হাসিনাকে ফেরানোর উদ্যোগ, যা বলছে আনন্দবাজারের প্রতিবেদন
গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন এবং এর পরপরই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। সেইসঙ্গে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়ার চেষ্টা চলছে।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন এবং এর পরপরই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। সেইসঙ্গে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়ার চেষ্টা চলছে।
তবে, ভারতীয় কর্মকর্তাদের মতে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ভারত-বিরোধী রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করতে চাচ্ছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এই সমস্ত পদক্ষেপের উদ্দেশ্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশে বার্তা প্রদান করা। ভারত মনে করছে, রেডকর্নার নোটিসের মাধ্যমে ঢাকাকে কিছু বার্তা দেওয়া হলেও, ভারত থরথর করে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। বরং এই সময়টাতে ভারতের সঙ্গে শক্তিশালী ও বাস্তবভিত্তিক সম্পর্ক তৈরি করা বাংলাদেশের জন্য উপকারি হবে, যা দেশের অর্থনীতিকে ধাক্কা সামলাতে সাহায্য করবে। রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সুরাহা সম্ভব নয়।
সূত্র অনুযায়ী, বর্তমান সময়ের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হল বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বকেয়া পরিশোধের সমস্যা। চলতি মাসের প্রথম থেকে আদানি গ্রুপ বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ ৬০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে, কারণ বাংলাদেশ ৮৪.৬ কোটি ডলার বকেয়া পরিশোধ করেনি। ৭ নভেম্বরের মধ্যে এই বকেয়া না মেটালে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তবে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড একটি নতুন লেটার অব ক্রেডিট (১৭.৩ কোটি ডলার) জারি করেছে, ফলে কিছু অংশ পরিশোধ সম্ভব হয়েছে, তবে সমস্যা পুরোপুরি সমাধান হয়নি।
এছাড়া, বাংলাদেশের বড় পুঁজির প্রকল্পগুলোর জন্য ভারতীয় সাহায্য প্রয়োজন, যা দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গত কয়েক বছরে ভারত বাংলাদেশকে প্রায় ৮০০ কোটি ডলার ঋণ এবং বিভিন্ন প্রকল্পে অনুদান দিয়েছে, যার মধ্যে সড়ক, রেল, সেচ, এবং নৌবন্দর উন্নয়ন রয়েছে।
২০২২-২৩ আর্থিক বছরে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য প্রায় ১৬০০ কোটি ডলার হয়েছে এবং শক্তিক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে, বাংলাদেশ ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে এবং ভারতীয় সহায়তায় বাংলাদেশে হাইস্পিড ডিজেল পরিবহণও সফলভাবে চলছে।
তবে, বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রাকৃতিক বিপর্যয়, খাদ্য নিরাপত্তা, এবং শক্তি নিরাপত্তার মতো সমস্যায় জর্জরিত। ভারতের সহায়তা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি, বিশেষত এই মুহূর্তে। শেখ হাসিনার সময় থেকেই বৈদেশিক ঋণ বাড়ছে এবং বর্তমান সরকারকে এসব ঋণের কিস্তি শোধ করতে হচ্ছে। সর্বশেষ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ জাপান, রাশিয়া, চীন এবং ভারত থেকে ঋণ নিয়েছে, যা দেশের আর্থিক পরিস্থিতির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।
ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশের এই সংকটকালে ভারতের সহায়তা নিয়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত, রাজনৈতিক চাপ বাড়ানোর চেয়ে।
What's Your Reaction?