৬৪ বছর ধরে যে রাজবাড়ি ডুবে আছে পানির নিচে
রাঙামাটি শহরের জেলা প্রশাসকের বাসভবনের পাশেই কাপ্তাই হ্রদের তীরে প্রায়ই মানুষের ভিড় দেখা যায়। অনেকেই নৌকা নিয়ে হ্রদের নির্দিষ্ট একটি স্থানে গিয়ে জলের নিচে তাকিয়ে থাকেন। কী দেখতে পান তাঁরা? নতুন কেউ হলে এমন দৃশ্য দেখে অবাক হতেই পারেন। কিন্তু স্থানীয়রা জানেন, তাঁরা আসলে চাকমা রাজার সেই পুরনো রাজপ্রাসাদ দেখতে আসেন, যা কাপ্তাই হ্রদের নিচে তলিয়ে গেছে প্রায় ৬৪ বছর আগে।
রাঙামাটি শহরের জেলা প্রশাসকের বাসভবনের পাশেই কাপ্তাই হ্রদের তীরে প্রায়ই মানুষের ভিড় দেখা যায়। অনেকেই নৌকা নিয়ে হ্রদের নির্দিষ্ট একটি স্থানে গিয়ে জলের নিচে তাকিয়ে থাকেন। কী দেখতে পান তাঁরা? নতুন কেউ হলে এমন দৃশ্য দেখে অবাক হতেই পারেন। কিন্তু স্থানীয়রা জানেন, তাঁরা আসলে চাকমা রাজার সেই পুরনো রাজপ্রাসাদ দেখতে আসেন, যা কাপ্তাই হ্রদের নিচে তলিয়ে গেছে প্রায় ৬৪ বছর আগে। যখন হ্রদের পানি অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়, তখন সেই ডুবন্ত রাজপ্রাসাদটি চোখে পড়ে। ইতিহাসের সাক্ষী হতে জেলা প্রশাসকের বাংলোর কাছে হ্রদের তীরে জমায়েত হন উৎসুক মানুষজন।
কাপ্তাই হ্রদের জলে ডুবে থাকা চাকমা রাজবাড়ি এখনো পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি। এর একটি অংশ ইতিহাসের নিদর্শন হয়ে আজও জলের নিচে রয়ে গেছে, যা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বেদনার প্রতীক। বিশাল জনপদ ডুবিয়ে কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টি করার ফলে লাখো মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছিল। সেই স্মৃতি এখানকার মানুষদের বারবার তাদের অতীতের কষ্টের কথা মনে করিয়ে দেয়।
১৯৬০ সালে কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ নির্মাণের পর রাঙামাটির হাজারো বাড়িঘর এবং চাকমা রাজবাড়ি পানির নিচে তলিয়ে যায়। ১৯৮৬ ও ২০০৬ সালে হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় পুরনো সেই রাজপ্রাসাদটি আবারও জলের ওপর ভেসে ওঠে। তখন অনেকেই স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রাজপ্রাসাদের ইট সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, চাকমা রাজাদের প্রথম বাড়িটি ছিল চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায়। সেই রাজপ্রাসাদ থেকেই বিখ্যাত চাকমা রানি কালিন্দী রায় রাজত্ব করতেন। ১৮৭৪ সালে তাঁর মৃত্যুর পর রাজা হন রাজপুত্র হরিশ্চন্দ্র রায়। রাজা হওয়ার তিন বছর পর তিনি রাঙ্গুনিয়া থেকে রাঙামাটিতে চলে আসেন এবং সেখানে বর্তমান ডুবে যাওয়া রাজপ্রাসাদটি নির্মিত হয়। সেই প্রাসাদেই তিনি দীর্ঘ ৮৪ বছর রাজকার্য পরিচালনা করেন। পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে পাকিস্তান সরকার কর্ণফুলী নদীতে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ করলে প্রাসাদটি ডুবে যায়। তারপর বর্তমান রাজবাড়ি এলাকায় চাকমা রাজার নতুন প্রাসাদ নির্মিত হয়।
হ্রদের এই অংশের নিচেই রয়েছে ডুবন্ত রাজবাড়িটি। পানির নিচে বাড়িটি দেখতে ভিড় জমান মানুষজন l
চাকমা সার্কেল কার্যালয়ের কর্মকর্তা সুব্রত চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের পর চাকমা সার্কেলের রাজবাড়ি পানির গভীরে তলিয়ে যায়। রাজবাড়ি ডুবে যাওয়ার পর নতুন করে রাজবাড়ি নির্মিত হয়। পুরনো রাজবাড়ির কাছেই একটি ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধবিহার ছিল, যেখানে বিশাল একটি বুদ্ধমূর্তি স্থাপিত ছিল। বুদ্ধমূর্তিটি এখনো আছে, তবে মন্দিরটি ডুবে গেছে। এছাড়াও পুরনো প্রাসাদ থেকে একটি কামান সরিয়ে এনে চাকমা রাজার বর্তমান কার্যালয়ের পাশে রাখা হয়েছে।
শিক্ষাবিদ ও সাবেক মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরূপা দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, “ডুবে যাওয়া চাকমা রাজবাড়ির স্মৃতি এখনো আমার মনে অমলিন। ছোটবেলায় আমি রাজ পুণ্যাহ দেখতে সেখানে যেতাম। অনন্য স্থাপত্যশৈলীর সেই রাজবাড়িটি একদিন পানির নিচে হারিয়ে যাবে, তা কখনো ভাবিনি।
What's Your Reaction?