পানামা খালের দখল নেওয়ার পেছনে কী যুক্তি দেখাচ্ছেন ট্রাম্প?
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পানামা খালের ব্যবহার ফি কমানোর অথবা এটি যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পানামা খালের ব্যবহার ফি কমানোর অথবা এটি যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।
তার অভিযোগ, মধ্য আমেরিকার এই দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজ এবং অন্যান্য নৌযান থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করছে। তিনি বলেন, পানামা যে ফি আদায় করছে, তা হাস্যকর এবং অন্যায্য।
রোববার অ্যারিজোনায় এক সমাবেশে ট্রাম্প তার সমর্থকদের বলেন, পানামা এই খালে চলাচলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজগুলোর কাছ থেকে অত্যধিক অর্থ নিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, তিনি এই খালকে ভুল হাতে যেতে দেবেন না এবং চীনের সম্ভাব্য হুমকির কথাও উল্লেখ করেন।
অ্যারিজোনার ইভেন্টের পর তিনি তার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ স্যোশালে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা সহ একটি ছবি পোস্ট করেন এবং লিখেন, "যুক্তরাষ্ট্রের খালে আপনাকে স্বাগত।"
অ্যামেরিকা ফেস্টে ট্রাম্প বলেন, "কেউ কি পানামা খালের কথা শুনেছেন? আমরা এই খালকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছি।"
এটি মার্কিন কোনো নেতার জন্য একটি বিরল মন্তব্য, কারণ তিনি অন্য একটি সার্বভৌম দেশকে তাদের একটি অংশ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিতে বলছেন। এই মন্তব্যটি ট্রাম্পের আমলে কূটনীতির একটি মৌলিক পরিবর্তন হতে পারে এমন সম্ভাবনাও নির্দেশ করছে।
ট্রাম্প জানান, পানামা খাল একসময় আমেরিকার নিয়ন্ত্রণে ছিল, কিন্তু কয়েক দশক আগে এটি পানামা এবং তার জনগণের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল, যদিও এতে কিছু শর্ত ছিল।
তিনি বলেন, "যদি নৈতিক ও আইনগতভাবে এই সিদ্ধান্তের মর্যাদা রাখা না হয়, তাহলে আমরা দাবি করব যে, পানামা খাল দ্রুত এবং কোনো প্রশ্ন ছাড়াই আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।"
পানামার প্রতিক্রিয়া
পানামার প্রেসিডেন্ট জোস রাউল মুলিনো একটি রেকর্ড করা বার্তায় বলেছেন, পানামার স্বাধীনতা নিয়ে কোনো আলোচনা হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, এই খালের নিয়ন্ত্রণ এবং প্রশাসনে চীনের কোনো প্রভাব নেই।
তিনি জানান, পানামা খালে চলাচলের রেট বাড়ানো মর্জিমাফিক হয়নি। তবে, হংকংভিত্তিক হ্যাচিসন হোল্ডিং বহু বছর ধরে ক্যারিবিয়ান ও প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে পানামা খালের প্রবেশপথে দুটি বন্দর পরিচালনা করছে।
মার্কিন নিয়ন্ত্রণে ছিল
যুক্তরাষ্ট্র এই খালটি খনন করেছিল এবং বহু দশক ধরে এটি তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু ১৯৭৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং পানামার মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার ফলে খালটি পানামার নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত এটি যৌথভাবে পরিচালিত হয়েছিল, এরপর পুরোপুরি পানামার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
মুলিনো এক্স-এ লিখেছেন, "পানামা খাল এবং তার আশপাশের প্রতিটি ইঞ্চি জমি পানামার অধিকারী।"
ট্রাম্প তার জবাবে বলেন, "এটা এবার আমরা দেখব।"
এই জলপথটি বছরে ১৪ হাজার জাহাজের চলাচল পরিচালনা করে। আমেরিকান গাড়ি এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব বিশাল। তবে এখনো স্পষ্ট নয়, ট্রাম্প কীভাবে এই খালের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে চান। যদি তিনি এমন কোনো পদক্ষেপ নেন, তা আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী হতে পারে।
What's Your Reaction?