হাসিনা নিজ ঘরেই রোপণ করেছেন দুর্নীতির বিষবৃক্ষ
ভারতের গণ-অভ্যুত্থানে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ একে একে প্রকাশ পাচ্ছে। 'জিরো টলারেন্স' নীতির কথা বললেও, দুর্নীতির অভিযোগে শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যরা গভীরভাবে জড়িত ছিলেন, এমন তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ভারতের গণ-অভ্যুত্থানে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ একে একে প্রকাশ পাচ্ছে। 'জিরো টলারেন্স' নীতির কথা বললেও, দুর্নীতির অভিযোগে শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যরা গভীরভাবে জড়িত ছিলেন, এমন তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ ৯টি মেগা প্রকল্পে শেখ হাসিনা পরিবারের বিরুদ্ধে ৮০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া, শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রায় ৩০ কোটি মার্কিন ডলার (প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা) পাচারের অভিযোগও অনুসন্ধান করছে দুদক।
এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে দুদকের বিশেষ দল। রোববার দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন জানান, "এটি অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে। অনেক তথ্য-উপাত্ত আসছে এবং সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পর বিস্তারিত জানানো হবে।"
প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মাধ্যমে অতিরিক্ত খরচ দেখিয়ে ১২.৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করা হয়েছে। এই দুর্নীতি সংঘটিত হয়েছে শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, তার ছোট বোন শেখ রেহানা এবং রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের মধ্যে যোগসাজশে। পাচার করা অর্থ মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে।
এছাড়া, টিউলিপ সিদ্দিকের চাচা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, যিনি শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন, তার স্ত্রী ও মেয়ে 'প্রচ্ছায়া লিমিটেড' নামে একটি ভুয়া কোম্পানির অংশীদার ছিলেন। এই কোম্পানির মাধ্যমে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছে। এ অর্থ দিয়ে যুক্তরাজ্যে 'জুমানা ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড প্রপার্টিজ লিমিটেড' নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আরও জানা গেছে, টিউলিপ সিদ্দিককে যুক্তরাজ্যে রাশিয়া থেকে ৪০০ কোটি পাউন্ড ঘুস গ্রহণের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। এর পাশাপাশি, দুদক মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে সজীব ওয়াজেদ জয়ও অর্থ পাচারে জড়িত। ২০১4 সালে যুক্তরাষ্ট্র বনাম রিজভি আহমেদ মামলায় তার নাম উঠে আসে, এবং এরপর তদন্তে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, হংকং ও কেম্যান আইল্যান্ডসের বিভিন্ন অফশোর অ্যাকাউন্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এই পরিমাণ অর্থ ছিল প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার।
দুদক এরই মধ্যে একটি পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট অনুসন্ধান দল গঠন করেছে, যা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ ৯টি মেগা প্রকল্পের দুর্নীতির তদন্ত করবে। এ দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন। বিশেষভাবে, রূপপুর প্রকল্পে ৫৯ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে তাদের নজর থাকবে।
এছাড়া, দুদক শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ৩০ কোটি মার্কিন ডলার পাচারের অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের (ডিওজে) সিনিয়র অ্যাটর্নি লিন্ডা স্যামুয়েল এবং স্পেশাল এজেন্ট লা প্রেভটও বাংলাদেশের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এই অর্থ পাচারের প্রমাণ পেয়েছেন।
এদিকে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগের অনুসন্ধানে দুদকের কার্যক্রম নিয়ে হাইকোর্টে রুল জারি হয়েছিল। আদালত জানতে চেয়েছিল, কেন দুদকের নিষ্ক্রিয়তা অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। ১৫ ডিসেম্বর দুদক তাদের অনুসন্ধান শুরু করার কথা জানায় এবং এসব অভিযোগের তদন্ত চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়।
এদিকে, রূপপুর প্রকল্পে ৫৯ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি এবং হাসিনা পরিবারের অন্যান্য দুর্নীতির ঘটনায় দুদক অতি শিগগিরই বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করবে বলে জানা গেছে।
What's Your Reaction?