ব্ল্যাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, ধরাছোঁয়ার বাইরে চক্র

বিসিএস-২৫ ব্যাচের কর্মকর্তা মাহমুদা রহমান (ছদ্মনাম) সম্প্রতি একটি চক্রের ফাঁদে পড়েছেন। তিনি বর্তমানে একটি মন্ত্রণালয়ে কর্মরত। একদিন তার মোবাইলে একটি নম্বর থেকে ফোন আসে, যেখানে তাকে প্রশ্ন করা হয়, তিনি করোনার চতুর্থ ডোজ নিয়েছেন কিনা।

Jan 4, 2025 - 06:14
 0  2
ব্ল্যাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, ধরাছোঁয়ার বাইরে চক্র

বিসিএস-২৫ ব্যাচের কর্মকর্তা মাহমুদা রহমান (ছদ্মনাম) সম্প্রতি একটি চক্রের ফাঁদে পড়েছেন। তিনি বর্তমানে একটি মন্ত্রণালয়ে কর্মরত। একদিন তার মোবাইলে একটি নম্বর থেকে ফোন আসে, যেখানে তাকে প্রশ্ন করা হয়, তিনি করোনার চতুর্থ ডোজ নিয়েছেন কিনা। তিনি জানান যে তিনি ডোজটি নেননি। এরপর ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে তাকে সুবিধাজনক সময়ে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তিনি রাজি হলে, তাকে একটি ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) পাঠানো হয়। কিন্তু, যখন তিনি সেই ওটিপি জানিয়ে দেন, তখন তিনি বুঝতে পারেন যে তার মেসেজিং অ্যাপ, যেমন হোয়াটসঅ্যাপ এবং ম্যাসেঞ্জারের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে। একই ব্যাচের আরেক কর্মকর্তা সাইবার অপরাধীর ফাঁদে পড়ে গেছেন।

সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা সাইবার অপরাধী চক্রের লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠছেন। এমনকি সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরাও এই চক্রের শিকার হচ্ছেন। এক মাসের মধ্যে অন্তত ছয়জন কর্মকর্তাকে এই ধরনের ফাঁদে ফেলা হয়েছে। তারা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টারে (সিপিসি) অভিযোগ করেছেন। অপরাধীরা কৌশলে ওটিপির মাধ্যমে মেসেজিং অ্যাপ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। তাদের ব্যক্তিগত ছবি বা আলাপচারিতা ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে। যদিও ভুক্তভোগীরা সাইবার পুলিশের কাছে সহায়তা চেয়েছেন, কিন্তু আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। পুলিশ মনে করছে, সচেতনতা বৃদ্ধিই একমাত্র উপায়।

এ ধরনের অপরাধীরা ক্রেডিট কার্ড আপগ্রেডেশন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আপগ্রেডেশন, হজ নিবন্ধন বা অন্যান্য বর্তমান বিষয় নিয়ে কথা বলে ওটিপি চেয়ে থাকে। তারপর হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক এবং ম্যাসেঞ্জার হ্যাক করে এবং ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও নিয়ে ব্ল্যাকমেইল শুরু করে। কখনো কখনো তারা ভুক্তভোগীর আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকেও টাকা আদায় করে। 

ছয়জন ভুক্তভোগী কর্মকর্তার মধ্যে দুজন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যদিও তাদের হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফেসবুক আইডি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, তবে অপরাধীদের শনাক্ত বা গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অপরাধীরা প্রতিটি ধাপে অত্যন্ত কৌশলী হয়ে থাকে এবং অবৈধ সিম কার্ড ব্যবহার করে এবং মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা অবৈধভাবে নেয়। মনে করা হচ্ছে, ফরিদপুরের ভাঙ্গার মতো এলাকায় বসবাসকারী অপরাধীরা সরকারী কর্মকর্তাদের টার্গেট করেছে।

সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের বিশেষ পুলিশ সুপার এসএম আশরাফুল আলম বলেছেন, "এই ধরনের অভিযোগ আসলে আমরা অপরাধী শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করি। তবে সচেতনতা সবচেয়ে বড় বিষয়। আমাদের পরামর্শ, কখনোই হুট করে কোনো অজ্ঞাত ব্যক্তির সঙ্গে ওটিপি শেয়ার করবেন না, ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করবেন না, অপরিচিত ব্যক্তির ভিডিও কল গ্রহণ করবেন না, এবং কোনো অপরিচিত লিংক খুলবেন না।" তিনি আরও বলেন, "যদি কেউ ব্ল্যাকমেইলের শিকার হন, তাহলে কখনো টাকা দিয়ে তাদের হাত থেকে মুক্তি পাবেন না। মনোবল শক্ত রাখুন, পরিবারকে জানান, এবং পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান।"

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow