ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) শীর্ষস্থানীয় ৪০ জন কর্মকর্তাকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই বিভিন্ন শাখার ব্যবস্থাপক এবং কিছুজন প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বে আছেন। এই সিদ্ধান্তে ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চাকরি হারানোর আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
পদত্যাগের নির্দেশ পাওয়া দুই কর্মকর্তা জানান, শুধুমাত্র চট্টগ্রামে বাড়ি থাকার কারণে তাদের পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে, যদিও তাদের বিরুদ্ধে কোনো অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তারা এমন কোনো বিভাগেও কাজ করেননি যেখানে অনিয়ম হয়েছে। তবে তালিকায় থাকা কিছু কর্মকর্তাকে অনিয়মের অভিযোগে যুক্ত কিছু বিভাগে কাজ করতে দেখা গেছে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, এই ৪০ জন কর্মকর্তার মধ্যে কয়েকজন ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন এবং আরও কিছুজন এই সপ্তাহের মধ্যে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন। আরও জানা গেছে, ব্যাংকটি মোট ১০০ জন কর্মকর্তাকে বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
ইউসিবির নিয়ন্ত্রণ আগে আওয়ামী লীগের নেতা প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরীর পরিবারের হাতে ছিল। ব্যবসায়ী গোষ্ঠী পারটেক্স গ্রুপও শুরুতে ব্যাংকটির সঙ্গে যুক্ত ছিল, কিন্তু ২০১৭ সালে পারটেক্স গ্রুপকে ব্যাংক ছাড়তে হয়। এরপরে চেয়ারম্যান হিসেবে রুকমিলা জামান দায়িত্ব নেন, তবে তিনি যুক্তরাজ্যে অবস্থান করায় মূলত সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো এক চিঠিতে অভিযোগ করা হয় যে, ব্যাংকের চেয়ারম্যান রুকমিলা জামান হলেও সাইফুজ্জামান চৌধুরী কার্যত নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং তার স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ব্যাংকটি আর্থিক সংকটে পড়েছে। অভিযোগে আরও বলা হয়, যুক্তরাজ্যে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ১ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে, যা ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা থেকে অর্জিত বলে দাবি করা হয়েছে। এই অভিযোগের পর বাংলাদেশ ব্যাংক ইউসিবির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে, নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে শরীফ জহিরকে দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ কাদরী পদত্যাগ করেন। নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে মোহাম্মদ মামদুদুর রশীদ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ব্যাংকের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা যাচাইয়ে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে নিরীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।