ধানের ভরা মৌসুমে ভারতীয় চালের আমদানি, তবুও কমছে না দাম
বেনাপোলে চালের দাম ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, যদিও নতুন আমন ধান ঘরে উঠেছে এবং ভারতে চালের আমদানি চলছে। এ অবস্থাতেও খুচরা বাজারে চালের দাম কমছে না, যা নিয়ে স্থানীয় ক্রেতাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে।
**বেনাপোলে চালের মূল্য বাড়ছেই, আমদানির পরও কমছে না দাম**
বেনাপোলে চালের দাম ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, যদিও নতুন আমন ধান ঘরে উঠেছে এবং ভারতে চালের আমদানি চলছে। এ অবস্থাতেও খুচরা বাজারে চালের দাম কমছে না, যা নিয়ে স্থানীয় ক্রেতাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে।
অটোরাইস মিল মালিক ও ধান ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এই মৌসুমে ধানের দাম বেশি হওয়ায় চালের দামও কমছে না। তাদের মতে, ভারতীয় চালের দামও অনেক বেশি হওয়ায় আমদানিকৃত চাল কম দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে, সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে বলছেন, সীমান্ত এলাকায় শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে দাম কমছে না। বাজারে নজরদারি না থাকায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে তাদের মত।
যশোরের সীমান্তবর্তী এলাকায় সিংহভাগ ধান উৎপাদিত হয়। চলতি মৌসুমে এই অঞ্চলে প্রায় ২১ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। ইতোমধ্যে ৮০ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে, কিন্তু ধানের বাজার এখনো বেশ চড়া। কৃষকরা ১৩৫০ থেকে ১৪৫০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করছেন। তবে, স্থানীয় অটোরাইস মিল মালিকরা এখনও ধান কিনতে পারেননি এবং অন্য জেলা থেকে ৩২-৩৪ টাকা কেজি দরে ধান কিনছেন। এসব ধান থেকে চাল প্রস্তুত করতে তাদের ৫২ টাকা কেজি দাম পড়ছে।
এদিকে, সরকারের শুল্কমুক্ত আমদানির অনুমতির পর ১৭ নভেম্বর থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু হয়। এক মাসে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ টন ভারতীয় চাল আমদানি করা হয়েছে, যার প্রতি টন দাম ৪১০ মার্কিন ডলার। তবে, বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ শুল্কায়নের মাধ্যমে প্রতি টন চাল ৪৫০ মার্কিন ডলারে শুল্কায়ন করায় চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ, সাতক্ষীরার ভোমরা কাস্টমস হাউজে একই চাল ৪১০ ডলারে শুল্কায়ন হচ্ছে।
এদিকে, দেশের বাজারে ধানের বাম্পার ফলন ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ভারতীয় চাল আমদানি হলেও এর কোনো প্রভাব খুচরা বাজারে পড়ছে না। ভারত থেকে আমদানি করা স্বর্ণা চাল-৫ বর্তমানে ৫৪-৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, আর দেশি মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি দরে। ভরা মৌসুমে চালের দাম না কমায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ ক্রেতারা।
বেনাপোল বাজারে চাল কিনতে আসা মেহের আলী বলেন, "এখন তো ধানের মৌসুম, আবার ভারত থেকে গাড়ি-গাড়ি চালও আসছে, তবুও দাম কেন কমছে না? প্রতিবছর এ সময় চালের দাম কমে যায়, কিন্তু এবার তো উল্টো।"
আরেক ক্রেতা আতাউর রহমান বলেন, "এদেশে তো প্রচুর ধান হয়েছে, তারপরও দাম কমছে না কেন? আমরা গরিব মানুষ, দাম না কমলে কীভাবে চলব? আমার মনে হয়, সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে দাম কমছে না। প্রশাসন যদি বাজারে নজরদারি চালায়, তাহলে দাম কমে যাবে।"
বেনাপোল বাজারের চাল ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন জানান, "এখনো নতুন চাল বাজারে আসেনি, তবে কিছুদিনের মধ্যে আসবে। আমরা ভারত থেকে স্বর্ণা-৫ চাল ৫৪ টাকা কেজি দরে পাইকারি কিনছি, তা ৫৫ টাকা কেজি দরে খুচরা বিক্রি করছি। বর্তমানে বাজারে দেশি মিনিকেট ও সম্পাকাটারি চাল ৭১ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে বেচাবিক্রি কিছুটা কমে গেছে। নতুন চাল আসলে দাম কমে আসবে।"
যশোরের চাল আমদানি ব্যবসায়ী মাহবুব আলম জানান, "চাল আমদানির গতি ধীর। প্রথমে সরকার ১৭ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৩ দিনের জন্য ৩ লাখ ৯২ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছিল। পরে তা ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে, শিগগিরই চালের দাম কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।"
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সভাপতি মহসিন মিলন বলেন, "ভারতের চাল রপ্তানিকারকরা শুল্ক কমানোর জন্য চালের দাম বৃদ্ধি করে দিয়েছে। তবে, এই বন্দর দিয়ে ৪ হাজার ৫০০ টন চাল আমদানি হয়েছে। আগামী দিনে চালের দাম কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।"
বেনাপোল কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার (রাজস্ব) শরীফুল ইসলাম জানান, "শুল্কমুক্তভাবে চাল আমদানি হচ্ছে। এক মাসে ৪ হাজার ৫০০ টন চাল আমদানি হয়েছে এবং আমদানির সময়সীমা ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমরা দ্রুত আমদানি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছি।"
এ অবস্থায়, ভোক্তাদের প্রশ্ন উঠছে, কেন চালের দাম কমছে না, যদিও সরকার ভারত থেকে শুল্কমুক্ত আমদানি অনুমতি দিয়েছে এবং দেশে পর্যাপ্ত ধানও উৎপাদিত হয়েছে।
What's Your Reaction?