কারা আসছে চট্টগ্রামের নিউমুরিং টার্মিনাল পরিচালনায়
২০০৭ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) স্থাপন করা হয়েছিল কনটেইনার ওঠানো-নামানোর জন্য। শুরুতে বিদেশি প্রতিষ্ঠান নিয়োগের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলেও তৎকালীন নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এবং সংসদীয় কমিটির সভাপতি নূরে আলম চৌধুরীর হস্তক্ষেপে সেই প্রক্রিয়া বাতিল হয়ে যায়। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগ থেকে দেশের উপকারের সুযোগ হারানো হয়। পরে বন্দর কর্তৃপক্ষ দেশি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব দেয় এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনতে প্রায় ১৫ বছর সময় নষ্ট হয়। ২০২৩ সালে অবশেষে যন্ত্রপাতি কেনা হয় এবং প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ করা হয়।
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল: বিদেশি বিনিয়োগের প্রক্রিয়া ও বিতর্ক
২০০৭ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) স্থাপন করা হয়েছিল কনটেইনার ওঠানো-নামানোর জন্য। শুরুতে বিদেশি প্রতিষ্ঠান নিয়োগের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলেও তৎকালীন নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এবং সংসদীয় কমিটির সভাপতি নূরে আলম চৌধুরীর হস্তক্ষেপে সেই প্রক্রিয়া বাতিল হয়ে যায়। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগ থেকে দেশের উপকারের সুযোগ হারানো হয়। পরে বন্দর কর্তৃপক্ষ দেশি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব দেয় এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনতে প্রায় ১৫ বছর সময় নষ্ট হয়। ২০২৩ সালে অবশেষে যন্ত্রপাতি কেনা হয় এবং প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ করা হয়।
বর্তমানে, বিদেশি অপারেটরের হাতে টার্মিনালটি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যেখানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) ডিপি ওয়ার্ল্ড প্রতিষ্ঠানটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে (পিপিপি) পরিচালনার দায়িত্ব পেতে যাচ্ছে। এই সিদ্ধান্তটির বিরুদ্ধে কিছু মহল প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং বিভিন্ন বিক্ষোভ সমাবেশও হয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গুরুত্ব বিবেচনায় এবং আমিরাতের দক্ষতার কারণে এটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বিশ্বমানের দক্ষতা ও বাংলাদেশের স্বার্থ
নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালটি দেশের সবচেয়ে বড় টার্মিনাল, যেখানে চারটি কনটেইনার জাহাজ একসঙ্গে ভেড়ানো সম্ভব। ভারতীয় সাইফ পাওয়ারটেক বর্তমানে এটি পরিচালনা করছে, তবে এখন বিদেশি বিনিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান। এ বিষয়ে সরকার জানিয়েছে, কেবল আয়-ব্যয়ের হিসাব নয়, বরং দেশের সামগ্রিক স্বার্থ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে প্রবাসী আয় এবং বাংলাদেশের জন্য ইউএইর প্রতিশ্রুতির কারণে সরকার এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে।
বিপক্ষে মন্তব্য ও দেশের স্বার্থ
বিভিন্ন পক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধিতা করে বলছে, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে দেশি অপারেটরদের সফলতা রয়েছে। বার্থ অপারেটরসের সংগঠন মনে করে, স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতির সুবিধা থাকায় দেশি অপারেটররা টার্মিনালটি চালাতে সক্ষম, এবং এতে দেশের স্বার্থ রক্ষা হবে।
আয়ের সম্ভাবনা ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা
বর্তমানে, নিউমুরিং টার্মিনাল থেকে বার্ষিক আয় প্রায় ৫৭৪ কোটি টাকা। যদি বিদেশি অপারেটরদের মাধ্যমে পরিচালনা শুরু হয়, তবে সেখানে নতুন বিনিয়োগ এবং উন্নয়ন আসবে, যা বন্দর কার্যক্রমে দক্ষতা বৃদ্ধি করবে। ইতোমধ্যে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনালকে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের মতো সৌদি আরবের মাধ্যমে একই মডেলে পরিচালনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
সামনে কি হবে?
সাবেক চট্টগ্রাম বন্দর সদস্য মো. জাফর আলম জানান, দেশের উন্নয়নের স্বার্থে বন্দর বা টার্মিনাল নির্মাণে বিদেশি বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, বিদেশি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে হলে রাজনৈতিক ও জাতীয় স্বার্থে আরো আলোচনা এবং সতর্ক সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।
এই প্রক্রিয়ায় যদি বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া যায়, তাহলে দেশীয় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য, বৈদেশিক সম্পর্ক এবং প্রবাসী আয় অনেক ক্ষেত্রে উপকৃত হবে।
What's Your Reaction?