নেপালে চীনা অর্থায়নে বিমানবন্দর, ‘ঘুম হারাম’ ভারতের
একদিকে যখন বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক টালমাটাল, তখন নেপাল চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে এক নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে। সম্প্রতি চার দিনের চীন সফর শেষে দেশে ফিরে আসেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি।
একদিকে যখন বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক টালমাটাল, তখন নেপাল চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে এক নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে। সম্প্রতি চার দিনের চীন সফর শেষে দেশে ফিরে আসেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি। কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, চীন সফরে নেপাল-চীন সম্পর্ক আরও মজবুত হয়েছে এবং এই সফরে মোট ১০টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার মধ্যে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পও রয়েছে। তিনি বলেন, এই চুক্তিগুলি নেপালকে আর্থিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ করবে।
ওলি সাংবাদিকদের জানান, বিআরআই প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ চীনের একটি বড় বাজেটের আন্তর্জাতিক প্রকল্প, যার মাধ্যমে নতুন সড়ক, রেলপথ এবং বিমানপথ নির্মাণ করে এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায় চীন। ২০১৭ সালে নেপাল এই প্রকল্পে যোগ দেয়, তবে নানা বাধার কারণে নেপালে প্রকল্পটির কাজ থমকে ছিল। এই সফরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, চীনা প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বিআরআই ছাড়াও, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা, এবং ২০২৫-২০২৯ পর্যন্ত উন্নয়নমূলক প্রকল্প নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ওলি চীনা বিনিয়োগকারীদের নেপালে বিনিয়োগের জন্য আমন্ত্রণ জানান এবং চীনের জনগণকে নেপালে বেড়াতে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে, বিআরআই প্রকল্প নিয়ে নানা মহলে উদ্বেগ রয়েছে। অনেকের মতে, উন্নয়নের নামে চীন দেশগুলিকে ঋণের ফাঁদে ফেলছে, পরে ঋণ শোধ করতে না পারলে চীন সেই প্রকল্প নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দেশের ওপর তার প্রভাব বাড়িয়ে দেয়। বিআরআই-এর ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, চীন এই প্রকল্পের মাধ্যমে বহু দেশের সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় নিরাপত্তা ক্ষুণ্ণ করেছে। বিরোধী দল এবং সরকারের জোট শরিক নেপাল কংগ্রেসও এই প্রকল্পে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে সন্দিহান এবং চীনের আর্থিক সহায়তা নেওয়ার বিরুদ্ধে।
এছাড়া, ভারতের আপত্তি অগ্রাহ্য করে পোখরা বিমানবন্দরের নির্মাণে চীনের কাছ থেকে ২০ কোটি ডলার আর্থিক সহায়তা নেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল নেপালের পক্ষ থেকে। যদিও ওই বিমানবন্দর এখনও লাভের মুখ দেখেনি, ভারত সীমান্তের কাছে এই বিমানবন্দরকে নিয়ে ভারতের উদ্বেগ রয়েছে, কারণ তারা মনে করছে চীন ওই বিমানবন্দরকে সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। ভারতের এই আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে, প্রধানমন্ত্রী ওলি তার চীন সফর নিয়ে নতুন করে ভারতের চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছেন।
What's Your Reaction?