একই ছাত্রীকে মেধা তালিকায় তিনবার স্থান দেওয়া হয়েছে

গত ১৭ ডিসেম্বর স্কুলে ভর্তির জন্য ডিজিটাল লটারির ফল প্রকাশ হয়। এই ফল নিয়ে একের পর এক অভিযোগ উঠছে। গাইবান্ধায় বালিকা বিদ্যালয়ে একটি ছেলে বাচ্চাকে ভর্তির জন্য নির্বাচিত করায় ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। এবার, ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখায় এক ছাত্রীকে তিনবার মেধাতালিকায় রাখা হয়েছে, যা নিয়ে অভিভাবক এবং শিক্ষকরা ভর্তির লটারি পদ্ধতিতে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন।

Dec 19, 2024 - 08:31
 0  0
একই ছাত্রীকে মেধা তালিকায় তিনবার স্থান দেওয়া হয়েছে

গত ১৭ ডিসেম্বর স্কুলে ভর্তির জন্য ডিজিটাল লটারির ফল প্রকাশ হয়। এই ফল নিয়ে একের পর এক অভিযোগ উঠছে। গাইবান্ধায় বালিকা বিদ্যালয়ে একটি ছেলে বাচ্চাকে ভর্তির জন্য নির্বাচিত করায় ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। এবার, ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখায় এক ছাত্রীকে তিনবার মেধাতালিকায় রাখা হয়েছে, যা নিয়ে অভিভাবক এবং শিক্ষকরা ভর্তির লটারি পদ্ধতিতে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন।

ডিজিটাল লটারি পদ্ধতিতে সফটওয়্যারের মাধ্যমে ফলাফল তৈরি করা হয়। প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখার দ্বিতীয় শ্রেণির মর্নিং শিফটের ইংলিশ ভার্সনে রুবাইতা বিনতে রুবেল নামের এক শিক্ষার্থীকে মেধাতালিকায় দুটি স্থান দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, একই শ্রেণির বাংলা ভার্সনেও ওই শিক্ষার্থী মেধাতালিকায় রয়েছে।

বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, দ্বিতীয় শ্রেণির বাংলা ভার্সনে মর্নিং শিফটে রুবাইতা সাধারণ কোটায় ৯৬তম স্থান পেয়েছে। একই শ্রেণির ইংলিশ ভার্সনের মর্নিং শিফটে সে সাধারণ কোটায় ১৫ ও ১৯তম স্থানে রয়েছে। তার বাবার নাম মো. রুবেল এবং মায়ের নাম সুলতানা জাকের। সব জায়গায় তার ছবি এবং বাবা-মায়ের নাম এক হলেও তিনটি আলাদা মোবাইল নম্বর এবং ভিন্ন জন্মনিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে।

তিনটি মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে একটি নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়, অন্য দুটি নম্বরে কল করা হলে রিসিভ করেন একই ব্যক্তি (মো. রুবেল), যিনি ওই ছাত্রীর বাবা। 

এ বিষয়ে রুবাইতার বাবা মো. রুবেল বলেন, “আমরা দুটি শিফটে দুটি আবেদন করেছি, সেটাই নিয়ম। তবে ইংলিশ ভার্সনে কেন দুবার নাম এসেছে, সেটা আমি জানি না।” 

তিনটি আলাদা জন্মনিবন্ধন নম্বর ব্যবহারের প্রশ্নে তিনি জানান, “এটা আমি জানি না। হয়তো আমার ভাই অন্য একটি নম্বর দিয়ে আবেদন করেছে। আমরা কোনো অনিয়ম করিনি। আমার মেয়ে সমস্ত কাগজপত্র স্কুলে জমা দিয়েছে, তাই সে ভর্তি হবে।

তবে ওই ছাত্রীর অভিভাবকরা স্কুলে কাগজপত্র জমা দিয়ে এলেও তা অনুমোদন করেননি শিক্ষকরা। রুবাইতা যে ইংলিশ ভার্সনে দুইবার মেধাতালিকায় এসেছে, সেই ভার্সনের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা কাগজপত্র জমা নিয়েছি। তবে সেটি অনুমোদন করিনি। এটা সন্দেহজনক হওয়ায় তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’

এক স্কুলে তিনবার নাম আসা আদৌ সম্ভব কি না, জানতে চাইলে এ সহকারী প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘এটা প্রাথমিকভাবে স্পষ্ট যে, প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট বানিয়ে একাধিক আবেদন করা হয়েছে। এটা যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে এটা খুব খারাপ ও গর্হিত কাজ।’

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মাধ্যমিক বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘লটারির পুরো প্রক্রিয়াটি সফটওয়্যারে করা হয়। এখানে অনিয়মের সুযোগ নেই। তবে কিছু ত্রুটি হতে পারে। সেটা আমরা জানতে পারলে ব্যবস্থা নেব।’

গাইবান্ধায় বালিকা বিদ্যালয়ে ছেলের নাম আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। হয়তো ভুল করে ওই শিক্ষার্থীর আবেদন করার সময় জেন্ডার অপশনে ছাত্র ক্লিক করা হয়েছে। আর কেউ যদি ভিন্ন ভিন্ন জন্মনিবন্ধন বানিয়ে একাধিক আবেদন করেন, সেক্ষেত্রে স্কুলে ভর্তির সময় ধরা পড়ে যাবে। তাকে বাদ দেওয়া হবে।’

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. জিয়াউল কবির দুলু বলেন, ‘লটারি প্রক্রিয়াটি সরকারের ভালো উদ্যোগ। এ উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে একটি চক্র তৎপর। সেখানে শিক্ষকরাও জড়িয়ে পড়েছেন। তারা অভিভাবকদের নানা কু-পরামর্শ দিয়ে অনিয়মে উদ্বুদ্ধ করেন। সেজন্য আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে যেসব অনিয়ম পাওয়া যাবে, তাতে কারা জড়িত তা চিহ্নিত করতে হবে। শিক্ষক-অভিভাবক যারাই জড়িত থাকুক, কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow