ভোজ্যতেলে অস্থিরতার নেপথ্যে ৬ কোম্পানি

গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বরের তুলনায় এই বছর ২০ শতাংশ কম সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে। তবুও দেশে পর্যাপ্ত তেল মজুত রয়েছে, যা দিয়ে আরও দুই মাস নির্বিঘ্নে চলতে পারবে। এর পাশাপাশি আগের তেলও মজুত আছে এবং পাইপলাইনে থাকা তেলও রোজার আগে দেশে প্রবেশ করবে।

Dec 8, 2024 - 05:11
 0  7
ভোজ্যতেলে অস্থিরতার নেপথ্যে ৬ কোম্পানি

গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বরের তুলনায় এই বছর ২০ শতাংশ কম সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে। তবুও দেশে পর্যাপ্ত তেল মজুত রয়েছে, যা দিয়ে আরও দুই মাস নির্বিঘ্নে চলতে পারবে। এর পাশাপাশি আগের তেলও মজুত আছে এবং পাইপলাইনে থাকা তেলও রোজার আগে দেশে প্রবেশ করবে। কিন্তু, বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার এবং আমদানি কম হওয়ার অজুহাতে ৬টি কোম্পানি কারসাজি করেছে। তারা রোজার আগেই ডিলারদের কাছে সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, ফলে খুচরা বাজারে তেলের সরবরাহ কমে যায় এবং বোতলজাত তেল বাজার থেকে উধাও হয়ে যায়। যদিও দুই-একটি দোকানে কিছু তেল পাওয়া যায়, তা অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। এর ফলস্বরূপ, খোলা তেলের দামও বৃদ্ধি পায় এবং ক্রেতারা বিপাকে পড়েন।

২০২২ সালের মার্চ মাসে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ভোজ্যতেল নিয়ে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কারসাজির প্রমাণ পেয়েছিল। তখন দেখা যায়, অতি মুনাফা করার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। এরপরও ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে সরকারের পক্ষ থেকে নতুন দাম ঘোষণা করা হয়, যা ক্রেতাদের জন্য অস্বস্তিকর হয়ে দাঁড়ায়।

তথ্য অনুযায়ী, দেশের বার্ষিক ভোজ্যতেলের চাহিদা ২২ লাখ টন, যার মধ্যে ২ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয় এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৩ লাখ টন আমদানি হয়েছে। তবে চলতি বছরের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে আমদানির পরিমাণ ৩ লাখ ৬৮ হাজার টন, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ কম। তবুও দেশে মজুত তেল যথেষ্ট রয়েছে, তারপরও ডিলাররা সরবরাহ বন্ধ রাখার কারণে খুচরা পর্যায়ে সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, "সঙ্কটের কোনো কারণ নেই, বরং কোম্পানিগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে।"

শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, তেলের বোতল নেই বা অত্যধিক দামে বিক্রি হচ্ছে। মুদি দোকানগুলোতে এক লিটার সয়াবিন তেল ১৬৭-১৭০ টাকা এবং ৫ লিটার বোতল ৮১৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, শুল্ক-কর কমানোর পরেও বাজারে তেলের দাম কমেনি, বরং সংকট সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলেছে, তারা বাজারে তেলের সরবরাহ সংকট নিয়ে তদন্ত করছে এবং অনিয়ম পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত বছর একই সময়ের (অক্টোবর-নভেম্বর) তুলনায় সয়াবিন তেলের আমদানি ২০ শতাংশ কমেছে। তবে এখনও যে পরিমাণ তেল মজুত আছে, তা দিয়ে আরও দুই মাস চলা সম্ভব। তাছাড়া আগের মজুত তেল এবং পাইপলাইনে থাকা তেলও রোজার আগেই দেশে প্রবাহিত হবে। তবুও, বিশ্ববাজারে দাম বাড়া এবং আমদানি কম হওয়ার অজুহাতে ৬টি কোম্পানি কারসাজি করেছে। রোজা শুরুর চার মাস (নভেম্বর) আগে থেকেই ডিলারদের কাছে পর্যাপ্ত সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় খুচরা বাজারেও সরবরাহ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে বোতলজাত তেল বাজার থেকে প্রায় উধাও হয়ে গেছে এবং দামের উপর চাপ পড়েছে। কিছু দোকানে পাওয়া গেলেও তা বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। খোলা তেলের দামও বেড়েছে, যার ফলে ক্রেতারা বিপাকে পড়েছেন।

২০২২ সালে মার্চে, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ভোজ্যতেল নিয়ে আমদানিকারক ও উৎপাদক ছয়টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কারসাজির প্রমাণ পায়। তখন দেখা যায়, বাজারে তেলের সরবরাহ কমিয়ে সিন্ডিকেটগুলো অতি মুনাফা করতে চায়, যা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। এসময় প্রতিলিটার সয়াবিন তেলের দাম ২১০-২২০ টাকা ছিল। তেল ব্যবসায়ীদের স্বার্থে মন্ত্রণালয় নতুন দাম ঘোষণা করে, যা ক্রেতাদের জন্য অস্বস্তির সৃষ্টি করে।

ট্যারিফ কমিশনের তথ্যমতে, দেশে ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা ২২ লাখ টন, যার মধ্যে ২ লাখ টন উৎপাদন হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ২৩ লাখ টন তেল, তবে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে আমদানি কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় ৪ লাখ ৬০ হাজার টনের পরিবর্তে ৩ লাখ ৬৮ হাজার টন। তেল মজুত থাকা সত্ত্বেও আমদানিকারকরা সরবরাহ বন্ধ রাখায় খুচরা পর্যায়ে সংকট দেখা দিয়েছে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, সংকটের কোনো কারণ নেই। তিনি জানান, বিভিন্ন কোম্পানি সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর জন্য সরবরাহ বন্ধ রেখেছে এবং সরকারকে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে।

রাজধানীর একাধিক খুচরা বাজারে দেখা গেছে, বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট রয়েছে এবং দোকানিরা তা বেশি দামে বিক্রি করছেন। খোলা তেলের দামও বেড়েছে। এরই মধ্যে, রামপুরা বাজারের মুদি বিক্রেতা জানান, খুচরা বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে এবং সংকট তৈরি করা হয়েছে।

এদিকে, সরকার ভোজ্যতেলের সরবরাহ বাড়াতে শুল্ক-কর কমালেও বাজারে তেলের দাম কমেনি এবং সরবরাহ কমে গিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার তাসলিম জানান, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে এবং কোম্পানিগুলো লোকসান ঝুঁকিতে থেকেও সরবরাহ বাড়িয়েছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাজারে তেলের সংকট নিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং অনিয়ম প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow