শহীদুলের মাধ্যমে ৪৭৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় বেক্সিমকো, কে তিনি?
প্রায় ৪ বছর আগে, সরকারি মার্চেন্ট ব্যাংক ‘জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড’-এর বর্তমান সিএফও শহীদুল হককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, যা ছিল বিধি লঙ্ঘন। তার tenure-এ বেক্সিমকো শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে ৪৭৭ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় এই প্রতিষ্ঠানটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়েছিল।
প্রায় ৪ বছর আগে, সরকারি মার্চেন্ট ব্যাংক ‘জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড’-এর বর্তমান সিএফও শহীদুল হককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, যা ছিল বিধি লঙ্ঘন। তার tenure-এ বেক্সিমকো শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে ৪৭৭ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় এই প্রতিষ্ঠানটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়েছিল।
চার বছর আগে, বিধি লঙ্ঘন করে জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. এসএম মাহফুজুর রহমান নিজের আত্মীয়, বর্তমান সিএফও শহীদুল হককে নিয়োগ দেন। তার আমলেই বেক্সিমকো শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে ৪৭৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় এই প্রতিষ্ঠানটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। এছাড়া, শহীদুল হকের নিয়োগের পেছনে যে অনিয়ম হয়েছে, তা জনতা ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তে উঠে এসেছে।
জনতা ব্যাংক ও এর সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের (জেসিআইএল) নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছে। ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর, জনতা ব্যাংক একটি ইংরেজি দৈনিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেখানে সিএফও পদে প্রার্থী হতে চাইলে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি, ১৫ বছরের পেশাগত অভিজ্ঞতা এবং মার্চেন্ট ব্যাংকিংয়ের ৫ বছরের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু শহীদুল হক, যিনি সিএফও পদে নিয়োগ পান, তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা এই শর্তগুলো পূরণ করেননি। তার শিক্ষা ছিল বিকম (পাশ), তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ এবং পেশাগত অভিজ্ঞতা ছিল ১৫ বছরের চেয়ে কম। তবুও, তিনি নিয়োগ পেয়েছেন, যা সরকারি বিধান ভঙ্গের জন্য ব্যাপক সমালোচিত।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, শহীদুল হকসহ অন্য দুটি প্রার্থীও পূর্ণ যোগ্যতা অর্জন করেননি। তারপরও, তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এটি ছিল সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত এবং ব্যাংক কর্তৃপক্ষের এক ধরনের অবহেলা। পরবর্তীতে শহীদুল হককে নিয়োগ দেওয়া হয়ে দুটি বছরের জন্য, যদিও প্রথমে তার নিয়োগ ছিল এক বছরের জন্য। পরবর্তীতে, তার বেতন-বোনাস ও অন্যান্য সুবিধা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩ সালে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ আরও তিন বছরের জন্য বাড়ানো হয়।
এই নিয়োগের অনিয়ম নিয়ে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, শহীদুল হকের নিয়োগের জন্য গঠিত কমিটির দুই এক্সটার্নাল সদস্য সরাসরি বিরোধিতা করেছিলেন, তবুও তৎকালীন চেয়ারম্যান ও এমডি তাদের সিদ্ধান্তে স্থিতি বজায় রাখেন এবং এই বিতর্কিত নিয়োগ সম্পন্ন হয়। শহীদুল হক এর বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং দাবি করেছেন যে সব নিয়ম মেনে তার নিয়োগ হয়েছে।
এ বিষয়ে জনতা ব্যাংকের হিউম্যান রিসোর্স ডিপার্টমেন্ট একটি তদন্ত শুরু করেছে। এই তদন্তে জানানো হয়েছে, সরকারি বিধান অনুযায়ী, তৃতীয় শ্রেণির ডিগ্রিপ্রাপ্ত কোনো প্রার্থী জনতা ব্যাংকের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যোগ্য বিবেচিত নয়। তবে, প্রাথমিকভাবে এই নিয়োগে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার প্রভাব পড়েছে।
এছাড়া, শহীদুল হকের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি বেক্সিমকো শেয়ার কারসাজির ঘটনায় ৪৭৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার জন্য জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডকে ব্যবহার করেছেন। সম্প্রতি, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এই ঘটনায় ৪২৮ কোটি টাকার বেশি জরিমানা করেছে।
জনতা ব্যাংকের একটি সূত্র জানিয়েছে, শহীদুল হকের বর্তমান বেতন সাধারণত জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এর বেতন অপেক্ষা বেশি, যা যুক্তিসংগত নয়। এছাড়া, তিনি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা ও বোনাস পেয়ে থাকেন। ২০২৩ সালে তার মাসিক আর্থিক সুবিধা ৪ লাখ টাকার বেশি ছিল।
What's Your Reaction?