দাবি আদায়ের ‘হাতিয়ার’ এখন রেলপথে

এমনিতেই ট্রেনের সময়সূচী পালনের কোনো নিশ্চয়তা নেই। মাঝেমধ্যে উনিশ থেকে কুড়ি মিনিট দেরি হলেই ট্রেন দুর্ঘটনা বা লাইনচ্যুতির মতো ঘটনা ঘটে। ফলে ট্রেনের সিডিউল প্রায়ই বিপর্যস্ত থাকে। এদিকে, বিভিন্ন দাবির পক্ষে আন্দোলন বা প্রতিবাদ জানাতে ট্রেন আটক করার ঘটনাও বেড়ে গেছে।

Dec 18, 2024 - 04:35
 0  2
দাবি আদায়ের ‘হাতিয়ার’ এখন রেলপথে

এমনিতেই ট্রেনের সময়সূচী পালনের কোনো নিশ্চয়তা নেই। মাঝেমধ্যে উনিশ থেকে কুড়ি মিনিট দেরি হলেই ট্রেন দুর্ঘটনা বা লাইনচ্যুতির মতো ঘটনা ঘটে। ফলে ট্রেনের সিডিউল প্রায়ই বিপর্যস্ত থাকে। এদিকে, বিভিন্ন দাবির পক্ষে আন্দোলন বা প্রতিবাদ জানাতে ট্রেন আটক করার ঘটনাও বেড়ে গেছে। চলন্ত ট্রেন থামিয়ে পাথর নিক্ষেপ ও এমনকি ট্রেনের জানালা ভাঙার ঘটনা বাড়ছে, যার কারণে যাত্রীরা গুরুতর আহত হচ্ছেন।

এই পরিস্থিতিতে রেলওয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা নানা কৌশলে আন্দোলনকারীদের বুঝিয়ে, প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছেন। তবে, ট্রেন আটক ও পাথর নিক্ষেপের মতো ঘটনাগুলো সাধারণ যাত্রীদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

একদিকে অভিযোগ উঠেছে যে, রেলওয়ে শ্রমিক সংগঠন, বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারী ও বেসরকারি খাতের শ্রমিকরা একে একে রেলপথ অবরোধ, ট্রেন আটক ও ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছেন। বকেয়া বেতন আদায়ের জন্য মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে ট্রেন আটক করে শ্রমিকরা অবরোধ করেন। 

এ বিষয়ে রেলওয়ে পুলিশ প্রধান ও অতিরিক্ত আইজি সরদার তমিজ উদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, "রেলপথে যাত্রী সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রেলপুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করছেন। একই সঙ্গে আমরা প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের বুঝানোর চেষ্টা করছি। চলন্ত ট্রেন থামিয়ে, পাথর নিক্ষেপ করে দাবি আদায় বা প্রতিবাদ জানানো কোনোভাবে সমর্থনযোগ্য নয়।"

তিনি আরও বলেন, "আমরা এই ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করতে ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছি।" 

রেলপথ অবরোধ ও ট্রেন আটকের কারণে প্রায়ই যাত্রীরা আহত হচ্ছেন, আর এতে আতঙ্কের সৃষ্টি হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে যে, রেলওয়ে শ্রমিক সংগঠনসহ বিভিন্ন গোষ্ঠী একে একে রেলপথ অবরোধ, ট্রেন আটক, ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। বিশেষত, বকেয়া বেতন আদায়ের লক্ষ্যে মঙ্গলবার দুপুরে কারওয়ানবাজারে ট্রেন আটকে শ্রমিকরা রেলপথ অবরোধ করেন।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন যুগান্তরকে জানান, "সঠিক সময়ে ট্রেন চালানোর জন্য আমরা শত চেষ্টা করলেও, কয়েকদিন পরপর রেলপথ অবরোধ ও ট্রেন আটকের মতো ঘটনা ঘটছে, ফলে সিডিউল ঠিক রাখা সম্ভব হয় না। এসব কারণে যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়ছে।"

এদিকে, রেলওয়ের অস্থায়ী (টিএলআর) শ্রমিকরা জানিয়েছেন, তারা দৈনিক ভিত্তিতে মজুরি পান এবং দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া বেতন পাওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। তাদের দাবি, যদি দ্রুত বকেয়া বেতন না দেওয়া হয়, তবে তারা আরও বড় ধরনের আন্দোলন করবেন।

রেলওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, "এ ধরনের ঘটনা শুধু রেলওয়ে শ্রমিকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বাইরের শ্রমিকরাও এতে জড়িয়ে পড়ছে। রিকশাচালক ও ভ্যানচালকরাও রেলপথ অবরোধ ও ট্রেন আটকে ঘটছে এমন নানা তৎপরতায় অংশ নিচ্ছে।"

রেলওয়ে রোলিংস্টক দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, ট্রেন আটকের ফলে যাত্রীবাহী ট্রেনের বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। গত ৬ মাসে যেসব ট্রেন আটকে ভাঙচুর করা হয়েছে, তাতে প্রায় দুই শতাধিক জানালার কাচ ভেঙে ফেলা হয়েছে। এসব কাচ দেশে পাওয়া যায় না, ফলে ট্রেনের কোচগুলো এখনও মেরামত করা হচ্ছে। 

রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন যুগান্তরকে বলেছেন, "আমরা শ্রমিকদের দাবি আদায়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, তবে ট্রেন আটকে বা পাথর ছুঁড়ে দাবি আদায় কোনো সমাধান নয়। আমরা আন্দোলনকারীদের আহ্বান জানাচ্ছি—আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে।"

তিনি আরও বলেন, "এ ধরনের বিক্ষোভের কারণে দাবি আদায় কেবল কঠিন হয়, বরং শান্তিপূর্ণ আলোচনা থেকেই দ্রুত সমাধান আসবে।"

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow