বড় কোম্পানিগুলোর ব্যালেন্স শিটে টাকা থাকলেও বাস্তবে নেই
বেক্সিমকোসহ বড় কোম্পানিগুলোর ব্যালেন্স শিটে টাকা থাকলেও বাস্তবে দেশে অর্থের অভাব দেখা যাচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, দেশের টাকার বড় অংশ বিদেশে চলে গেছে। জনগণ ব্যাংকে যে অর্থ জমা রেখেছে, তারও অধিকাংশ দেশের বাইরে চলে গেছে। অথচ এই অর্থ জনগণেরই। ফলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।
বেক্সিমকোসহ বড় কোম্পানিগুলোর ব্যালেন্স শিটে টাকা থাকলেও বাস্তবে দেশে অর্থের অভাব দেখা যাচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, দেশের টাকার বড় অংশ বিদেশে চলে গেছে। জনগণ ব্যাংকে যে অর্থ জমা রেখেছে, তারও অধিকাংশ দেশের বাইরে চলে গেছে। অথচ এই অর্থ জনগণেরই। ফলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর একটি হোটেলে চারদিনব্যাপী এই সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা
ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, "আমরা সম্পদের সংকটে আছি। ফলে বিভিন্ন খাতে কাঙ্ক্ষিত বরাদ্দ দিতে পারছি না। বৈষম্য দূর করতে হলে গরীব মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দ বাড়াতে হবে। ধনীদের কাছ থেকে আরও বেশি কর আদায়ের জন্য কর নীতিতে সংস্কার আনতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, দেশের কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ৮০ শতাংশ শিক্ষক পদ শূন্য। অথচ সাধারণ শিক্ষায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে, যা কারিগরি শিক্ষায় নেই। দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন ছাড়া বৈষম্য দূর করা সম্ভব নয়।
মধ্যম আয়ের ফাঁদ ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ
বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইন্ডারমিট এস গিল তার ‘দ্য মিডল ইনকাম ট্রাপ’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে বলেন, “মধ্য আয়ের দেশগুলোতে পুঁজির অভাব এবং বিদ্যমান পুঁজির অদক্ষ ব্যবহারের কারণে অর্থনৈতিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার কম এবং গবেষণার অভাবের কারণে এই দেশগুলো সৃজনশীলতায় পিছিয়ে পড়ে। এসব সমস্যা সমাধানে মেধা ও দক্ষতা বাড়ানো এবং সঠিকভাবে পুঁজির ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি।”
ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা
ড. মাহমুদ বলেন, “আমাদের শিল্পগুলোকে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। কম মজুরি বা নিম্ন প্রযুক্তি নির্ভরতার পরিবর্তে উচ্চতর প্রযুক্তি ব্যবহারে মনোযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি সরকারের উচিত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট করা। ভিয়েতনাম ৩০-৪০টি দেশের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তি করে অনেক এগিয়ে গেছে, অথচ আমরা এখনও একটিও চুক্তি করতে পারিনি।”
স্বাস্থ্য খাতে দক্ষতার ঘাটতি
স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "বরাদ্দ দেওয়া হলেও দক্ষ অপারেটরের অভাবে অনেক যন্ত্রপাতি অকেজো পড়ে থাকে। বড় হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বা ডায়ালাইসিস মেশিন থাকলেও দক্ষতা সংকটের কারণে এগুলো কার্যকর হয় না। এটি একটি বড় দোটানা।"
সম্মেলনে ড. বিনায়ক সেন উল্লেখ করেন, “সম্পদের সুষম বণ্টন এবং বৈষম্য দূর করার উদ্যোগ ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলন বৈষম্যবিরোধী মনোভাবকে সামনে এনেছে, যা আমাদের আরও বড় পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যেতে পারে।”
এই সম্মেলনে মোট ৩০টি গবেষণাপত্র এবং ১২টি পাবলিক লেকচার অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়।
What's Your Reaction?