স্পষ্ট রোডম্যাপের আশা
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে একটি ধারণা দিয়েছেন, যা বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ইতিবাচক হিসেবে দেখছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে একটি ধারণা দিয়েছেন, যা বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। তবে তাদের মতে, সেখানে একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপের অভাব ছিল। বিশেষত, ‘যদি’ শব্দটি ব্যবহার করে নির্বাচনের সময়ের বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা প্রত্যাশিত ছিল না। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা আশা করছেন, তিনি শিগগিরই সংস্কার এবং নির্বাচনের সময়সীমা সম্পর্কে একটি নির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন।
দলগুলোর মতামত, যদি প্রধান উপদেষ্টা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেন, তবে দ্রুত এক ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে। এতে করে নির্বাচন ২০২৫ সাল অতিক্রম করবে না, বরং শীঘ্রই তা অনুষ্ঠিত হতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে নির্বাচনের প্রসঙ্গে বলেছেন, "আমি সব প্রধান সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে নির্বাচন আয়োজনের জন্য বারবার আবেদন জানিয়েছি। তবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে কিছু সংস্কার করে যদি নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয়, তাহলে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ তা সম্ভব হতে পারে।"
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সময় সম্পর্কে একটি ধারণা দিয়েছেন, তবে এতে সুস্পষ্ট কোনো রোডম্যাপ নেই।” তিনি আশা করছেন, প্রধান উপদেষ্টা শিগগিরই একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন।
এর আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, "রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে কত মাস সময় থাকবে, তা জনগণের জানার অধিকার।" তিনি প্রশ্ন করেন, "অন্তর্বর্তী সরকার আসলে কী করতে চাচ্ছে?" তার মতে, সরকারের কর্মপরিকল্পনা রোডম্যাপ ঘোষণা করা জনগণের কাছে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচন নিয়ে দেওয়া বক্তব্য ইতিবাচক, তবে এটি কিছুটা বিলম্বিত।” তিনি আরও বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করা উচিত।”
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সময়ের বিষয়ে 'যদি' বলার মাধ্যমে বিষয়টি জটিল করে দিয়েছেন। তবে আমরা আশা করি, তিনি দ্রুত নির্বাচনের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা দেবেন।”
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) সভাপতি ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের নির্বাচনের সময় নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা উচিত নয়। তারা নিজেদের দায়িত্বে থাকবেন, এবং জনগণের জন্য নির্বাচনের একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন।”
গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক সাইফুল হক বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার মন্তব্য ইতিবাচক, তবে আশা করছি, শিগগিরই নির্বাচনের বিষয়ে আরও স্পষ্ট বক্তব্য দেবেন।”
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সময় সম্পর্কে একটি ধারণা দিয়েছেন, তবে তার বক্তব্যে সুনির্দিষ্টতা ছিল না। আমরা আশা করি, দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন হবে।”
১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, “নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া গেছে, তবে সংস্কার কমিটিগুলোর রিপোর্ট পেশ করার পরই সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা উচিত।”
এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “একটি সময়সীমা পাওয়া গেছে, যা আগে ছিল না। তবে আশা করছি, এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা শিগগিরই দেওয়া হবে।”
সব মিলিয়ে, রাজনৈতিক দলগুলো আশা করছে যে, প্রধান উপদেষ্টা শিগগিরই নির্বাচনের বিষয়ে একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ প্রদান করবেন, যাতে নির্বাচনের সময় এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।
What's Your Reaction?