যেসব বিষয়ে বড় পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছে সংস্কার কমিশনগুলো

বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে গঠিত বেশ কয়েকটি ‘সংস্কার কমিশন’ সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন এবং পুলিশ কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে কাজ শুরু করেছে। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে সংবিধান এবং নির্বাচনি সংস্কার।

Nov 26, 2024 - 03:35
 0  2
যেসব বিষয়ে বড় পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছে সংস্কার কমিশনগুলো

সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন ও পুলিশ সংস্কারে বড় পরিবর্তনের কাজ শুরু করেছে 'সংস্কার কমিশন'

বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে গঠিত বেশ কয়েকটি ‘সংস্কার কমিশন’ সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন এবং পুলিশ কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে কাজ শুরু করেছে। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে সংবিধান এবং নির্বাচনি সংস্কার।

সংবিধান সংস্কার কমিশন পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল, আনুপাতিক ভোটিং ব্যবস্থা, দ্ব chambers সংসদ চালু, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা ও অন্যান্য প্রস্তাবনা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাদ দেওয়ার পাশাপাশি প্রবাসীদের ভোটাধিকার এবং ইভিএম বাতিল করার প্রস্তাব করেছে। এসব সংস্কার বাস্তবায়ন হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে, তবে রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ওপর এসব সংস্কারের সফলতা নির্ভর করছে। সব সংস্কার কমিশন আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের প্রস্তাবনা সরকারের কাছে পেশ করবে।

সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাব

৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের বিদ্যমান সংবিধান সংস্কারের দাবি উঠেছে, বিশেষ করে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। নাগরিক সমাজ এবং রাজনৈতিক দলগুলিও নানা ধরনের প্রস্তাবনা উত্থাপন করেছে।

সংবিধান সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে অংশীজনদের সাথে বৈঠক করে নানা ধরনের পরামর্শ পেয়েছে। প্রস্তাবের মধ্যে দ্ব chambers সংসদ চালু, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং আনুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থা চালু করার কথা রয়েছে।

এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না রাখার প্রস্তাবও এসেছে। ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন সংস্কারের প্রস্তাব

নির্বাচন সংস্কার কমিশন নানা প্রস্তাবনা দিয়েছে, যেমন—ইভিএম পদ্ধতি বাতিল, স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাদ দেওয়া, প্রবাসীদের ভোটের ব্যবস্থা চালু এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের আইনে পরিবর্তন। কমিশন এও জানায় যে, নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য আইনি কাঠামো সংশোধন করা হবে।

এছাড়া, নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছ ভোটার তালিকা তৈরি, নির্বাচনি অপরাধ বন্ধে আইন সংস্কার, এবং রাজনৈতিক দলের মধ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানিয়েছে।

পুলিশ সংস্কারে প্রস্তাব

বাংলাদেশে পুলিশের কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে, বিশেষত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। পুলিশ সংস্কার কমিশন নাগরিকদের কাছ থেকে ওয়েবসাইটে জনমত সংগ্রহ করেছে এবং আইনি কাঠামো সংস্কার, পুলিশের জবাবদিহিতা এবং পেশাদারি দক্ষতা বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলোতে প্রস্তাব দিয়েছে।

পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সরফ রাজ হোসেন বলেন, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয় ভেরিফিকেশন বাদ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যাতে বৈষম্য কমে। এছাড়া, পুলিশ গ্রেফতার এবং রিমান্ডে নেওয়ার ক্ষেত্রে হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে চলার সুপারিশও করা হতে পারে।

জনপ্রশাসন সংস্কারে প্রস্তাব

জনপ্রশাসনে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও পক্ষপাতিত্ব বন্ধে শক্তিশালী পদক্ষেপের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন স্বচ্ছতা, প্রশাসনে বিকেন্দ্রীকরণ এবং সুনির্দিষ্ট নীতিমালা মেনে বদলি ও পদায়ন করার প্রস্তাব দিয়েছে।

কমিশনের সদস্যরা বলছেন, প্রশাসনে কাঠামোগত সংস্কারের পাশাপাশি একটি জনবান্ধব প্রশাসন গড়ে তোলাও জরুরি।

সংস্কারের সমন্বয় ও নির্বাচনের দিকনির্দেশনা

কমিশনগুলো সংস্কারের প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করার আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠকে বসবে এবং পরস্পরবিরোধী প্রস্তাবগুলো খতিয়ে দেখবে। তবে, সংস্কারের বাস্তবায়ন এবং নির্বাচনের সময়সূচী নিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতার প্রয়োজন রয়েছে।

সংস্কার প্রস্তাবগুলো চূড়ান্ত হওয়ার পর নির্বাচনের আয়োজন করা হবে, তবে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত এবং জনগণের সমর্থনের ওপর এ প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন হবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow