কোন বয়সের শিশুকে ঘরের কী কাজ করাবেন
গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সের চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাকিয়া সুলতানা জানান, ছোটখাটো ঘরের কাজের মাধ্যমে একদিকে শিশু যেমন স্বনির্ভর হয়ে ওঠে, অন্যদিকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা অর্জন করে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন,
গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সের চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাকিয়া সুলতানা জানান, ছোটখাটো ঘরের কাজের মাধ্যমে একদিকে শিশু যেমন স্বনির্ভর হয়ে ওঠে, অন্যদিকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা অর্জন করে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘ধরা যাক, বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আজ তুমি কী খাবে? অথবা তিনটি ড্রেসের মধ্যে কোনটি পরতে চাও? তখন বাচ্চা মস্তিষ্ককে কাজে লাগিয়ে যুক্তির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিবে এবং বুঝবে যে তার মতামতও গুরুত্বপূর্ণ। আবার, যদি আমরা গল্প করি এবং একদিন বলা হয়, "আজ তুমি একটি গল্প বলো," তখন বাচ্চার কল্পনার দুনিয়া খুলে যাবে এবং তার মধ্যে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে হবে।’
জাকিয়া সুলতানা আরও বলেন, ‘আমি বোধহয় পারব না’—এ ধরনের ভয় শিশুর মনে আসে যখন অভিভাবকরা কখনো বলেন, ‘থাক, আমাকে দাও। আমি করি। তুমি পারবে না।’ এভাবেই বাবা-মায়ের অবিশ্বাস শিশুর আত্মবিশ্বাসে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। অথবা কখনো সন্তানকে কাজ করতে দেওয়া হয় না, ফলে তাদের মধ্যে বিশ্বাস ও দায়িত্ববোধের অভাব হয়।
তিনি আরও জানান, যদি কোনো কাজ শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয় এবং সে কাজটি করতে চায়, তাহলে তাকে বুঝিয়ে বলা প্রয়োজন। তবে কিছু সহজ কাজ যেমন স্কুলের ব্যাগ গোছানো, খাবার খাওয়া, প্লেট ধোয়া, জামাকাপড় গুছানো—এসব কাজ শিশুরা সহজেই করতে পারে।
শিশুকে ছোট ছোট কাজ দিন
- শিশুকে সহজ ও ছোট ছোট কাজ দিন, যা তাদের জন্য করতে পারা সম্ভব হয়।
- নিয়মিত কাজের মাধ্যমে শিশুর আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠবে এবং সঠিক সময়ে কাজটি শেষ করলে তাদের প্রশংসা করুন।
- নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া যেমন ধমক বা বকা না দিয়ে, কাজ না পারলে নতুন করে চেষ্টা করতে বলুন।
- কাজের মধ্যে যেন শিশুর আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়, তা নিশ্চিত করুন।
শিশুর বয়স অনুযায়ী কাজের ধরন:
- ২ থেকে ৩ বছর: খেলনা গুছিয়ে রাখা, ফল বা সবজি ফ্রিজে রাখার সময় শিশুকে সাহায্য করতে বলুন। নিজের শার্ট পরতে বলা।
- ৪ থেকে ৫ বছর: নিজে খেলনা গুছিয়ে রাখা, পোষা প্রাণীকে গোসল করাতে সাহায্য করা, ময়লা বা আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে শেখানো, টুকিটাকি আনা-নেওয়া করা।
- ৬ থেকে ৮ বছর: ময়লা জায়গা মুছে রাখা, ময়লা জামাকাপড় লন্ড্রি বক্সে রাখা, নিজের বিছানা গুছানো।
- ৯ থেকে ১০ বছর: বাসনপত্র পরিষ্কার করা, জামাকাপড় গুছিয়ে রাখা, নিজের খাবার টিফিন বক্সে ভরা, নিজের ছোট ছোট সিদ্ধান্ত নেওয়া।
- ১০ বছরের উপরে: বাজার করতে সাহায্য করা, জামাকাপড় পরিষ্কার করা, ছোট রান্না করা, পোষা প্রাণীর যত্ন নেওয়া।
শিশুকে ঘরের কাজে যুক্ত করার গুরুত্ব:
জীবনের বিকাশের জন্য শিশুকে ঘরের কাজে সাহায্য করানো অত্যন্ত জরুরি। ঘরের কাজের সহায়ক বা ন্যানি থাকলেই শিশুর বিকাশ হয় না, বরং বাবা-মায়ের সঙ্গেও সম্পর্ক আরও গভীর হয়। এটি শিশুর আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে এবং তাকে দায়িত্বশীল হতে শিখায়।
ডা. হাবিব আবদুল্লাহ, শিশুবিশেষজ্ঞ ও সাইকোলজিস্ট বলেন, "অভিভাবকরা যখন সব বাধা সরিয়ে দেয় এবং সব সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়, তখন শিশুর শৈশব হয়ে ওঠে দুর্বল। তাদের নিজস্ব ভার্সন হয়ে গড়ে ওঠার সুযোগ দেওয়া উচিত। শিশুকে ছোটবেলা থেকেই ঘরের কাজে যুক্ত করা, তাকে দায়িত্বশীল করে গড়ে তোলা, তার শৈশব আনন্দময় করে তোলে এবং ভবিষ্যতে তাকে সুখী ও সফল হতে সাহায্য করে।"
What's Your Reaction?