সেতুর অভাবে অর্ধলাখ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে

"একটা ব্রিজের জন্য কষ্ট করতাছি। এই নদীর ওপর একটা ব্রিজ থাকলে আমাদের খুব ভালো হইতো। অনেক কষ্ট কইরা নদী পার হতে হয়। বর্ষায় যখন পানি বেশি থাকে, তখন অনেক রোগী নদী পার হওয়ার আগেই মরে যায়। এই নদীর পাশেই অনেক মানুষ কষ্ট করে থাকতে হয়। অনেকেই সয়াবিন ও মাছ চাষসহ নানা ফসল ফলায়। কতজনই না আসলো, আমাগো ব্রিজ কইরা দেওয়ার কথা বললো, কিন্তু ব্রিজ তো আর হয়নি। আমাগো একটাই দাবি, এই নদীর ওপর ব্রিজ চাই।"

Dec 23, 2024 - 05:05
 0  2
সেতুর অভাবে অর্ধলাখ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দক্ষিন চরবংশী ইউনিয়নের চরকাছিয়া গ্রামের আলতাফ মাষ্টার খেয়াঘাট এলাকা।

"একটা ব্রিজের জন্য কষ্ট করতাছি। এই নদীর ওপর একটা ব্রিজ থাকলে আমাদের খুব ভালো হইতো। অনেক কষ্ট কইরা নদী পার হতে হয়। বর্ষায় যখন পানি বেশি থাকে, তখন অনেক রোগী নদী পার হওয়ার আগেই মরে যায়। এই নদীর পাশেই অনেক মানুষ কষ্ট করে থাকতে হয়। অনেকেই সয়াবিন ও মাছ চাষসহ নানা ফসল ফলায়। কতজনই না আসলো, আমাগো ব্রিজ কইরা দেওয়ার কথা বললো, কিন্তু ব্রিজ তো আর হয়নি। আমাগো একটাই দাবি, এই নদীর ওপর ব্রিজ চাই।"

এভাবেই কথা বলছিলেন লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চরকাছিয়া গ্রামের আলতাফ মাষ্টার। তার মতো আরও অনেক কৃষক ও স্থানীয় বাসিন্দা বর্ণনা করছিলেন তাদের চরম কষ্টের কথা। গত দশ মাস আগে মোল্লারহাট বাজার থেকে পানিরঘাট হয়ে মেঘনার চরাঞ্চলে দুটি কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে বন্যা ও টানা বর্ষণে রাস্তাটি দ্রুত ভেঙে গিয়ে বর্তমানে চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। রাস্তাটি সংস্কার ও একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য স্থানীয়রা প্রশাসনের কাছে বারবার আবেদন জানিয়েছে।

**চরাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতা ও দুর্ভোগ**

রায়পুরের দক্ষিন চরবংশী ইউনিয়নটি দীর্ঘদিন ধরে মেঘনা নদীর দ্বারা বিচ্ছিন্ন। স্বাধীনতার পর থেকে স্থানীয়রা চরকাছিয়া গ্রামের খাল ও নদীর ওপর সেতু নির্মাণের দাবি জানালেও আজও সে দাবি পূর্ণ হয়নি। এই নদী পার হতে গিয়ে অনেক স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন, এবং অসুস্থ হলে সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছানোও সম্ভব হয় না। এমনকি, অনেক সময় নদী পার হওয়ার আগেই বিনা চিকিৎসায় কেউ মারা যায়।

**বিকল্প পথের অভাব**

পরিবহণ সুবিধার অভাবে স্থানীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্যের সঠিক মূল্য পায় না। ধান, সয়াবিন, মাছসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যের উৎপাদন প্রচুর, কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় তা সঠিকভাবে বাজারজাত করা সম্ভব হয় না। এভাবে চরম ভোগান্তি নিয়ে চলছে অর্ধলাখ মানুষের জীবন।

