বড়পুকুরিয়ায় আবারও কয়লা বিক্রির চেষ্টা, বিদ্যুৎ উৎপাদন বিপদময়
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে উত্তোলিত কয়লা খোলাবাজারে বিক্রি করার জন্য আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে পুরোনো একটি চক্র। কয়লা সংরক্ষণে ইয়ার্ডে ঘাটতি এবং উৎপাদন পর্যাপ্ত নয় এমন দাবি তুলে, এই চক্রটি জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে লবিস্ট নিয়োগসহ দৌড়ঝাঁপ করছে।
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে উত্তোলিত কয়লা খোলাবাজারে বিক্রি করার জন্য আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে পুরোনো একটি চক্র। কয়লা সংরক্ষণে ইয়ার্ডে ঘাটতি এবং উৎপাদন পর্যাপ্ত নয় এমন দাবি তুলে, এই চক্রটি জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে লবিস্ট নিয়োগসহ দৌড়ঝাঁপ করছে। খনি ও তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের কিছু অসাধু কর্মকর্তা, বাইরের ক্রেতা-বিক্রেতা এবং স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এই চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে খনির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্রগুলো জানায়, খোলাবাজারে কয়লা বিক্রি করা হলে সরকার কিছু টাকা পেতে পারে, তবে ওই চক্রটি বিশাল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেবে। তবে বড় বিপদে পড়বে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, যা এই কয়লার ওপর নির্ভরশীল। ২০১৮ সালের মতো পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে, যখন বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন কয়েক মাস বন্ধ ছিল।
তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, কয়লা ব্যবহারের ক্ষেত্রে, যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য পূরণে ইউনিটগুলো কার্যকরী করা জরুরি, সেখানে খোলাবাজারে কয়লা বিক্রি করার উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ। কয়লা ব্যবহার করার বদলে কেন খোলাবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, বড়পুকুরিয়া কয়লার মালিক পিডিবি, কিন্তু সুযোগ সন্ধানীরা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে খোলাবাজারে কয়লা বিক্রির সুযোগ খুঁজছে। সোলায়মান সামি, বাস্তবায়ন কমিটির উপদেষ্টা, যুগান্তরকে জানান, তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা ছিল, কিন্তু সেখানে বর্তমানে মাত্র ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তিনি কয়লা সংকটের কথা উল্লেখ করেন, যার জন্য খোলাবাজারে কয়লা বিক্রি করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালে খোলাবাজারে কয়লা বিক্রির কারণে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ ছিল এবং ১৯ জনকে কয়লা চুরির অভিযোগে আসামি করা হয়। ওই সময় এক লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৪ টন কয়লা বিক্রি করে ২৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছিল, যার তদন্ত করেছে দুদক। এর পরই মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেয় যে, বড়পুকুরিয়া খনি থেকে উত্তোলিত কয়লা শুধুমাত্র তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহার করা হবে এবং খোলাবাজারে বিক্রি বন্ধ থাকবে।
খনিসংশ্লিষ্টরা জানান, বড়পুকুরিয়া খনিতে তিনটি কোল ইয়ার্ড রয়েছে, যার ধারণক্ষমতা প্রায় পাঁচ লাখ টন। বর্তমানে কয়লার পরিমাণ প্রায় দুই মাসের জন্য তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে পর্যাপ্ত। কয়লা উত্তোলনে নতুন ফেইজ নির্মাণেও প্রায় দুমাস সময় লাগে।
তারা আরও বলছেন, তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে নতুন দুটি ইউনিট স্থাপন করা প্রয়োজন, যাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং কয়লার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হবে। এ ব্যাপারে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, "চেষ্টা যতই হোক, বড়পুকুরিয়ার কয়লা শুধুমাত্র পাওয়ার প্লান্টে ব্যবহৃত হবে।" এ বিষয়ে কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলামকে যোগাযোগ করা হলেও তিনি মন্তব্য করতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।
What's Your Reaction?