ভারতের কারাগারে কাটানো ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিলেন সুখরঞ্জন বালি
প্রয়াত জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে নিখোঁজ হন সুখরঞ্জন বালি। পরে তাকে ভারতের একটি কারাগারে পাঁচ বছর কাটাতে হয়। কীভাবে তাকে গুম করে ভারতের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেই ভয়াবহ বর্ণনা দিয়েছেন সুখরঞ্জন নিজে।
প্রয়াত জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে নিখোঁজ হন সুখরঞ্জন বালি। পরে তাকে ভারতের একটি কারাগারে পাঁচ বছর কাটাতে হয়। কীভাবে তাকে গুম করে ভারতের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেই ভয়াবহ বর্ণনা দিয়েছেন সুখরঞ্জন নিজে।
ঘটনাটি ঘটে ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর সকালে। অপহরণের পর তার সাথে কী ঘটেছিল, সে সম্পর্কে বাসসের সাথে এক আলাপে তিনি বিস্তারিত জানান।
সুখরঞ্জন বালি বলেন, "২০১২ সালের ৫ নভেম্বর, আমি ঢাকায় কোর্টে গিয়েছিলাম। আমার সাথে দু'জন ব্যারিস্টার ও দুইজন উকিল ছিলেন। আমাদের গাড়ি কোর্টের গেটে পৌঁছালে গেটের লোকজন আমাদের আটকে ফেলে। তখন আমার সাথে থাকা আইনজীবীদের সাথে তর্ক-বিতর্ক চলছিল। আমি গাড়িতে ব্যারিস্টারদের মাঝে বসা ছিলাম, এমন সময় কিছু সাদা পোশাকধারী লোক আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে টেনে হিঁচড়ে অন্য একটি গাড়িতে তুলে চোখ বেঁধে ফেলে। কিছুক্ষণ পর গাড়িটি ছেড়ে দেওয়া হয়।"
তিনি আরো জানান, "অর্ধঘণ্টা গাড়ি চালানোর পর, আমাকে হাঁটাতে শুরু করে। কিছুদূর হাঁটানোর পর একটি অন্ধকার রুমে ঢুকিয়ে দেয়। সেখানে কোনো আলো ছিল না, অথচ তখন সকাল দশটা-এগারোটা।"
সুখরঞ্জন বালি বলেন, "তিনদিন পর আমাকে একটি অন্য রুমে নিয়ে গিয়ে সাঈদী হুজুরের বিরুদ্ধে স্বীকারোক্তি নিতে চায়। সেখানে ক্যামেরা ছিল এবং আমাকে মারধরসহ শক দেওয়া হয়। একসময় তারা টাকা দিয়ে প্রলোভন দেখানোর চেষ্টা করে, কিন্তু আমি রাজি না হলে তারা অমানবিক নির্যাতন চালাতে থাকে।"
তিনি আরো জানান, "পরবর্তীতে একদিন সকালে আমাকে চোখ বেঁধে গাড়িতে তোলে। গাড়ি চলতে চলতে এক সময় থেমে যায়, এবং আমাকে নামিয়ে দেয়। যখন চোখ খুলে দেখি, আমি বিএসএফ-এর হাতে আটক। আমি তাদের কাছে অনুরোধ করি, আমাকে না দিয়ে দিন। তবে বিএসএফ আমাকে মারধর করে এবং পরে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়।"
সুখরঞ্জন বালি আরও বলেন, "ভারতে দমদম জেলে আমাকে বাইশ দিন রাখা হয় এবং পরে জেলে আমি আমার ভাগ্নেকে দেখতে পাই। সে আমাকে চিনতে না পারলেও, আমি তাকে আমার পরিচয় দিয়ে বলি যে, আমি বেঁচে আছি।"
তিনি বলেন, "২০১৮ সালে মানবাধিকার সংস্থার সহায়তায় সুপ্রিম কোর্টের আদেশে পাঁচ বছর কারাবন্দি থাকার পর আমি মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরে আসি।"
সুখরঞ্জন বলেন, "২০১২ সালের ৫ নভেম্বর সাঈদী হুজুরের মামলায় সাক্ষ্য দেয়ার কারণে আমি অপহৃত হই এবং পরবর্তীতে গুম-সহ নির্যাতনের শিকার হই। এখনো আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হতে পারিনি এবং পরিবারসহ কঠিন অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছি।"
তিনি দাবি করেন, "রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় অপহরণ, গুম এবং পাঁচ বছর কারাবন্দি থাকার ঘটনায় আমি বিচার চাই এবং ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।"
এছাড়া, গুম কমিশনের অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে গুমের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে কমিশন। গুম কমিশন এই প্রতিবেদনটি ২৭ আগস্ট জমা দেয়, যেখানে ১ হাজার ৬৭৬টি অভিযোগ জমা পড়েছে।
সুখরঞ্জন বালি বলেন, "বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বাহিনী তাকে ভারতের বিএসএফ-এর হাতে তুলে দেয়, এবং তিনি তীব্র নির্যাতনের শিকার হন।"
এ প্রসঙ্গে গুম কমিশনের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, "গুম কমিশনের প্রতিবেদন অত্যন্ত ভয়াবহ। এটি এক অভূতপূর্ব নৃশংসতার বর্ণনা দেয়।"
What's Your Reaction?