**আলতাফ হোসেন হাওলাদারের উদ্যোগ**

চরবাসীর এই দুর্ভোগের কথা ভেবে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন হাওলাদার হাজিমারা আশ্রয়কেন্দ্রের ভেতর দিয়ে বরিশালের গোবিন্দপুর মেঘনা নদীর খাল পর্যন্ত তিন কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা গ্রামবাসীর সহযোগিতায় নির্মাণ করেন। কিন্তু সেই রাস্তাও বর্তমানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। 

**শিক্ষার্থীদের সমস্যা**

এলাকায় শিক্ষার্থী মিজান হোসেন ও সাহেদ মনি বলেন, "বছরের অধিকাংশ সময় নদীতে অনেক পানি থাকে। অনেক সময় নৌকা দিয়ে নদী পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। শুকনো মৌসুমে নদী পার হওয়ার সময় কাদাপানিতে জামাকাপড় নষ্ট হয়ে যায়।" 

**কৃষকদের কষ্ট**

কৃষক মাহমুদ আলী বলেন, "আমাদের বাপ-দাদার আমল থেকে হাজার হাজার মানুষ কষ্ট করে নদী পার হচ্ছে। বর্ষাকালে নদীতে পানি বেড়ে গেলে দুটি হাট-বাজারে যাওয়া যায় না। এছাড়া পরিবহণ সুবিধা না থাকায় আমাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্যের সঠিক মূল্য পাই না।"

**দক্ষিণ চরবংশী ইউপি সদস্যের দাবি**

দক্ষিণ চরবংশী ইউপি সদস্য দিদার হোসেন মোল্লা বলেন, "এই নদীতে সেতু না থাকায় সারা বছরই আমাদের খুব কষ্ট করতে হয়। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে গেলে আমাদেরকেও এর অংশীদার করতে হবে। তাই সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় দায়িত্বশীলদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।"

**বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও উদ্বিগ্ন**

এলকেএইচ উপকূলীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হারুনুর রশীদ বলেন, "দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়ন থেকে নদী পার হয়ে আমাদের স্কুলে শতাধিক শিক্ষার্থী আসে। স্কুলে আসার সময় অনেক শিক্ষার্থীদের বই-খাতা নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময় নৌকা ডুবে যায়। এছাড়া নদী পার হয়ে স্কুলে না আসার কারণে অনেক শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ছে। তাই দ্রুত ওই স্থানে ব্রিজ তৈরি করার দাবি জানাচ্ছি।"

**চেয়ারম্যানের অনুরোধ**

দক্ষিণ চরবংশী ইউপি চেয়ারম্যান আবু সালেহ মিন্টু ফরায়েজি বলেন, "উত্তর এবং দক্ষিন চরবংশী ইউনিয়ন থেকে বরিশালের মেহেদীগঞ্জ ও গোবিন্দপুর ইউনিয়ন একেবারেই বিচ্ছিন্ন। প্রায় দুই হাজার গ্রামবাসী চরবংশী ইউনিয়নসহ জেলা ও উপজেলা শহরে যাতায়াত করে। সারা বছরই তাদের নৌকায় কষ্ট করে পার হতে হয়। গত ১৫ বছর ব্রিজের দাবি থাকলেও আজও নদীর শাখা খালটির ওপর ব্রিজ নির্মাণ হয়নি। বর্ষায় নদীতে পানি বেশি থাকে, মাঝে মাঝে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। কেউ অসুস্থ হলে সময়মতো চিকিৎসাও করা সম্ভব হয় না। অনেক সময় নদী পার হওয়ার আগেই বিনা চিকিৎসায় মারা যায়।"

**নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের দাবি**

এ অঞ্চলের মানুষদের দীর্ঘদিনের দাবি হচ্ছে—এই নদীর ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হোক। এটি শুধু তাদের যাতায়াতের সুবিধা নিশ্চিত করবে না, বরং পুরো অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যও সহায়ক হবে। স্থানীয় কৃষক, শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষ এখন আশা করছে, প্রশাসন তাদের কষ্ট বুঝবে এবং দ্রুত এই ব্রিজ নির্মাণের জন্য পদক্ষেপ নিবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow