সেপ্টেম্বরে ভারতের খুচরা মূল্যস্ফীতি নয় মাসে সর্বোচ্চ

সেপ্টেম্বর মাসে ভারতে খুচরা মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। দেশটিতে ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যস্ফীতি হয়েছে গত মাসে। গতকাল সোমবার ভারতের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশে উঠেছে, এর মধ্যে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ।

Oct 15, 2024 - 09:18
 0  34
সেপ্টেম্বরে ভারতের খুচরা মূল্যস্ফীতি নয় মাসে সর্বোচ্চ

গত বুধবার মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার গভর্নর শক্তিকান্ত দাস বলেছিলেন, সেপ্টেম্বরে ভারতের খুচরা বাজারের মূল্যস্ফীতি অনেকটা বাড়তে পারে। শেষমেশ তাঁর সেই আশঙ্কা সত্যি হলো।

সেপ্টেম্বরে ভারতের বাজারে সবজির খুচরা মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৩৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ, ডালের ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ আর ফলের ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ভারতের বাজারে এখন প্রতি কেজি আলুর গড় দাম ৩৫ রুপি, পেঁয়াজ ৬০ রুপি, টমেটো ১০০ রুপি ও বেগুন ১৫০ রুপির আশপাশে। প্রতিটি ফুলকপির দাম ৭০ রুপি থেকে ৯০ রুপি পর্যন্ত উঠেছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, গত বছরের প্রতিকূল ভিত্তির নিরিখে হিসাব করা এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার ফলে খুচরা মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। ভোক্তারা বলছেন, বাজারের অবস্থা যে পরিসংখ্যানের চেয়েও ভয়াবহ, তা খাদ্যপণ্য ও সবজির দামে স্পষ্ট। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে উঠেছে, আগস্টে যা ছিল ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। গত বছর সেপ্টেম্বরে ভারতের খুচরা মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। চলতি বছরের জুলাই ও আগস্টে তা ছিল যথাক্রমে ৩ দশমিক ৬ ও ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

একই সঙ্গে ভারতের পাইকারি বাজারের মূল্যস্ফীতির হিসাব দিয়েছে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির জেরে পাইকারি মূল্যস্ফীতি ১ দশমিক ৩১ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ৮৪ শতাংশে উঠেছে। খাদ্যপণ্যের দাম সামগ্রিকভাবে বেড়েছে ১১ দশমিক ৫৩ শতাংশ। সবজির দাম বেড়েছে ৪৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ আর আলু ও পেঁয়াজের দাম যথাক্রমে ৭৮ দশমিক ১৩ শতাংশ ও ৭৮ দশমিক ৮২ শতাংশ। বিশ্লেষকেরা বলছেন, আগামী কয়েক মাস খুচরা বাজারে এর প্রভাব থাকতে পারে।

খাদ্যের দাম বাড়া নিয়ে মোদি সরকারের সমালোচনা করেছে কংগ্রেস। মূল্যবৃদ্ধির এই ঘটনাকে ‘আর্থিক ট্র্যাজেডি’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবারের দাম বাড়লে দীর্ঘ মেয়াদে দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্য ও পুষ্টিমানে বিরূপ প্রভাব পড়ে।

জুলাই ও আগস্ট মাসে ভারতের খুচরা মূল্যস্ফীতি রিজার্ভ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া ৪ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার নিচে থাকায় শিল্পমহল থেকে দাবি উঠেছিল, আরবিআই এবার নীতি সুদহার হ্রাস করুক। অর্থাৎ ঋণের ব্যয় কমিয়ে অর্থনীতির পালে হাওয়া লাগানো হোক, এটাই ছিল শিল্পমহলের দাবি। বাড়ি-গাড়ি কিনতে উৎসাহ দিক সাধারণ মানুষকে। কিন্তু আরবিআই সেই পথে না হেঁটে সুদহার অপরিবর্তিত রেখেছে।

বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, শুধু খুচরা মূল্যস্ফীতি নয়, পাইকারি মূল্যস্ফীতির কারণেও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। পাইকারি দামের প্রভাব খুচরা বাজারে পড়তে বেশ কয়েক দিন সময় লাগে। এর মধ্যে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে। এর ফলে ভারতের জ্বালানি আমদানির ব্যয় বাড়বে। আগামী কয়েক মাসে ভারতের মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতির কতটা উন্নতি হয়, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এ বাস্তবতায় আরবিআই শিগগিরই নীতি সুদ কমাবে, ভারতের শিল্পমহল এমনটা মনে করছে না।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow