জনদুর্ভোগ তৈরি করে দাবি জানানো বন্ধ হোক
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পার হয়েছে। এই সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থী, শ্রমিক, চাকরিজীবীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সড়ক অবরোধ করে তাদের দাবিদাওয়া জানাচ্ছেন। সর্বশেষ নজির দেখা গেল গত সোমবার, যখন সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন।
অবরোধ, আন্দোলন ও জনদুর্ভোগ: তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে বিতর্ক
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পার হয়েছে। এই সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থী, শ্রমিক, চাকরিজীবীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সড়ক অবরোধ করে তাদের দাবিদাওয়া জানাচ্ছেন। সর্বশেষ নজির দেখা গেল গত সোমবার, যখন সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন।
ঢাকার যানজট ও সড়ক অবরোধের প্রভাব
ঢাকা শহরের প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ বাসিন্দা এমনিতেই বিশ্বের অন্যতম ধীরগতির শহরে বসবাস করেন। সেখানে সড়ক বন্ধ করে আন্দোলন করলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের মহাখালীতে সড়ক অবরোধের কারণে পুরো শহর কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে। রেলপথে অবরোধের কারণে কয়েক ঘণ্টা বন্ধ ছিল ট্রেন চলাচল।
এ সময় চলন্ত ট্রেনে ইট-পাটকেল নিক্ষেপে নারী ও শিশুসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ধরনের সহিংস আচরণ অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এমন দায়িত্বহীনতা আশা করা যায় না।
আন্দোলনের ঐতিহ্য এবং এর নেতিবাচক দিক
সড়ক অবরোধ করে দাবি আদায়ের রীতি দেশে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। রাজনৈতিক দলগুলো এই ধরনের কর্মকাণ্ডের পথপ্রদর্শক। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, নাগরিকদের অধিকার আদায়ের নামে এসব আন্দোলন তাদের ভোগান্তিই বাড়ায়।
যেকোনো গণতান্ত্রিক সমাজে নাগরিকের দাবিদাওয়া জানানো স্বাভাবিক। তবে সেটি হতে হবে নিয়মতান্ত্রিক ও আইনসম্মত পদ্ধতিতে। যুক্তি এবং সহনশীলতার জায়গা থেকে দাবি আদায় করতে হবে, আবেগ দিয়ে নয়।
শিক্ষার্থীদের দাবি ও সরকারের ভূমিকা
ঢাকার সাত কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করার সিদ্ধান্তটি শিক্ষার্থীদের জন্য চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবি জানাচ্ছেন। তবে এ দাবির পেছনে যৌক্তিকতার চেয়ে আবেগের প্রভাব বেশি।
অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে। ১৩ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা কমিটির সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করাটাই ছিল যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তার আগেই আন্দোলনে নেমে যান, যা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে।
জনদুর্ভোগ রোধে করণীয়
আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীদের উচিত তাদের দাবিদাওয়া ছাত্র প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সরকারের কাছে পেশ করা। সরকারেরও উচিত দ্রুত সাড়া দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খোঁজা।
শিক্ষার্থীদের সহিংসতা বা দায়িত্বহীন আচরণ জনসমর্থন হ্রাস করে। অন্যদিকে, সরকারকেও নিশ্চিত করতে হবে যে জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত না হয়।
উপসংহার
আলাপ-আলোচনাই যেকোনো সমস্যার সমাধানের সর্বোত্তম উপায়। জনদুর্ভোগ বন্ধে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং নাগরিকদেরও নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাদের দাবিদাওয়া জানাতে হবে।
What's Your Reaction?