বিদেশ থেকে ব্যর্থ হয়ে দেশে ফিরে মুরগির খামারে সফল জাহাঙ্গীরের গল্প
রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম বাংলাদেশ হাটের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন ছোটবেলা থেকেই ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু বাবার অকালমৃত্যু ও আর্থিক সংকটে তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জীবিকার সন্ধানে মালদ্বীপে পাড়ি জমালেও সেখানে আশানুরূপ সফলতা পাননি। দেশে ফিরে আবারও উন্নত দেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু দালালের খপ্পরে পড়ে ভারত গিয়ে বুঝতে পারেন, পথটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই সেখান থেকে ফিরে আসার পর জীবনযুদ্ধে দিনমজুর হিসেবে কাজ শুরু করেন।
দীর্ঘদিন বিভিন্ন মুরগির খামারে কাজ করার সময় মুরগি পালনের বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। একপর্যায়ে খামারিদের কাছ থেকে উপহার পাওয়া দুই জোড়া বিদেশি জাতের মুরগি দিয়ে ২০১২ সালে নিজ বাড়িতে মুরগি পালন শুরু করেন।
অবিশ্বাস্য সংগ্রহ ও সফলতা
সরেজমিনে দেখা যায়, জাহাঙ্গীরের খামারে বর্তমানে ৭০ প্রজাতির বিদেশি মুরগি রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো উইন্ডোট, সেব্রাইট, ব্রাহামা, সিল্কি, পলিস ক্যাপ, সেরমাস ইত্যাদি। এসব মুরগির দাম ২০ হাজার থেকে লাখ টাকার মধ্যে। তার খামারে ৯টি ময়ূরও আছে।
জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, তিনি ২০১৬ সাল থেকে ব্যবসায়িকভাবে খামার পরিচালনা করছেন। বর্তমানে তার খামারে ২০০ থেকে ৩০০ মুরগি রয়েছে। প্রতি মাসে তার খরচ হয় প্রায় এক লাখ টাকা। খরচ বাদ দিয়ে মাসভেদে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়।
ময়ূরের পালন ও বাজারমূল্য
ময়ূর পালন সম্পর্কে জাহাঙ্গীর বলেন, মার্চ-এপ্রিল মাসে সাধারণত ময়ূরের ডিম পাড়ার মৌসুম শুরু হয়। তবে তার খামারের দুটি ময়ূর এখন ডিম দিচ্ছে। বয়স্ক ময়ূর জোড়া বিক্রি হয় ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকায়, আর ছোট ময়ূর ২০-৫০ হাজার টাকায়।
বেকারদের জন্য পরামর্শ
জাহাঙ্গীর মনে করেন, যারা বেকার তারা তার মতো দুই জোড়া মুরগি নিয়ে ছোট আকারে খামার শুরু করতে পারেন। এতে বেকারত্ব কমবে এবং আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের সহযোগিতা
কালুখালীর নবাগত উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম রতন জানান, জাহাঙ্গীর একটি উদাহরণ। তার খামারে থাকা মুরগি অন্যদের থেকে ব্যতিক্রম। তিনি নিজেই ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে তা বিক্রি করেন।
তিনি আরও বলেন, "শিক্ষিত বেকার যুবকরা জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে বিদেশি মুরগি পালন শুরু করলে স্বাবলম্বী হতে পারবেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে তার খামারকে সার্বিক সহায়তা দেওয়া হবে।"
উপসংহার
জাহাঙ্গীর হোসেনের এই সফলতার গল্প প্রমাণ করে, ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রম থাকলে যে কেউ সীমিত সুযোগ থেকে বড় কিছু করতে পারে। দেশের বেকার যুবকদের জন্য এটি হতে পারে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা।