুরোপুরি সমাধান হয়নি। ব্যাংকগুলোর পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার ফলে লুটপাট বন্ধ করা গেছে এবং ব্যাংক থেকে অর্থ বের করার অনিয়মের পথও রোধ করা হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের পতনও থেমেছে। তবে ব্যাংক খাতে এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নেওয়া জরুরি, কারণ গ্রাহকের আস্থাই ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বড় সম্পদ।

এদিকে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে, যেগুলো ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:

১. যেসব ব্যাংক গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে সক্ষম নয় বা অর্থনৈতিকভাবে টিকে থাকতে পারছে না, তাদের ব্যাপারে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এটি হতে পারে মার্জার (একীভূতকরণ) অথবা লিকুইডিশন (বন্ধ করে দেওয়া)। এসব ব্যাংক যতদিন থাকবে, ততদিন গ্রাহকের আস্থাহীনতা বাড়বে, যা শেষ পর্যন্ত অন্যান্য ব্যাংকগুলোতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

২. গ্রাহকদের অনির্দিষ্টকালের জন্য হয়রানি করা কাম্য নয়। যারা টাকা তুলে নিতে চান, তাদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে উপায় বের করতে হবে, অথবা আমানতকারীরা আদালতে মামলা করে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারে।

৩. লিকুইডিশন ও মার্জার সম্পর্কিত যে নীতি বিশ্বজুড়ে অনুসৃত হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক সেটি অনুসরণ করে একটি নীতিমালা তৈরি করতে পারে।

৪. বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে, যা বর্তমানে কমে যাওয়ার ফলে উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে। বেসরকারি খাতে ঋণ কমে গেলে তা অর্থনৈতিক স্থবিরতার সংকেত হিসেবে দেখা যায়। এর মাধ্যমে, উৎপাদনশীল খাতে ঋণ প্রবাহ নিশ্চিত করা যেতে পারে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে।

৫. আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে খেলাপি ঋণ অনেক বেড়েছিল, এবং এখন নতুন করে তা বাড়তে না পারে, সে জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে না আনলে ব্যাংক খাত সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না।

৬. ব্যাংক খাতে সংস্কারের জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। স্বল্প ও মধ্যমেয়াদে সংস্কারের জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে, যাতে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনই স্বল্পমেয়াদি সংস্কারের পদক্ষেপগুলো নিতে পারে। কিছু সংস্কারের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সরকার না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে, কারণ সেগুলো আইন সংশোধনের সঙ্গে সম্পর্কিত।

মোস্তফা কে মুজেরী
সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ ব্যাংক

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow