গুগল কেন ২৫ মিলিয়ন ডলারের সাহায্য দিচ্ছে
ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আসার সময় পিটসবার্গ ছিল আমার প্রথম গন্তব্য। এখানে আমার চাচা-চাচি বসবাস করেন, এবং আমার চাচা প্রায় ৩০ বছর ধরে কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটিতে (সিএমইউ) কাজ করছেন।
ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আসার সময় পিটসবার্গ ছিল আমার প্রথম গন্তব্য। এখানে আমার চাচা-চাচি বসবাস করেন, এবং আমার চাচা প্রায় ৩০ বছর ধরে কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটিতে (সিএমইউ) কাজ করছেন। প্রথমবার এই ক্যাম্পাসে আসার অভিজ্ঞতা ছিল চমৎকার। মনে আছে, আমরা ক্যানটিনে বসে জীবনের প্রথম লাসানিয়া খেয়েছিলাম। এত দিন পর এখানে এসে আমি বেশ ভালো অনুভব করছি। আজ আমি তোমাদের সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে কিছু আলোচনা করব।
ক্লাসরুমে এআই
কিছুদিন আগে আমরা একটি বিশেষ প্রকল্প শুরু করেছি। এই প্রকল্পটি কিন্ডারগার্টেন থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক—সবাই এখন ভাবছে কিভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা যায় এবং ক্লাসরুমে এটি কিভাবে ব্যবহার করা যায়। এজন্য আমরা ২.৫ কোটি ডলারের একটি অনুদান ঘোষণা করেছি, যাতে অন্তত পাঁচ লাখ শিক্ষার্থী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা পেতে পারে। যদি তারা এই জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে পারে, তবে এটি আমাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
গুগলে কাজ করার উচ্ছ্বাস
গুগলে কাজ করার সময় আমার যে রোমাঞ্চ অনুভব হয়, তার কারণ হল—যেকোনো একজন, হোক সে কার্নেগি মেলনের অধ্যাপক বা ইন্দোনেশিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছাত্র—যার কাছে যদি কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট সংযোগ থাকে, আমি তার কাছে একই তথ্য পৌঁছে দিতে পারব। প্রযুক্তি সকলের জন্য সমান সুযোগ প্রদান করে। বর্তমান প্রযুক্তিগত রূপান্তর প্রক্রিয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভূমিকা অপরিসীম। আমরা এ প্রযুক্তিকে সকলের কাছে কিভাবে পৌঁছে দেব, সেটি আমাদের উত্সাহ জোগায়।
কার্বনমুক্ত পৃথিবীর সন্ধানে
গুগল এমন কিছু প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি, যারা ২০০৭ সাল থেকে নিজেদের কার্যক্রমে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য কাজ করে চলেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা আমাদের কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামানোর লক্ষ্য নিয়েছি। এই সিদ্ধান্ত আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থানের আগেই গ্রহণ করেছি। বর্তমানে আমাদের কাজ আরও দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে। আমরা এখন এক গিগাওয়াটের বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন ডেটা সেন্টার নিয়ে ভাবছি, যা দুই বছর আগে সম্ভব ছিল না। আমাদের সব কার্যক্রমে জ্বালানির প্রয়োজন। যদিও শিগগিরই কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামানো সম্ভব নাও হতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদে এটি সম্ভব। এজন্য বিশাল বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। আমাদের বিকল্প জ্বালানির উৎস খুঁজে বের করতে হবে। তবে এটুকু বলতে পারি, বর্তমানে আমাদের অধিকাংশ ডেটা সেন্টার ৯০ শতাংশেরও বেশি কার্বনমুক্ত।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সুন্দর পিচাইয়ের সেলফি । ছবি: বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টাগ্রাম থেকে
ব্যর্থতার প্রয়োজনীয়তা
যদি আপনি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করেন, তবে আপনার যাত্রায় ব্যর্থতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গুগলে আমরা তিনটি মূল বিষয় সব সময় মাথায় রাখি। প্রথমত, এমন উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে যা আগে কেউ করেনি। এর ফলে প্রতিযোগিতার চাপ কম থাকে। দ্বিতীয়ত, আমাদের কাজগুলো যেন পৃথিবীর সেরা প্রতিভাদের আকৃষ্ট করে, যেমন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। তৃতীয়ত, যা তৈরি করতে চেয়েছিলাম, তাতে যদি আমরা ব্যর্থও হই, তবুও ওই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অর্জিত অভিজ্ঞতা যেন অমূল্য হয়। এই মানসিকতা আমরা সব সময় রক্ষা করার চেষ্টা করি।
আপনি যদি সব সময় ফলাফলের দিকে নজর দেন, তাহলে সবাই সহজ লক্ষ্য ঠিক করতে চাইবে, যেন ব্যর্থতার দায় তাদের কাঁধে না আসে। এজন্য চেষ্টা করার জন্য পুরস্কারও দেওয়া প্রয়োজন। নতুন উদ্যোগ নিতে এবং ঝুঁকি গ্রহণ করতে মানুষকে উৎসাহিত করা জরুরি। এই সংস্কৃতি গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ঝুঁকি
প্রযুক্তিগত পরিবর্তন এত দ্রুত ঘটছে যে আমরা প্রস্তুত হওয়ার জন্য সময় পাচ্ছি না। আজ যখন গ্রুপ ফটো তোলার সময় একটি রোবটকে ডাকছিলাম, তখন এর বাস্তবতা অনুভব করলাম।
আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করব, তবে সঠিকভাবে সামঞ্জস্য রেখে। আমাদের আর 'পরে দেখা যাবে' ভেবে অপেক্ষা করার সময় নেই। বিশ্ববিদ্যালয়, সরকার এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ বিষয়ে চিন্তা করা উচিত। স্বাস্থ্যসেবা একটি উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক; এর নিজস্ব কিছু বিধান রয়েছে। এসব বিধান অতিক্রম করে আপনি কাজগুলো এআই-এর হাতে তুলে দিতে পারেন না।
অনেকে প্রশ্ন করেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি নবীন প্রোগ্রামারদের চাকরি গ্রাস করবে? আমার মনে হয়, তা নয়। বরং এআই প্রোগ্রামারদের কাজে সহায়তা করবে, যাতে তারা ছোটখাটো সমস্যার সমাধান করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় না করে। তারা যেন বড় প্রকল্পে মনোনিবেশ করতে পারে এবং প্রোগ্রামিং একটি সৃজনশীল খাত হয়ে উঠতে পারে।
দাবার প্রসঙ্গ ধরে বলা যায়, এআই পৃথিবীর যেকোনো মানুষের চেয়ে ভালো দাবা খেলে। তবে এর মানে এই নয় যে দাবা খেলোয়াড়ের সংখ্যা কমেছে; বরং ইতিহাসের এই সময়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ দাবা খেলছেন।
What's Your Reaction?