নড়াইলের গুলিবিদ্ধ সোহান চিকিৎসার অভাবে কষ্ট পাচ্ছেন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছররা গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছেন নড়াইল সদরের বাঁশগাম ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের সোহান বিশ্বাস (২৮)। তার বাম হাতে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছেন তিনি, রাতে ঘুমাতে পারেন না
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছররা গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছেন নড়াইল সদরের বাঁশগাম ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের সোহান বিশ্বাস (২৮)। তার বাম হাতে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছেন তিনি, রাতে ঘুমাতে পারেন না। গুলিতে হাতের রক্ত চলাচলকারী ধমনী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অস্ত্রোপচার করা হলেও হাতটি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। আর উন্নত চিকিৎসার অভাবে তার বাম হাত ক্রমশ অচল হয়ে যাচ্ছে।
সোহানের সংসারে অভাব ছিল, ফলে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা শেষে তাকে পরিবারের সাহায্য করতে রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করতে হয়েছিল। তার আয়ের একমাত্র উৎস ছিলেন বাবা, যিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী। সংসারের দুরবস্থা সত্ত্বেও সোহান কঠোর পরিশ্রমে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন, কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণের পর গুলিবিদ্ধ হয়ে তার উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের প্রথম ধাপের খসড়া তালিকায় সোহান বিশ্বাসের নাম রয়েছে ৮ হাজার ৩৪২ নম্বরে। ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদের মৃত্যু হওয়ার পর সারাদেশে আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। ৪ আগস্ট, সোহান নড়াইলের মাদ্রাসা বাজার থেকে মিছিলে অংশ নেন। মিছিলটি মাদ্রাসা বাজারের ফিলিং স্টেশনের কাছে পৌঁছালে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতারা ছররা গুলি ছোঁড়ে। সোহানের বুক, বাম হাত, পেট ও পায়ে দুই শতাধিক গুলি লাগে।
আহতের পর তাকে প্রথমে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়, পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং তারপর ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে একাধিক অস্ত্রোপচার করা হলেও, তার বাম হাত এখনও কার্যকর হয়নি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গুলি বের করতে উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন, যা তার পরিবারের পক্ষে খরচ বহন করা সম্ভব নয়।
সোহানের চাচা, নড়াইল সদর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ওয়াহিদুজ্জামান বিশ্বাস জানান, "কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা করা হলেও, উন্নত চিকিৎসার জন্য ১০-১২ লাখ টাকা প্রয়োজন। এখন পর্যন্ত ৩-৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তবে কোনো সহযোগিতা পাইনি। শুধু ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের একটি সংগঠন ১০ হাজার টাকা সহায়তা দিয়েছে। সরকারি সাহায্য ছাড়া উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়, আর তার বাম হাত যদি চিকিৎসা না পায়, তা হলে হয়তো তা চিরকাল অচল হয়ে যাবে।"
সোহান বলেন, "প্রতিদিন আন্দোলন দেখতাম, চোখের সামনে দেখে নিজেকে থামাতে পারলাম না। আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হলাম। এখন এক হাতের অস্ত্রোপচার করেও তা সচল হয়নি। দুর্বিষহ জীবন যাপন করছি। যন্ত্রণায় রাতে ঘুমাতে পারি না। আমি সাহায্য চাই না, উন্নত চিকিৎসা চাই।"
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নড়াইল জেলা সমন্বয়ক রাফায়েতুল হক তমাল জানান, "আমরা জেলার আহতদের তালিকা তৈরি করে কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়েছি। গণ-অভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল ইতোমধ্যে শহিদ ও আহতদের প্রথম ধাপের খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকায় থাকা সবাই পর্যায়ক্রমে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে আর্থিক সহায়তা পাবেন।"
সোহানের মতো আহতদের চিকিৎসার জন্য সরকারের সহায়তা জরুরি, যাতে তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠে জীবনের মূল স্রোতে ফিরে আসতে পারেন।
What's Your Reaction?