ইরানে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মানবাধিকার কর্মীর আত্মহত্যা
ইরানের এক সুপরিচিত মানবাধিকার কর্মী কিয়ানোশ সানজারি তার আত্মহত্যার মাধ্যমে দেশের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি খামেনির শাসনকে ‘স্বৈরতন্ত্র’ বা ‘ফ্যাসিবাদ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন।
ইরানের মানবাধিকার কর্মী কিয়ানোশ সানজারি আত্মহত্যা করে প্রতিবাদ জানালেন খামেনির শাসনের বিরুদ্ধে
ইরানের এক সুপরিচিত মানবাধিকার কর্মী কিয়ানোশ সানজারি তার আত্মহত্যার মাধ্যমে দেশের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি খামেনির শাসনকে ‘স্বৈরতন্ত্র’ বা ‘ফ্যাসিবাদ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন।
সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে সানজারি জানিয়েছিলেন যে, তিনি বুধবার (১৩ নভেম্বর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে চারজন রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি না দিলে আত্মহত্যা করবেন। তার সহকর্মীরা জানান, নির্ধারিত সময়ের পর তিনি মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি লিখেছিলেন, “আমি আশা করি একদিন ইরানিরা জেগে উঠবে এবং দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে বেরিয়ে আসবে।”
সানজারি ইরানের শাসক মহলের কঠোর সমালোচক ছিলেন এবং গণতন্ত্রের প্রতি প্রবল বিশ্বাসী একজন মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। মৃত্যুর আগে তিনি আরও লিখেছিলেন, "আজ সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে যদি ফাতেমে সেপেহরি, নাসরিন শাকরামী, তোমাজ সালেহি এবং আরশাম রেজায়ীকে মুক্তি না দেয়া হয়, তাহলে আমি খামেনি এবং তার সহযোগীদের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আত্মহত্যা করবো।"
এই চারজনকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে মাশা আমিনির মৃত্যু পরবর্তী বিক্ষোভে সমর্থন জানানো এবং এতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। মাশা আমিনি, ২২ বছর বয়সী এক নারী, যিনি ২০২২ সালে ইরানের নৈতিকতা পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হওয়ার পর মারা যান।
সানজারি ১৯৯৯ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে বারবার গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেছিলেন। ২০০৭ সালে তিনি নরওয়ে চলে যান এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভয়েস অব আমেরিকার পার্সিয়ান বিভাগের সদস্য হন। কিন্তু ২০১৬ সালে তিনি ইরানে ফেরত আসলে গ্রেফতার হন এবং ১১ বছরের জন্য ইভিন কারাগারে বন্দী হন।
মানবাধিকার কর্মী হোসেইন রোনাগি সানজারির মৃত্যু নিয়ে বলেন, “কিয়ানোশ সানজারি শুধু একটি নাম নয়, বরং এটি বছরের পর বছর ধরে চলমান দুর্দশা, প্রতিরোধ ও স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রতীক।”
মাশা আমিনির মৃত্যুর পর প্রতিবাদ
২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর, তেহরানে নৈতিকতা পুলিশ মাশা আমিনিকে গ্রেফতার করে। তার হিজাবের নিচ থেকে কিছু চুল দেখা যাওয়ার অভিযোগে তাকে আটক করা হয়। আটক হওয়ার পরই তিনি অজ্ঞান হয়ে কোমায় চলে যান এবং তিন দিন পর হাসপাতালে মারা যান।
এ বিষয়ে পুলিশ দাবি করেছে যে, তারা তাকে শারীরিকভাবে আঘাত করেনি, তবে গ্রেফতারকারীরা জানায়, পুলিশ আমিনির মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে এবং তার মাথা পুলিশের গাড়িতে ঠুকে দেয়া হয়েছিল।
মাশা আমিনির মৃত্যুর পর ইরানের নারীরা দেশব্যাপী প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে, এবং তাদের প্রতিবাদ স্বরূপ অনেক নারী তাদের হিজাব পুড়িয়ে ফেলেন।
ইরানে ইসলামিক শরিয়া আইন অনুযায়ী নারীদের হিজাব পরা বাধ্যতামূলক। এর পাশাপাশি, নারীদের শরীর পুরোপুরি ঢেকে রাখার জন্য দীর্ঘ এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরার বিধান রয়েছে।
What's Your Reaction?