শিশুর হাঁপানির বিশেষত্ব কেন?
শীতের শুরুতে ভোরের বাতাসে হালকা হিমেল ভাব আসতে শুরু করেছে, আর এর সঙ্গে দিন-রাতের পরিবেশ শুষ্ক হয়ে উঠছে। এ সময় শিশুদের হাঁপানির সমস্যা বেড়ে যায়। হাঁপানি শিশুদের মধ্যে বড়দের তুলনায় আলাদা হতে পারে, এবং শিশুরা তাদের উপসর্গগুলি ঠিকমতো প্রকাশ করতে পারেনা।
শিশুর হাঁপানি: কেন এটি বিশেষ?
শীতের শুরুতে ভোরের বাতাসে হালকা হিমেল ভাব আসতে শুরু করেছে, আর এর সঙ্গে দিন-রাতের পরিবেশ শুষ্ক হয়ে উঠছে। এ সময় শিশুদের হাঁপানির সমস্যা বেড়ে যায়। হাঁপানি শিশুদের মধ্যে বড়দের তুলনায় আলাদা হতে পারে, এবং শিশুরা তাদের উপসর্গগুলি ঠিকমতো প্রকাশ করতে পারেনা।
বারবার সর্দি-কাশি হাঁপানির অন্যতম লক্ষণ। এতে কাশি নিয়ে শিশুর চোখ-মুখ লাল হয়ে যায়, বুকে চাপ অনুভূত হয় এবং রাতে কাশি ও শ্বাসকষ্ট বাড়তে পারে, ফলে খাবার গ্রহণে সমস্যা হয়। অধিকাংশ হাঁপানি আক্রান্ত শিশুর কাশি ও শ্বাসকষ্ট তিন থেকে চার সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়।
ফুসফুসে বাতাস বহনকারী সূক্ষ্ম শ্বাসনালিগুলো অ্যালার্জি ও অন্যান্য কারণে সংকুচিত হয়ে পড়ে, যার ফলে শ্বাসযন্ত্রে অক্সিজেনের প্রবাহ ব্যাহত হয়। এ কারণে শরীর প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পায় না, যা শ্বাসকষ্ট এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করে। শ্বাসনালিতে মিউকাস বা কফ জমে যাওয়ায় সমস্যা আরও বাড়তে থাকে।
করণীয়
বাড়িতে ধূমপান করা যাবে না এবং শিশু যেখানে আছে, সেখানে মশার কয়েল ব্যবহার করা উচিত নয়। ধুলাবালি এবং দূষিত পরিবেশ হাঁপানির কষ্ট বাড়াতে পারে, তাই ঘরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে হবে। এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার এবং শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ফিল্টার পরিষ্কার রাখতে হবে, কারণ অপরিষ্কার ফিল্টার থেকে নোংরা বাতাস বেরিয়ে ঘরের পরিবেশ বিষাক্ত করে।
যেসব শিশুদের ওজন বেশি এবং রক্তে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা কম, তাদের শ্বাসজনিত রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। ভিটামিন ডি-এর ৮০ শতাংশ আসে সূর্যালোক থেকে। শিশুদের রোদে সময় কাটানো নিশ্চিত করতে হবে এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ, ওটস, ডালিয়া, শুকনা ফল ও পালংশাক খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
ঠান্ডাজাতীয় খাবার ও পানীয় এবং অ্যালার্জিক খাবার শিশুদের সমস্যাকে বাড়াতে পারে, তাই এসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
চিকিৎসা
হাঁপানির চিকিৎসায় ইনহেলার সবচেয়ে কার্যকরী। প্রয়োজনে নেবুলাইজারের ব্যবস্থাও করা উচিত। হাঁপানির জন্য দুটি ধরনের ওষুধ রয়েছে—রোগ নিয়ন্ত্রণকারী ও উপশমকারী। নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধ সময়ের সঙ্গে রোগলক্ষণ ও আক্রমণ প্রতিরোধ করে, কিন্তু তাৎক্ষণিক আরাম দেয় না। অন্যদিকে, উপশমকারী ওষুধ দ্রুত আরাম দেয় এবং হাঁপানির সময় ব্যবহৃত হয়।
কিছু রোগীর জন্য অ্যালার্জিরোধক ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে। শিশুকে ইপিআইয়ের সব টিকা যথাসময়ে দিতে হবে এবং নিউমোনিয়া ও ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধক টিকা দেওয়া উচিত।
— ডা. মো. খায়রুল আনাম, পরিচালক ও অধ্যাপক, রেসপিরেটরি মেডিসিন, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা
What's Your Reaction?