পাকিস্তানে পিটিআইয়ের বিক্ষোভ ঘিরে উত্তেজনা

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দেশে একাধিক বড় ধরনের বিক্ষোভ এবং আন্দোলন শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

Nov 24, 2024 - 12:05
 0  3
পাকিস্তানে পিটিআইয়ের বিক্ষোভ ঘিরে উত্তেজনা

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দেশে একাধিক বড় ধরনের বিক্ষোভ এবং আন্দোলন শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলটির সমাবেশ ঘিরে পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে বর্তমানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, এবং দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে শক্তিশালী করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, ইসলামাবাদসহ পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে ইন্টারনেট সেবা বিপর্যস্ত করা হয়েছে এবং শহরগুলোতে ব্যাপক পুলিশি অবরোধ তৈরি করা হয়েছে। ইমরান খান, যিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন, ১৩ নভেম্বর তাঁর চূড়ান্ত আন্দোলনের ডাক দেন। তিনি জানিয়েছেন, তার দাবি পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। পিটিআইয়ের পক্ষ থেকে এই আন্দোলনের মূল দাবি হচ্ছে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা এবং সংবিধানের ২৬তম সংশোধনী প্রত্যাহার। এ ছাড়া বিনা বিচারে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির দাবি তুলেছে দলটি।

তবে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। সংবাদমাধ্যম ডন এবং জিও নিউজ জানিয়েছে, ইসলামাবাদসহ পাকিস্তানের বেশ কিছু শহরে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে কন্টেইনার দিয়ে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। এমনকি, দেশের বিভিন্ন শহর থেকে সকাল থেকে পিটিআইয়ের নেতা-কর্মীরা ইসলামাবাদে সমাবেশে যোগ দিতে রওনা হয়েছেন। কিন্তু রাস্তায় পুলিশি বাধার সম্মুখীন হয়ে তারা বাধা পাচ্ছেন, এমন অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে, পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, "বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা হলে কোনো ধরনের বিক্ষোভ বা অবস্থান ধর্মঘটের অনুমতি দেওয়া হবে না।" তিনি আরো জানান, ইসলামাবাদে দুই মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে, যার মাধ্যমে পাঁচ বা তার বেশি মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তার জন্য কিছু এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।

জিও নিউজ আরো জানিয়েছে, ইসলামাবাদে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন করা হয়েছে, যেন পিটিআইয়ের সমর্থকদের বিক্ষোভ থামানো যায়। পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় কন্টেইনার বসিয়ে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইসলামাবাদ এবং অন্যান্য বড় শহরে রাস্তাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যাতে কোনো ধরনের প্রতিবাদ সমাবেশের জন্য বিশাল জমায়েত করা না যায়।

একই দিন, অর্থাৎ রোববার, বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো পাকিস্তান সফরে আসবেন, যা পিটিআইয়ের আন্দোলনকে আরও তীব্র করে তুলতে পারে। এই সফরকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং বিক্ষোভ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এটি নতুন নয় যে, ইমরান খানের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের বিভিন্ন আদালতে ১৫০টিরও বেশি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। তবে পিটিআইয়ের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, এই মামলা গুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তাদের নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য এসব মামলা দায়ের করা হয়েছে। বর্তমানে ইমরান খান প্রায় এক বছর ধরে কারাগারে আছেন, এবং তার মুক্তি দাবি করে পিটিআই তার সমর্থকদের বারবার আন্দোলন করার আহ্বান জানাচ্ছে।

মোটকথা, পাকিস্তানের রাজনৈতিক উত্তেজনা একদম চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং পরিস্থিতি এখনও অস্থিতিশীল। পাকিস্তানের শাসক মহল এবং নিরাপত্তা বাহিনী এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে, তবে পিটিআই ও তার সমর্থকরা পিছু হটতে প্রস্তুত নয়। আন্দোলন এবং বিক্ষোভের ফলাফল দেশটির ভবিষ্যত রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow