চট্টগ্রামে বন্দর ব্যবসা আওয়ামী লীগ নেতার নিয়ন্ত্রণে, তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের আধিপত্য
চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার ওঠানো-নামানোর ব্যবসা ১৭ বছর ধরে সাতটি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটিতে আওয়ামী লীগ নেতা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের মালিকানা রয়েছে। অন্যদিকে, কিছু প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের মালিকানা দেখা যায়।
চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার ওঠানো-নামানোর ব্যবসা ১৭ বছর ধরে সাতটি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটিতে আওয়ামী লীগ নেতা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের মালিকানা রয়েছে। অন্যদিকে, কিছু প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের মালিকানা দেখা যায়।
এতে দেখা যায় যে, এসব প্রতিষ্ঠান কখনো ‘নামকাওয়াস্তে’ ডাক দিয়ে দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদারি কাজ পেয়েছে, আবার কখনো সরাসরি দরপত্রের মাধ্যমে তাদেরকে কাজ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে কার্যত প্রতিযোগিতার অভাব দেখা দিয়েছে, যা বন্দরে কনটেইনার ব্যবস্থাপনায় ব্যয় বাড়িয়েছে। এই বাড়তি ব্যয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে।
এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি হলো সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড। বন্দরসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিন আওয়ামী লীগ সরকারের নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ও স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি।
এম এইচ চৌধুরী লিমিটেড এবং বশির আহমেদ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড নামক দুই প্রতিষ্ঠানের মালিকানা রয়েছে চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং তার পরিবারের সদস্যদের।
নোয়াখালী সদর আসনের সাবেক আওয়ামী লীগ সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরী মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এ অ্যান্ড জে ট্রেডার্স। অন্যদিকে, এফ কিউ খান অ্যান্ড ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু শরীফের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা তেমন নেই। ফজলীসন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে ইকরাম চৌধুরী চট্টগ্রামের প্রভাবশালী চৌধুরী পরিবারের সদস্য। এ পরিবারটি আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কাজ তিনটি টার্মিনালের ১২টি জেটির মাধ্যমে হয়ে থাকে। সবচেয়ে বড় এবং সরঞ্জামসমৃদ্ধ নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) চারটি এবং চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) দুটি জেটির কার্যক্রম সাইফ পাওয়ার টেক নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া জেনারেল কার্গো বার্থের (জিসিবি) ছয়টি জেটি বাকি ছয়টি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ১৭ বছরে এই ক্ষেত্রে কোনও পরিবর্তন আসেনি।
কনটেইনার ওঠানো-নামানোর জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অর্থ পায়, যা দরপত্রের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। প্রকৃত প্রতিযোগিতা হলে কনটেইনার ব্যবস্থাপনার ব্যয় অনেক কমে আসবে বলে মনে করেন বন্দরসংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, কনটেইনার ব্যবসায় বিনিয়োগের পরিমাণ কম, কিন্তু লাভ নিশ্চিত। সরকারঘনিষ্ঠরা বেশি দামে কাজ পেয়েছেন এবং এই অর্থের পরিমাণ দুই হাজার কোটি টাকারও বেশি। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে অন্য কাউকে সেখানে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়নি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। অন্তর্বর্তী সরকারের নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন গত ৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দরের পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বন্দরের সব দরপত্র এখন থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে হবে। শর্তগুলি পর্যালোচনা করা হবে যাতে একই প্রতিষ্ঠান বারবার কাজ না পায়। তিনি আরও জানান, বন্দরে বহু অনিয়ম ঘটেছে এবং অনেক লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, সবকিছু নজরে আছে।
সাইফ পাওয়ারটেকের পেছনে আওয়ামী লীগ নেতাদের ভূমিকা
