১৪ বছরে বিদেশি ঋণ বেড়েছে ২৮২%, মেগা প্রকল্পের জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলার শোধ করতে হবে
‘হার্ড কারেন্সি’ বলতে সাধারণত মার্কিন ডলারকেই বোঝায় বাংলাদেশে। কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে এই মুদ্রাটি সহজে লেনদেনযোগ্য এবং এর মূল্যস্ফীতি তুলনামূলকভাবে কম। তাই, বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ গঠন করে ডলারের ওপর নির্ভর করে। এই রিজার্ভ থেকেই বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা হয়।
‘হার্ড কারেন্সি’ বলতে সাধারণত মার্কিন ডলারকেই বোঝায় বাংলাদেশে। কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে এই মুদ্রাটি সহজে লেনদেনযোগ্য এবং এর মূল্যস্ফীতি তুলনামূলকভাবে কম। তাই, বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ গঠন করে ডলারের ওপর নির্ভর করে। এই রিজার্ভ থেকেই বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা হয়।
রিজার্ভের এই অর্থে ভর করেই পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলি টানেল এবং এক্সপ্রেসওয়ের মতো মেগা প্রকল্পগুলি নির্মিত হয়েছে বিগত সরকারের সময়ে। আলোর মুখ দেখছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং গভীর সমুদ্রবন্দরও। তবে, দেশে রাজনৈতিক পালাবদল এবং মেগা প্রকল্পগুলির ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরুর ফলে বাংলাদেশকে প্রতিমাসে ২৮ কোটি ডলারেরও বেশি খরচ করতে হচ্ছে। এই সময়ে বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি ৯০ শতাংশেরও বেশি কমে গেছে।
বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ডেট রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ১৪ বছরে বিদেশি ঋণ বেড়েছে প্রায় ২৮২ শতাংশ, অর্থাৎ ৭৪ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বেশিরভাগই দীর্ঘমেয়াদি ঋণ। গত বছর, এই ঋণের সুদই ছিল প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার। এছাড়া, মেগা প্রকল্পগুলির বাস্তবায়নে সরকারকে ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণ শোধ করতে হবে।
এছাড়া, স্বল্পমেয়াদি এবং দ্বিপাক্ষিক ঋণের চাপও রয়েছে। আইএমএফের নতুন ঋণের অর্থছাড়ের কারণে এই চাপ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো কিস্তি বাদ পড়েনি, তবুও চাপ সামলাতে কঠিন সময় পার করছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের বেশিরভাগ বিদেশি ঋণের গ্যারান্টি দিয়েছে স্থানীয় ব্যাংক। কোনো কারণে ঋণের কিস্তি পরিশোধে দেরি হলে, দেশের অর্থনীতি চাপে পড়ে যেতে পারে।
এ বিষয়ে ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, ‘‘প্রকল্পগুলো ঠিকঠাক চলছে কিনা এবং তার কারিগরি দিক ও বাস্তবায়ন সক্ষমতা দেখে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ঋণ দেয়। তাদের বিশেষজ্ঞরা এসে কাজ করেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ঋণের বিষয়ে ঋণদাতা সংস্থাগুলোর ব্যবসায়িক আগ্রহ গুরুত্বপূর্ণ থাকে। কিন্তু এখন সেখানে ঘাটতি তৈরি হয়েছে।’’
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘সরকারকে প্রমাণ করতে হবে যে, দেশের সব কিছু ঠিকঠাক চলছে—আমাদের নিয়মকানুন, আদালত, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সব সঠিকভাবে কাজ করছে। কারণ, ঋণদাতা সংস্থাগুলো এসব বিষয় খতিয়ে দেখেই ঋণ প্রদান করে।’’
এছাড়া, জানুয়ারিতে বাজেট সংশোধনের সময়, বর্তমান সরকার স্থানীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া কমানোর পরিকল্পনা করেছে। তবে, এর ফলে ঘাটতি মেটাতে বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
What's Your Reaction?