বিচ্ছিন্ন নয়, সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন
পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে কমবেশি সবাই জানেন। তবুও বাংলাদেশে পলিথিনের ব্যবহার ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। এটি একটি প্লাস্টিকজাত পণ্য, যার আয়ুষ্কাল হাজার বছর। মাটির গুণগত মান নষ্ট করার পাশাপাশি এটি গাছপালা, পানি এবং শেষ পর্যন্ত মানুষের শরীরে বিষাক্ত রাসায়নিক কণার প্রবেশ ঘটায়।
পলিথিন দূষণ: পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি
পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে কমবেশি সবাই জানেন। তবুও বাংলাদেশে পলিথিনের ব্যবহার ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। এটি একটি প্লাস্টিকজাত পণ্য, যার আয়ুষ্কাল হাজার বছর। মাটির গুণগত মান নষ্ট করার পাশাপাশি এটি গাছপালা, পানি এবং শেষ পর্যন্ত মানুষের শরীরে বিষাক্ত রাসায়নিক কণার প্রবেশ ঘটায়।
পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আর্থ ডে নেটওয়ার্কের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্লাস্টিক দূষণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে ১০ নম্বরে। যদিও ২০০২ সালে বিএনপি সরকার পলিথিনের ব্যবহার, উৎপাদন ও বিপণন বন্ধে আইন প্রণয়ন করেছিল, পরবর্তী সময়ে আইন প্রয়োগে শৈথিল্য দেখা দেয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পলিথিনের ব্যবহার আরও বেড়েছে।
সরকারি উদ্যোগ ও বাস্তব চ্যালেঞ্জ
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পলিথিন বন্ধের কার্যক্রম শুরু করেছেন। ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপে এবং ১ নভেম্বর থেকে ঢাকার কাঁচাবাজারে পলিথিন নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তবে কাঁচাবাজারে এই উদ্যোগ সফল হয়নি। ক্রেতাদের দীর্ঘদিনের অভ্যাস এবং বিকল্প ব্যাগের অভাব এর প্রধান কারণ।
পলিথিন উৎপাদন বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাৎক্ষণিক প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। গত সপ্তাহে পুরান ঢাকার চকবাজারে পলিথিন কারখানায় অভিযান চালাতে গিয়ে শ্রমিকদের প্রতিবাদের মুখে পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়। অভিযান চলাকালে তিনটি কারখানার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং ২,৪৬০ কেজি পলিথিন জব্দ করা হয়। কিন্তু শ্রমিকদের দাবি ছিল, কারখানা বন্ধ হলে তারা কোথায় কাজ করবেন।
বিকল্প ব্যবস্থা জরুরি
পলিথিন বন্ধের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট শিল্পের মালিক ও শ্রমিকদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। কারখানা বন্ধ হলে শ্রমিকদের পুনর্বাসনের পথ কী হবে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া ক্রেতাদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে পলিথিনের বিকল্প ব্যাগ সরবরাহের উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে পাটজাত ব্যাগ উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা করা যেতে পারে।
সমন্বিত পরিকল্পনার প্রয়োজন
পলিথিনমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে বিচ্ছিন্ন নয়, বরং একটি সুসংহত ও সমন্বিত পরিকল্পনার প্রয়োজন। পরিবেশ অধিদপ্তর, শিল্পমালিক, শ্রমিক, ক্রেতা এবং নীতিনির্ধারকদের নিয়ে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
পরিবেশ সুরক্ষা এবং কর্মসংস্থান দুটিকেই গুরুত্ব দিয়ে একটি টেকসই সমাধানের দিকে এগোতে হবে। এটি শুধু পরিবেশ রক্ষাই নয়, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
What's Your Reaction?