সাইফ পাওয়ারটেকের মালিকানাধীন ছয়টি জেটির মাধ্যমে বন্দরের ৬৫ শতাংশ কনটেইনার ওঠানো-নামানো হয়। ২০০৬ সালে সাইফ পাওয়ারটেক বন্দরে গ্যান্ট্রি ক্রেন পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ শুরু করে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রতিষ্ঠানটি সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়ে এসেছে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, সংসদীয় কমিটি ও বন্দরের কর্মকর্তারা কীভাবে সাইফ পাওয়ারটেককে কাজ পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করতেন, তার একটি বড় উদাহরণ হচ্ছে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনা–সংক্রান্ত দরপত্র। বাংলাদেশে প্রথম বন্দরকেন্দ্রিক বিদেশি বিনিয়োগ এই নিউমুরিং টার্মিনালে হওয়ার কথা ছিল। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এই কাজ এগিয়ে নিলে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নূর-ই-আলম চৌধুরী ও নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের হস্তক্ষেপে দরপত্রের প্রক্রিয়া বাতিল হয়। টার্মিনালটি চালু করতে আরও ছয় বছর লেগে যায়।
২০১৫ সালে বন্দর কর্তৃপক্ষ টার্মিনালের চারটি জেটিকে দুই প্যাকেজে ভাগ করে দরপত্র আহ্বান করে। দরপত্রের শর্ত এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল যাতে সাইফ পাওয়ারটেক ছাড়া অন্য কেউ নির্বাচনে যোগ্য না হতে পারে।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ওই সময় একটি দরপত্রে আ জ ম নাছিরের প্রতিষ্ঠান এম এইচ চৌধুরী লিমিটেড (৩০ শতাংশ) ও একরামুল করিম চৌধুরীর প্রতিষ্ঠান এ অ্যান্ড জে ট্রেডার্স (৩০ শতাংশ) সাইফ পাওয়ারটেকের সঙ্গে অংশীদার হয়ে কাজ করেছে।
নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের কাজ সাইফ পাওয়ারটেকের নিয়ন্ত্রণে
নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার জন্য দুটি কাজের চুক্তিমূল্য ছিল প্রায় ৯৯ কোটি টাকা। এর জন্য সাইফ পাওয়ারটেককে মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন ছাড়াই কাজ দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে আপত্তি জানানো হলেও তৎকালীন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বিষয়টি 'ম্যানেজ' করেন বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নূর-ই-আলম চৌধুরী আত্মগোপনে চলে যান, আর শাজাহান খান গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। ফলে তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার জন্য আর কখনো দরপত্র ডাকা হয়নি। বরং সরাসরি ক্রয়পদ্ধতির মাধ্যমে ছয় মাস মেয়াদে সাইফ পাওয়ারটেককে কাজ দেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ গত জুলাইয়ে ১১তম বারের মতো সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ দেওয়া হয়, যার মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৭ জানুয়ারি। সব মিলিয়ে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার কাজের চুক্তিমূল্য দাঁড়িয়েছে ৯০২ কোটি টাকা। উল্লেখ্য, সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের মাধ্যমে কাজ দেওয়া হয় এবং এতে দরপত্র প্রক্রিয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
এই অভিযোগ সত্য হলে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সালমান এফ রহমানের হস্তক্ষেপে নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশি অপারেটরকে দেওয়ার প্রক্রিয়া কেন শুরু হয়েছিল?
তরফদার রুহুল আমি
চট্টগ্রাম বন্দরের কাজ সাইফ পাওয়ারটেকের নিয়ন্ত্রণে ১৭ বছর ধরে
গত ১৭ বছরে চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনালের কাজ সমঝোতা, দরপত্র এবং সরাসরি ক্রয়পদ্ধতির মাধ্যমে বারবার সাইফ পাওয়ারটেক পেয়েছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি ছয় বছরের জন্য প্রায় ৩০৪ কোটি টাকায় টার্মিনালটি পরিচালনার দায়িত্ব পায়, যা আগামী বছরের নভেম্বরে শেষ হবে।
সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, তারা যোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে দরপত্রের মাধ্যমে অনেক কাজ পেয়ে থাকেন। সরাসরি ক্রয়পদ্ধতির কাজ নিতে চান না। তিনি উল্লেখ করেন, "২০২২ সালে আমরা বন্দরের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি যাতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়।"
আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালীদের কাছে কাজ পাওয়ার অভিযোগের জবাবে রুহুল আমিন বলেন, “যদি এই অভিযোগ সত্য হয়, তবে সালমান এফ রহমানের হস্তক্ষেপে নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশি অপারেটরকে দেওয়ার প্রক্রিয়া কেন শুরু হয়েছিল?”
