চলে গেলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক
জাকারিয়া পিন্টু—একটি ইতিহাসের নাম। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক, মুক্তিযোদ্ধা, রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ফুটবলার, এবং বাংলাদেশ ফুটবলের এক অনন্য আইকন। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে।
জাকারিয়া পিন্টু—একটি ইতিহাসের নাম। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক, মুক্তিযোদ্ধা, রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ফুটবলার, এবং বাংলাদেশ ফুটবলের এক অনন্য আইকন। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) বেলা পৌনে ১২টায় ধানমন্ডির শংকরে ইবনে সিনা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আগের দিন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাসায় পড়ে যান পিন্টু। তার ছেলে তানভীর তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও আর প্রাণে বাঁচানো যায়নি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।
স্মরণ ও শ্রদ্ধা
তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শোক জানিয়েছে তার প্রিয় ক্লাব মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে), এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
ধানমন্ডির একটি মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আজ সকালে মোহামেডান ক্লাব প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় জানাজা ও জাতীয় প্রেস ক্লাবে তৃতীয় জানাজার পর তাকে মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে।
ফুটবলের জন্য নিবেদিত জীবন
১৯৪৩ সালের ১ জানুয়ারি নওগাঁ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন জাকারিয়া পিন্টু। তবে শৈশব কাটে বরিশালে। ১৯৬০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান জাতীয় দলের হয়ে প্রথমবারের মতো মাঠে নামেন তিনি। ডিফেন্ডার হিসেবে প্রতিপক্ষের স্ট্রাইকারদের দমনে ছিলেন অপ্রতিরোধ্য।
১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ফুটবল দলের অধিনায়ক হন তিনি। তার নেতৃত্বে দল প্রথমবার আন্তর্জাতিক শিরোপা, নেপালের কিং মহেন্দ্র কাপ, জয় করে। ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক ঘটে তার।
মুক্তিযুদ্ধে গৌরবময় ভূমিকা
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জনমত গঠন এবং তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে জাকারিয়া পিন্টু স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের নেতৃত্ব দেন। এই দল ভারতের বিভিন্ন স্থানে ১৬টি ম্যাচ খেলেছিল এবং ম্যাচ থেকে প্রাপ্ত অর্থ মুক্তিযুদ্ধের তহবিলে দান করেছিল।
১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই ভারতের নদীয়া জেলা একাদশের বিপক্ষে ম্যাচ শুরুর আগে জাকারিয়া পিন্টু বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উত্তোলনের গৌরব অর্জন করেন। এটি ছিল বিদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানোর ঘটনা।
স্বাধীন বাংলাদেশের ফুটবলে অবদান
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে মালয়েশিয়ার মারদেকা কাপে দলের নেতৃত্ব দেন জাকারিয়া পিন্টু। ১৯৭২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম ফুটবল ম্যাচেও তিনি ছিলেন অধিনায়ক।
খেলোয়াড়ি জীবনের পর তিনি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সংগঠক এবং বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া নিজের নামে একটি ফুটবল একাডেমি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে ফুটবলে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।
জীবনের শেষ দিনগুলো
জাকারিয়া পিন্টু ডায়াবেটিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের ক্রীড়া অঙ্গনে এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো।
জাকারিয়া পিন্টু শুধু একজন ফুটবল খেলোয়াড়ই ছিলেন না, ছিলেন বাংলাদেশের ফুটবলের ইতিহাসের এক অমর অধ্যায়। তার অবদান ও স্মৃতি চিরকাল প্রেরণা হয়ে থাকবে।
What's Your Reaction?