মেঘনা নদী থেকে বালু তোলা নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৫
ভোলার মেঘনা নদীর বালুমহালে বালু উত্তোলন নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পাঁচজন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দিনব্যাপী ইলিশা-কাচিয়া জলসীমানায় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ও সংঘর্ষ চলে। পরে কোস্টগার্ডের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং সংঘর্ষকারীরা পালিয়ে যায়।
ভোলার মেঘনা নদীর বালুমহালে বালু উত্তোলন নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পাঁচজন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দিনব্যাপী ইলিশা-কাচিয়া জলসীমানায় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ও সংঘর্ষ চলে। পরে কোস্টগার্ডের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং সংঘর্ষকারীরা পালিয়ে যায়।
এ ঘটনার আগেই, চলতি মাসের প্রথম দিকে উপজেলা প্রশাসন বালুমহালগুলো পরিদর্শন করতে গেলে বিএনপির এক পক্ষ প্রশাসনকে মারধর করে। এই ঘটনায় ভোলা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়, তবে হামলাকারীদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য প্রদান করা হয়নি।
ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাৎ মো. হাচনাইন পারভেজ জানিয়েছেন, সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়েছেন, তবে কেউ হাসপাতালে ভর্তি হননি, তাই তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি। এছাড়া, ঘটনার পর কেউ অভিযোগও করেননি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মেঘনা নদীর ইলিশা-কাচিয়া জলসীমানায় প্রশাসন ১৪২৮ সন থেকে চারটি বালুমহাল ঘোষণা করে। এর মধ্যে ২ ও ৩ নম্বর মহাল ইজারা পেয়েছেন যুবলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন ওরফে শামীম মাস্টার, আর ৪ নম্বর মহাল ইজারা পেয়েছেন আবুল হাসনাত (ইভান)। ১ নম্বর মহালের জন্য ইজারাদার পাওয়া যায়নি। মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর ভাঙন বাড়ছে এবং মা ইলিশের প্রজনন ও জাটকা সংরক্ষণের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, যা স্থানীয় জেলেরা ও নদীর দু’পারের মানুষদের আপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে তাঁরা জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি ও মানববন্ধন করেছেন।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের সমর্থক ইজারাদাররা বালুমহালগুলো থেকে পালিয়ে গেলে বিএনপির লোকজন সেগুলোর দখল নেন। পরবর্তীতে ইজারাদার আনোয়ার হোসেনের মহালগুলো দৌলতখান উপজেলা বিএনপির সমন্বয়ক আকবর হোসেন ও তাঁর লোকজন কিনে নেন, আর আবুল হাসনাতের ৪ নম্বর মহালটি জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হারুন অর রশিদ (ট্রুম্যান) ও হুমায়ুন কবীর (সোপান) পক্ষ কিনে নেয়।
হারুন অর রশিদ পক্ষের দাবি, তারা ৪ নম্বর বালুমহালটি আবুল হাসনাত থেকে কিনে নিয়েছে। তবে আকবর হোসেনের পক্ষের লোকজন অভিযোগ করেছে যে ৪ নম্বর মহালে বালু কম থাকায় তারা সেখানে জোর করে বালু উত্তোলন করতে চায়। এ নিয়ে ৭-৮টি স্পিডবোটে সন্ত্রাসীরা ৪ নম্বর মহালে এসে হামলা চালায় এবং ৫ জনকে পিটিয়ে আহত করে। পরে কোস্টগার্ড এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।
তবে, হামলা ও মারধরের ঘটনায় কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন আকবর হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে জানান, নিরাপদে বালু উত্তোলনের জন্য জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে।
ওই চিঠিতে আকবর হোসেন লিখেছেন, প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বৈধভাবে তাঁরা গতকাল বালু উত্তোলন করতে যান। তিনি মেঘনা নদীর বালুমহালের ৩ ও ২ নম্বর বালুমহালের মূল ইজারাদার আনোয়ার হোসেনের কাছ থেকে স্টাম্পে লিখিত চুক্তিপত্রের মাধ্যমে বালু তোলার মালিকানা লাভ করেছেন। চুক্তিপত্রের শর্তমতো তাঁর লোকজন ৬ নভেম্বর বালুমহাল থেকে বালু তুলতে যান। তবে ৭ নভেম্বর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হারুন অর রশিদ ও হুমায়ুন কবির পক্ষ দলের নাম ভাঙিয়ে ৩ ও ২ নম্বর বালুমহাল বেদখলের পাঁয়তারা করে। তারা অবৈধভাবে তাঁর বালুমহাল দখল করে বালু উত্তোলন করেছে।
আকবর হোসেন আরও জানান, প্রশাসন ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে গতকাল তাঁর লোকজন তাঁর মালিকানাধীন মহালে বালু তুলতে গিয়েছিলেন। অন্যের বালুমহাল দখল করার জন্য যায়নি।
জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান বলেন, তিনি হামলা, সংঘর্ষ এসব বিষয়ে কিছু জানেন না। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।
What's Your Reaction?