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, সরকারি কাজের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ছিলেন একটি পক্ষের প্রভাবশালী ব্যক্তি। তরফদার রুহুল আমিন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই নূর-ই-আলম চৌধুরীর (লিটন চৌধুরী নামে পরিচিত) সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন।
তরফদার রুহুল আমিন চট্টগ্রাম আবাহনীর পৃষ্ঠপোষকতা শুরু করেন যাতে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীদের কাছে নিকটবর্তী হওয়া যায়। ২০১৪ সালে তিনি চট্টগ্রাম আবাহনীর ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান হন এবং পরবর্তী বছর শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে পৃষ্ঠপোষকতা করেন। পরে তিনি সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব নামের একটি ফুটবল দলও গঠন করেন। সূত্র বলছে, ফুটবলে পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে শেখ পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে দিয়েছেন চট্টগ্রাম আবাহনীর মহাসচিব শামসুল হক চৌধুরী, যিনি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন।
এছাড়া, সাইফ পাওয়ারটেক ১১ বছর ধরে ঢাকার কমলাপুর কনটেইনার ডিপো ও কেরানীগঞ্জে চট্টগ্রাম বন্দরের পানগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনা করে আসছে।
শুধু মালিকানা নিয়েই ক্ষান্ত হননি তাঁরা, আমাদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। আমরা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে থাকতাম।
বশির আহমেদের বড় ভাইয়ের ছেলে মো. নুরুজ্জামান
আ জ ম নাছিরের ব্যবসায়িক সম্প্রসারণ ও প্রতিবন্ধকতা
দুই দশকেরও বেশি সময় আগে সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির এম এইচ চৌধুরী লিমিটেডের অংশীদার হয়ে বন্দরের ব্যবসায় যুক্ত হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় প্রতিষ্ঠানটি সমঝোতার মাধ্যমে বন্দরে একটি জেটি পরিচালনার দায়িত্ব পায়, যা পরে দরপত্রের মাধ্যমে ১৭ বছর ধরে পরিচালিত হচ্ছে।
২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের বিতর্কিত নির্বাচনের পর, কনটেইনার জেটি পরিচালনায় যুক্ত একটি নতুন প্রতিষ্ঠান মেসার্স বশির আহমেদ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড আ জ ম নাছির উদ্দীনের নিয়ন্ত্রণে আসে।
বশির আহমেদের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন যে, আ জ ম নাছির কৌশলে তাঁর স্ত্রী শিরিন আকতারকে এই প্রতিষ্ঠানের মালিকানা দিয়ে জড়িত করেছেন। বশির আহমেদের বড় ভাইয়ের ছেলে মো. নুরুজ্জামান জানান, "শুধু মালিকানা নিয়েই সন্তুষ্ট হননি, বরং আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানিও করা হয়েছে। আমাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে থাকতে হয়েছে।"
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নাছির আত্মগোপনে চলে গেলে তাঁর ব্যবসার দেখভাল শুরু করেন মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, যিনি মেসার্স বশির আহমেদ লিমিটেডের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বলেন, "জোর করে মালিকানা নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। বিষয়টি আদালতে নিষ্পত্তি হয়েছে।"
নাসিমের ভূমিকা
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এভারেস্ট এন্টারপ্রাইজে মালিকানা পরিবর্তন ঘটে। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি ‘এভারেস্ট পোর্ট সার্ভিসেস লিমিটেড’ নামে নতুন রূপ নেয়। এ সময়ে আ জ ম নাছির উদ্দীন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল কর্মকর্তা আলাউদ্দিন নাসিম এবং তাঁর ভাই জালাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর নাম প্রথমবারের মতো মালিকানা তালিকায় যুক্ত হয়।
সূত্রগুলো জানায়, আলাউদ্দিন নাসিমের চাপে শাহাদাত হোসেন নিজ প্রতিষ্ঠানের মালিকানা ছেড়ে দেন। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে নাছির ও নাসিম শেয়ার ছেড়ে দেন, তবে নাসিমের ভাই জালাল উদ্দিন চৌধুরীর শেয়ারের পরিমাণ বাড়ে এবং তাঁর স্ত্রী ফারজানা ওয়াহিদ খানও মালিকানায় যুক্ত হন।
শাহাদাত হোসেন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি, তবে জানান যে, আর্থিক সংকটে পড়ে তিনি শেয়ার বিক্রি করেছিলেন এবং বর্তমানে পুনরায় শেয়ার ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়াধীন রয়েছেন।
২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জেনারেল কার্গো বার্থের ছয়টি কনটেইনার জেটিতে অপারেটর ও সহ-অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দরপত্র আহ্বান করা হলে সহ-অপারেটররা জেটি পরিচালনার সুযোগ পায়নি। বর্তমানে ছয়টি জেটিতে ছয়টি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে এবং দরপত্রের ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোর দরের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই।
এখন যে সুবিধাভোগী শ্রেণি তৈরি হয়েছে, তারাও যাতে আগের মতো ব্যবসা দখল করতে না পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে
সুজন চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী
বন্দরের জেটি পরিচালনায় রাজনৈতিক প্রভাবের প্রশ্ন
বন্দরের জেটি পরিচালনাকারী বার্থ অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বার্থ অপারেটরস, শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরস ও টার্মিনাল অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলে একরাম চৌধুরী প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, "যোগ্যতা অর্জনের কারণেই প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ পেয়ে এসেছে, রাজনৈতিক কারণে নয়।"
তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এসব দরপত্র কেবল লোকদেখানো। ফলে একই প্রতিষ্ঠান বারবার কাজ পেতে থাকে। দরপত্রের শর্ত এমনভাবে তৈরি করা হয়, যাতে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোই কাজ পায়।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, "বন্দরে কনটেইনার ব্যবস্থাপনার ঠিকাদারি কাজে একটি সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে, যারা বছরজুড়ে কাজ পেয়ে আসছে।" তিনি বলেন, "ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের পতনের ফলে স্বচ্ছতার সুযোগ এসেছে। বন্দরকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে হাজার কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক।"
আখতার কবির আরও বলেন, "এখন যে সুবিধাভোগী শ্রেণি তৈরি হয়েছে, তাদের পূর্বের মতো ব্যবসায় দখল করতে না পারে, সেদিকেও নজর রাখতে হবে।
What's Your Reaction?